Bangla
10 months ago

একটি দেশের জাতীয় ফুল, ফল,পাখি ইত্যাদি কীভাবে নির্ধারিত হয়?

Representational image
Representational image

Published :

Updated :

প্রত্যেকটি দেশেরই থাকে জাতীয় ফুল, ফল, পাখি, কিংবা অন্য কোনো জাতীয় বস্তু। এর ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশও। জাতীয় ফুল, ফল, পাখি ও পশু হিসেবে যথাক্রমে শাপলা, কাঁঠাল, দোয়েল ও রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার জায়গা করে নিয়েছে।

তবে একবার ভাবুন তো কীভাবে নির্ধারণ করা হয় একটি দেশের জাতীয় ফুল, ফল, পাখি কিংবা এ সংক্রান্ত অন্য কোনো বস্তু? এর উত্তর পেতে হলে যেতে হবে একটু গভীরে। জানতে হবে সেই দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে।

জাতীয় ফুল নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রথমেই দেখা হয় ঐ ফুলটির জন্মস্থান কোথায়। যদি উক্ত দেশে কিংবা এর আশেপাশে এর জন্মস্থান হয়ে থাকে তাহলে জাতীয় ফুলের মর্যাদা পাওয়ার কাজটি একধাপ এগিয়ে যায়। তবে এখানেই শেষ নয়। পুরো দেশে থাকতে হবে এর ব্যাপ্তি। পাশাপাশি অন্য কোনো দেশে উক্ত ফুলটি জাতীয় ফুল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে কিনা সেটিও বিবেচনায় রাখা হয় এই ধাপে। যদি অন্য কোনো দেশের জাতীয় ফুল হিসেবে স্বীকৃতি না পায়, তবে উক্ত দেশের জাতীয় ফুল হিসেবে স্বীকৃতির দৌঁড়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে যায় ফুলটি।

তবে ব্যতিক্রমও দেখা যায় যার মধ্যে অন্যতম আমাদের জাতীয় পশু রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার যা একই সাথে ভারতেরও জাতীয় পশু।

শাপলা যেহেতু বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায় এবং এটি একটি দেশীয় ফুল, তাই নীতি নির্ধারকরা শাপলাকে জাতীয় ফুল হিসেবে স্বীকৃতি দিতে একমত হয়। পাশাপাশি প্রচুর জলাশয় থাকায় এ দেশে শাপলা ফুলের আধিক্য দেখা যায়।

এবার আসা যাক জাতীয় ফলের প্রসঙ্গে। শাপলার মতো কাঁঠালও বাংলাদেশের দেশীয় উদ্ভিদগুলোর মধ্যে একটি এবং এটিও দেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। পাশাপাশি এ ফলের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিচর্যার দরকার হয় না। তাই শহর, গ্রাম কিংবা পাহাড়ি অঞ্চলেও এ ফলগাছ জন্মে এবং স্বচ্ছন্দ্যে বেড়ে ওঠে।

পাশাপাশি পুষ্টিগুণ বিবেচনায়ও কাঁঠাল অনন্য। এ ফল একদিকে যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, অন্যদিকে শরীরে শক্তি সঞ্চয়েও এ ফল অনন্য। তাছাড়া কাঁঠালের বহুবিধ ব্যবহারও এ ফলটিকে সবার কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন আম অত্যন্ত সুস্বাদু দেশীয় ফল হওয়া সত্ত্বেও আমকে জাতীয় ফল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি কেন? সোজা কথায় এর উত্তর হলো যেহেতু ভারতে জাতীয় ফল হিসেবে আম আগেই স্বীকৃতি পেয়েছিল, তাই বাংলাদেশে আমকে জাতীয় ফল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তবে জাতীয় ফল হিসেবে বাংলাদেশে আম স্বীকৃতি না পেলেও, বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে আমগাছ ঠিকই জায়গা করে নিয়েছে।

এবার আসা যাক দোয়েল কীভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পাখি হলো সে প্রসঙ্গে। জাতীয় পাখি হিসেবে স্বীকৃতির ক্ষেত্রে যে বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয় সেটি হলো ঐ পাখিটি উক্ত দেশের সর্বত্র পাওয়া যায় কিনা। দোয়েল যেহেতু বাংলাদেশের সর্বত্রই দেখা যায় এবং দেশের যেকোনো পরিবেশের সাথে এটি সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে, তাই জাতীয় পাখি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার এ ধাপটি বেশ সাফল্যের সাথে অতিক্রম করে দোয়েল।

পাশাপাশি সুন্দর রূপ, সুরেলা কণ্ঠ এবং শান্ত স্বভাবের জন্য দোয়েল বেশ প্রসিদ্ধ যা একে জাতীয় পাখি হিসেবে স্বীকৃতি পেতে সাহায্য করেছিল। তবে শোনা যায় জাতীয় পাখি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার দৌঁড়ে বক, শালিকসহ আরো কিছু পাখি ছিল। তবে দোয়েল অন্য পাখিগুলোর চেয়ে বেশি সহজলভ্য বিধায় দোয়েলের মাথাতেই ওঠে বিজয়ের মুকুট।

জাতীয় মাছ ইলিশ হওয়ার পেছনেও রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। ইলিশ সামুদ্রিক মাছ হলেও এটি ডিম পাড়ার সময় নদীতে ফিরে আসে এবং সেখানেই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতে ইলিশ পাওয়া গেলেও স্বাদ এবং মানের দিক থেকে বাংলাদেশের ইলিশই সর্বোৎকৃষ্ট। এছাড়া বাংলাদেশ উপকূলে ধরা পড়ে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ মাছ যা দেশের সর্বত্র সরবরাহ করা হয়। আর এসব কারণে ইলিশ মাছ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

এছাড়া জাতীয় মসজিদ হিসেবে বায়তুল মোকাররম, জাতীয় মন্দির হিসেবে ঢাকেশ্বরী মন্দির স্বীকৃতি পেয়েছে। আর এসব স্বীকৃতি পাওয়ার পেছনেও এগুলোর ইতিহাস, এবং ঐতিহ্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল।

tanjimhasan001@gmail.com`

Share this news