Bangla
2 days ago

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পে ফের বিলম্ব

Published :

Updated :

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় কাজ শুরু হওয়া এখনও অনিশ্চিত।

সূত্র জানায়, ২০২৩ সাল থেকে একটি কারিগরি প্রকল্পের অধীনে নতুনভাবে সমীক্ষা চললেও, বিস্তারিত নকশা ও ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রস্তুত না হওয়ায় প্রকল্পটি শুরু হতে আরও এক বছর সময় লাগবে। প্রকল্পটির কারিগরি মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়তে পারে।

বিশ্লেষক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা জানান, ২০১৬ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হওয়ার পর থেকে নয় বছর পার হয়ে গেলেও এক্সপ্রেসওয়ে হিসেবে উন্নীত করার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

২০১৮ সালে ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই করিডোরকে এক্সপ্রেসওয়েতে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাজনৈতিক কারণে সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারেনি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ব্যয়বহুল উচ্চগতির ট্রেন প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেয়, যার ফলে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটি পিছিয়ে পড়ে, যদিও যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য এর ছিল ব্যাপক চাহিদা।

তবে সরকার উচ্চগতির ট্রেন প্রকল্প নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ায় ২০২২ সালে আরএইচডি আবার এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি সক্রিয় করে এবং নতুন করে সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করে। উচ্চগতির ট্রেন প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ছিল ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্ড লাইন নির্মাণ এবং এক-তৃতীয়াংশ খরচে ইলেকট্রিক ট্রেন চালুর পক্ষে মত দেয়।

আরএইচডি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের বিস্তারিত নকশা ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা করেছিল। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩২ বিলিয়ন টাকা, তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এটি চূড়ান্ত নয়।

আন্তর্বর্তীকালীন সমীক্ষায় করিডোরটিকে প্রতিটি পাশে তিনটি লেনসহ ছয় লেনের নিয়ন্ত্রিত মহাসড়ক এবং দুই পাশে দুটি করে সার্ভিস রোড নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কাজ শুরুর লক্ষ্য ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বর।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মদনপুর-কাঁচপুর, পদুয়া বাজার এবং ফেনীতে ছয় লেন বিশিষ্ট উঁচু সড়ক নির্মাণ করা হবে, যাতে যান চলাচল নির্বিঘ্ন হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-চট্টগ্রাম করিডোরের যান চলাচলের সুবিধার্থে কাঁচপুর সেতুর পর অর্থনৈতিক করিডোরে উঁচু সেতু নির্মাণের একটি সমীক্ষাও করেছে আরএইচডির সেতু শাখা।

প্রসঙ্গত, প্রথম চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে এবং শেষ হয় ২০১৬ সালে। প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে ১৬ বিলিয়ন টাকা থেকে ৩৮ বিলিয়ন টাকায় দাঁড়ায়। যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশার অভাবে দীর্ঘ নির্মাণকালে ভোগান্তিতে পড়েছিল মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা।

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ইতোমধ্যে যানজট বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের মধ্যে যানবাহনের সংখ্যা ৩১ শতাংশ বেড়েছে। আরএইচডির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দৈনিক গড় যান চলাচল ছিল ৩৫,৪৮২টি, যা ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েছে ৪৬,৫০১-এ।

যানবাহনের চাপে এবং ওভারলোডেড পরিবহনের কারণে মহাসড়কের ক্ষয়ক্ষতি সামলাতে না পারায় আরএইচডি বর্তমানে ১০ বিলিয়ন টাকার একটি রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যা নিয়মিত বরাদ্দে সম্ভব হয়নি।

অন্তর্বর্তী সরকার উচ্চ ব্যয়সম্পন্ন প্রকল্প অনুমোদনে সতর্ক থাকায় চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে প্রকল্পটির আরও সময় লাগবে, যা সম্ভবত নতুন রাজনৈতিক সরকার গঠনের পর হবে।

উল্লেখ্য, কাঁচপুর সেতুর শেষ প্রান্ত থেকে চট্টগ্রাম গেট পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ২২৯ কিলোমিটার।

Share this news