Bangla
2 days ago

ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের কুরবানির মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব নিয়ম অনুসরণ করতে হয়

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

Published :

Updated :

৭ জুন দেশব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। এই ঈদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্তে পশু কুরবানি করা।
 
কুরবানির পশু হিসেবে বাংলাদেশে গরুর কদর সবচেয়ে বেশি থাকলেও অনেকে মহিষ, ছাগল, কিংবা উটও কুরবানি দিয়ে থাকেন।
 
এসময় প্রায় সকল বাড়িতেই মাংসের হরেক রকম রেসিপি দেখা যায়। কুরবানির মাংসের এক-তৃতীয়াংশ গরিব-দুঃখীদের দেওয়ার বিধান থাকাতে এসময় গরিবের পাতেও মাংস জুটে।
 
অনেকে এসময় অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার কারণে বদহজম কিংবা ডায়রিয়ার মতো সমস্যায় ভুগে থাকেন। তবে যাদের ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে কুরবানির মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হয়। তা না হলে বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে শরীর জানিয়ে দিবে সে আর ভালো নেই।
 
ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা কুরবানির মাংস খেতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করলে পড়তে হবে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায়।
 
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপের ফলে স্ট্রোক কিংবা হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি হয়। তবে পরিমিত মাত্রায় কুরবানির মাংস খেলে ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপের রোগীরাও সুস্থ থাকতে পারবেন।
 
মাথায় রাখতে হবে শুধু গরুর মাংসই নয়, বরং মহিষ, ছাগল কিংবা অন্যান্য পশুর মাংসতেও কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের অবশ্যই কুরবানির মাংস পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে। কারণ রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে এসব রোগীদের বিপত্তি পোহাতে হয়।
 
এছাড়া চর্বিযুক্ত মাংস যতটুকু সম্ভব পরিহার করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য। কারণ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে চর্বিযুক্ত খাবার শরীরের জন্য প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠতে পারে। প্রয়োজনে এসব রোগীদের জন্য আলাদাভাবে মাংস রান্না করা যেতে পারে যেখানে লবণের পরিমাণ কম থাকবে এবং মাংসের সাথে কিছু সবজি যুক্ত করা হবে।
 
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করতে হয়। কুরবানির পশু বিশেষ করে গরুর মাংসে ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। 
 
সাধারণ দিনে ৬০-৯০ গ্রাম চর্বিমুক্ত গরুর মাংস গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস রোগীদের তেমন কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা যায় না। তবে সেটি সপ্তাহে ২-৩ দিন গ্রহণ করা যেতে পারে। আর উৎসবের দিনগুলোতে যদি এর থেকে বেশি মাত্রায় গ্রহণ করা হয়, তাহলে অন্যান্য খাবারের সাথে এটি সমন্বয় করতে হবে। যেমন- সেক্ষেত্রে মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণ কমাতে হবে এবং শারীরিক ব্যায়াম কিংবা হাঁটার পরিমাণ বাড়াতে হবে যাতে অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ হয়ে যায়।
 
এছাড়া ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উত্তম। এক্ষেত্রে গ্রিল করে মাংস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে। পাশাপাশি মাংসের সাথে সালাদ কিংবা শাক-সবজি গ্রহণ করা হলে তা রক্তে সুগারের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
 
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কুরবানির সময়টিতে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। এতে করে ডায়াবেটিস বেড়ে যাচ্ছে কিনা তা সহজেই বোঝা যাবে এবং তার উপর ভিত্তি করে মাংস খাওয়ার পরিমাণ বাড়ানো কিংবা কমানো যেতে পারে।
 
যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তারাও কুরবানির সময়টিতে নিয়মিত ব্লাড প্রেশার মাপতে পারেন। এর উপর ভিত্তি করেও আপনি বুঝতে পারবেন কতটুকু পরিমাণ মাংস আপনি খেতে পারবেন।
 
সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা একদিনে ৫০-৭৫ গ্রাম পর্যন্ত গরুর মাংস খেতে পারেন। তবে প্রতিদিন না খেয়ে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২-৩ দিন গরুর মাংস খাওয়া যেতে পারে।
 
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে কুরবানির সময়টিতে বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে। কারণ এতে করে শরীরে সোডিয়ামের ভারসাম্য বজায় থাকবে। তবে যে কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিলে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ- উভয় প্রকার রোগীদেরই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
 

Share this news