এআই দিয়ে তৈরি ছবি যেভাবে চিনবেন

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের ফলে মানুষের সামনে হাজির হচ্ছে একের পর এক নতুন চমক। বিজ্ঞানের তেমনই একটি চমক হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের মাধ্যমে একদিকে যেমন আপনি সহজেই আপনার কাজগুলো করতে পারবেন, অন্যদিকে সময়ও সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি এর সাহায্যে  আপনি রং-তুলি ছাড়াই ছবি আঁকতে পারবেন ল্যাপটপ কিংবা মোবাইলের স্ক্রিনে যা দেখতে অনেকটা ক্যামেরায় তোলা ছবির মতোই। তবে কয়েকটি উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে কোনো ছবি এআই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কিনা তা সহজেই বের করা সম্ভব। এবার জেনে আসা যাক সেসব উপায়গুলো সম্পর্কে।

অতিরঞ্জিত ছবি

এআই দিয়ে তৈরি ছবিগুলো চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো সেখানে অতিরিক্ত কালার এনিমেশন ব্যবহার করা হয়। ক্যামেরায় তোলা ছবিতে কোনো কিছুর চিত্র যেভাবে ফুটে ওঠে, এআই এর ছবিতে সেই জিনিসটি অতিরিক্ত রঙ দিয়ে আচ্ছাদিত থাকে। এছাড়া ছবির চারপাশে অতিরিক্ত রঙ এনিমেশনের মাধ্যমেও সহজে এআই ছবিকে ক্যামেরায় তোলা ছবি থেকে আলাদা করা যায়।

অধিক মসৃণ

যদি কোনো ছবি দেখে মনে হয় সেখানে উক্ত ব্যক্তির মুখমন্ডল, কান, নাক ইত্যাদি অধিক মাত্রায় মসৃণ, সেক্ষেত্রে ছবিটিতে এআইয়ের প্রয়োগ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মানুষের চেহারার একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ক্যামেরায় ধরা পড়ে। কিন্তু এআই এর ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির মুখমন্ডল বাস্তবের চেয়ে অনেক মসৃণ দেখাবে। আবার চারপাশের পরিবেশকেও বাস্তবের চেয়ে আরও বেশি আকর্ষণীয়ভাবে ফুটিয়ে তুলতে দেখা যায় সেখানে যা আপনাকে ধারণা দিতে পারে ছবিটির উৎস সম্পর্কে।

মেটাডাটা পরীক্ষা

কোনো ব্যক্তি যখন ক্যামেরায় ছবি তুলে তখন বেশ কিছু তথ্য ঐ ছবির সাথে সংযুক্ত থাকে। যেমন- ছবিটি কোন ডিভাইস থেকে তোলা হয়েছে, কখন তোলা হয়েছে, ক্যামেরার মডেল, লেন্সের ধরন, এক্সপোজার সেটিংস, এবং জিপিএস স্থানাঙ্কসহ ইত্যাদি তথ্য সংরক্ষণ করা থাকে। এসব তথ্য ছবির সঙ্গেই সংরক্ষিত থাকে।

কিন্তু এআই দিয়ে তৈরি ছবির ক্ষেত্রে এসব তথ্যগুলো পাওয়া যায় না। তবে সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করলে কিছু তথ্য নেওয়া সম্ভব। যেমন- ছবিটি কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করে বানানো হয়েছে, কোন কোন টুলস সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে, আগে কোথাও এই ছবিটি আপলোড হয়েছিল কিনা ইত্যাদি যা উক্ত ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি কিনা সেই সম্পর্কে আপনাকে ধারণা দিতে পারে।

রিভার্স ইমেজ সার্চ

কোনো ছবি তৈরিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হয়েছে কিনা সেটি যাচাইয়ের আরেকটি কার্যকরী উপায় হলো রিভার্স ইমেজ সার্চ করা। এর মাধ্যমে উক্ত ছবিটি অপরিবর্তিত অবস্থায় কিংবা ছবির কিছুটা অংশ কেটে ব্যবহারকারী গুগলে সার্চ করতে পারেন।

আর তখন ঐ ছবিটির উৎস, এটি এর আগে কোন কোন জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে, এমনকি উক্ত ছবির সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য ছবিগুলোর তথ্যও পাওয়া যাবে। পাশাপাশি উক্ত ছবিটি তৈরিতে যদি কোনো এআই সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়, তাহলে তার লিংকও পাওয়া যাবে এ পদ্ধতিতে।

অবাস্তব পরিবেশের চিত্রায়ণ

মানুষ হিসেবে আমরা আমাদের চারপাশের অবস্থান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকি। কোন পরিবেশে কি ঘটতে পারে সেটি সম্পর্কে সবারই ধারণা থাকে। আর এই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে সহজেই কোনো একটি ছবির উৎস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

যেমন- সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভয়াবহ বন্যার সময় এআই দিয়ে তৈরি অনেক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

লক্ষ করলে দেখা যাবে এসব ছবিগুলো শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য অতিরিক্ত গ্রাফিক্স এবং কৃত্রিম পরিবেশ যোগ করে তৈরি করা হয়েছে। যেমন- একটি ছবিতে দেখা যায় একটি ২/৩ বছরের বাচ্চা রাস্তায় বন্যার পানিতে গলা সমান ডুবে একা দাঁড়িয়ে আছে। অথচ শিশুটির তাকানো এবং অবস্থানগত দিক বিবেচনা করলে মনে হবে রীতিমতো সময় নিয়ে এবং পরিকল্পনা করে ছবিটি তোলা হয়েছে যা উক্ত পরিস্থিতিতে অনেকটাই অসম্ভব।

আবার কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে দেখা যায় উক্ত সময়ের কথা মাথায় রেখে কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করে ছবি বানানো হয় যা দেখে দর্শক নিজেরাই প্রশ্ন করে উক্ত পরিস্থিতিতে কি এই ধরনের পরিবেশে ছবি তোলা আসলেই সম্ভব? আর এই ধরনের সূক্ষ্ম বিচারশক্তি এইআই দ্বারা তৈরি ছবি শনাক্তকরণে সাহায্য করে।

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তি খাতে বিপ্লব ঘটেছে যা আগামীতে আরো সম্প্রসারিত হবে। এআই প্রযুক্তির মতো অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার একদিকে যেমন আমাদের জীবনে নানা রকম ইতিবাচক ভূমিকা রাখে, ঠিক তেমনি এসব প্রযুক্তি ব্যবহারে গ্রাহকের অজ্ঞতা প্রায়ই ডেকে নিয়ে আসে সামাজিক অবক্ষয়। তাই প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি সঠিক প্রযুক্তিজ্ঞান অর্জন করাটা অত্যন্ত জরুরি যাতে করে তথ্য বিভ্রাটের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোকে সহজেই এড়ানো যায়।

tanjimhasan001@gmail.com