Bangla
a month ago

একটি স্বাস্থ্যকর সকালের হোক শুরু 

Published :

Updated :

‘আমি হবো সকালবেলার পাখি’ ছোটবেলায় এই কবিতাটা সবাই পড়েছে, আজকের আধুনিক কর্মব্যস্ত যুগ আর অন্তর্জালের ইন্দ্রজালের মায়া পড়ে অধিকাংশই হয়ে উঠছে রাত জাগা পেঁচা। সকালটা আজকাল কমই উপভোগ করা হয়। ঘুম থেকেই উঠেই ভোঁ দৌড়। দিনের শুরুটা কীভাবে হচ্ছে তা কিন্তু ছাপ রেখে যাচ্ছে সারাদিনের উপর। তাই প্রতিটা সকাল হোক স্বাস্থ্যকর। সেজন্য জীবনঘড়ির কাটাটা একটু পেছনে ঘুরিয়ে আনতে হবে রোজনামচায় কিছু ছোট্ট পরিবর্তন, তবেই মন আর স্বাস্থ্য দুটোই থাকবে ফুরফুরে।

নির্দিষ্ট সময় ঘুম থেকে ওঠা 

সকালে ওঠার পূর্বশর্ত হচ্ছে পর্যাপ্ত ঘুম হওয়া। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরের চাহিদা অনুযায়ী ৬-৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিছানায় যেতে হবে এবং উঠে পড়তে হবে রোজ এক সময়ে। 

কোনো হুটোপুটি নয়, যেন সকালের যাবতীয় সব রুটিনমাফিক কাজ সেরে কর্মক্ষেত্র বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবার জন্য তৈরি হতে যথেষ্ট সময় হাতে থাকে। প্রয়োজন অনুযায়ী সময়টা ঠিক করে ফেলতে হবে। সেই জন্যে এলার্ম ঘড়ি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে টেপা যাবে না স্নুজের বোতাম। স্নুজ স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্যে ভীষন বেরাম। স্নুজের সময় সজাগ হয়ে আবার যেই ঘুমে প্রবেশ করা হয় তা শরীরটাকে আরো ক্লান্ত করে দেয়। 

মস্তিষ্ক নিজের কাজে একটু পিছিয়ে পড়ে। তাই স্নুজের সময়টা সম্পূর্ণ ঘুমের রুটিনের সাথে যোগ করে এলার্ম দিতে হবে এবং বাজার সাথেই উঠে পড়তে হবে, তাহলে শরীর সম্পূর্ণ বিশ্রাম পাবে আর ঘুম পূর্ণ হলে শরীরটাও সতেজ লাগবে। 

বিছানা থেকে রয়ে সয়ে ওঠা

অনেকের বদভ্যাস বিছানা থেকে ধুপ করে উঠে পড়া। এটা করা যাবে না। একটু আড়মোড়া ভাঙ্গুন। আস্তে আস্তে উঠে বসতে হবে। সম্ভব হয়ে শোয়া অবস্থায় হাত পা দু পাশে নাড়িয়ে  বিছানা থেকে উঠে যেতে হবে, এতে করে সারা শরীরের রক্ত সঞ্চালন জাগরণের সাথে স্বাভাবিকতা ফিরে পাবে। 

ঘুম থেকেই উঠেই স্ক্রিন নয়

ঘুম থেকেই উঠেই চোখের সামনে ডিভাইস তুলে ধরা ঠিক নয়। এতে চোখ এবং মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়। আপনার গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ অবশ্যই চেক করবেন তবে সাথে সাথেই নয়, কমপক্ষে আধঘন্টা বিরতি নিয়ে। এটির একটি ভালো দিক হলো চোখ খুলতেই অন্তত দিনটি কোনো অস্থিরতা দিয়ে শুরু হবে না। 

পানি পান

ঘুম থেকে উঠে কুলি না করেই পান করতে হবে পুরো এক গ্লাস পানি। এটি খুবই উপকারী। বদহজমের সমস্যা মিটে যাবে। বিরতির পর এটি হজম শক্তিকে পুনরায় সচল করে। তাছাড়া ত্বকের জন্যে বেশ ভালো।

একটু পায়চারি

ঘুম থেকে উঠে করা যেতে পারে মৃদু পায়চারি। সম্ভব হলে ঘরের বাইরে পার্ক বা খুব গাছপালা আছে এমন জায়গা থেকেই হেঁটে আসা যেতে পারে ত্রিশ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা। এতে সূর্যের স্বাস্থ্যকর আলো গায়ে লাগবে যা প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি এর চাহিদা মিটিয়ে শরীরের দুর্বলতা কাটিয়ে দিবে। আর প্রানভরে শ্বাস নেয়া হবে মুক্ত অক্সিজেনে। স্বাস্থ্যের জন্য সকালের হাঁটার অভ্যেস খুব উপকারী।

শুভ চিন্তা

এটা মন ও আমাদের আচরণকে খুব বড় রকমভাবে প্রভাবিত করবে। নিজেকে অন্তত কিছু প্রণোদনা দেয়ার মতোন কথা বলা যেতে পারে। ‘আমি আত্মবিশ্বাসী, আমি কাজটি পারবো’- এই রকম। 

নিজের কোনো বদভ্যাস থাকলে নিজেকে বলা আমি কাজটি থেকে বিরত থাকবো। কারো উপকার না হলেও যেন ক্ষতি না হয়। সকালে উঠে কিছু শুভ চিন্তা করলে সারাদিনের কাজে তার ইতিবাচক ছাপ পড়বে। মন সেইভাবে চিন্তা করতে শিখে যাবে।

যোগব্যায়াম

সকালের শান্ত পরিবেশে যোগব্যায়ামের কোনো তুলনা হয় না। শারীরিক ভারসাম্য ঠিক থাকে, পেশী শক্তিশালী হয়। সারা শরীরটা একটা নির্দিষ্ট শৃঙ্খলায় নড়ে চড়ে ওঠে, ফলে হজমশক্তি উন্নত হয় এবং ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে। 

সকাল শুরুর ভালো ব্যায়াম হতে পারে সূর্য নমস্কার, এটি স্নায়ুতন্ত্রকে সর্বতভাবে উদ্দীপিত করে। পেটের বায়ুর প্রকোপ থাকলে করা যেতে পারে পবনমুক্তাসন, সটান শুরু হাঁটু গুলো পেটের উপর ভাঁজ করে চাপ দিয়ে আবার ছেড়ে দেয়া। ফুসফুসের যত্ন নিতে আছে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম কপালভাতি। এছাড়া নিজ আত্মার সাথে সংযোগ স্থাপন করে আপন দেহের শক্তি অনুভব করতে চলতে পারে প্রাণায়াম।

ধ্যান

একটি সুন্দর সকালের সবচেয়ে ভালো অনুকল্প হলো মেডিটেশন বা ধ্যান। এটি নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যে বা বস্তুতে মনকে নিবদ্ধ রাখতে উদ্যম জোগাবে। ফলে মানসিক দৃঢ়তা ও শক্তি বৃদ্ধি পায়। মন ও শরীরের সংযোগ উন্নত হয়। দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগের সমস্যা কমে যাবে। 

রোজ সকালে ধ্যান করার জন্যে ১০মিনিট রাখা যেতে পারে। আলো বাতাস ভালো আসে দেখে এমন একটি শান্ত পরিবেশে চোখ বন্ধ করে সুখাসনে বসে যা ভাবতে ভালো লাগছে তা মনে মনে ওই সময়টা নিশ্চুপ হয়ে একমনে চিন্তা করা। এতে করে সারাদিনের মেজাজ ফুরফুরে থাকবে। 

একটুখানি শারীরিক কসরত

সকালের ব্যায়াম রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ভোরবেলার শরীরচর্চা ডায়বেটিসের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া সারাদিনের কাজ করার শক্তি পাওয়া যায়। যেকোনো কাজে চট করে ফোকাস চলে আসে।

গোসল

সকাল বেলাতেই একবার গোসল সেরে নেয়া খুব ভালো অভ্যেস। ঘুমঘুম বা ক্লান্তি একবারে কেটে যাবে। শরীর হবে পুরো দস্তুর চাঙ্গা। মন ফুরফুরে থাকবে। কাজে বেরোনোর আগে সারা শরীরটা শীতলতার পরশ পেয়ে যাবে। 

চায়ে চুমুক

নাস্তা টেবিলে মনকে নিমেষেই চনমনে করতে চায়ের জুড়ি নেই। তৎক্ষণাৎ বিষাদ কাটিয়ে ফেলে। কাজে উদ্যম আনে। স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে চায়ে দুধ আর চিনিকে ছুটি দিয়ে পেয়ালা ভরা যেতে পারে মধু দেয়া সবুজ চায়ে। 

স্বাস্থ্যকর জলখাবার 

সকালের জলখাবার হতে হবে এমন যাতে সারাদিনের শক্তির রসদ যোগায়। এতে প্রোটিন আর কার্বোহাইড্রেটের সুষম মেল হওয়া চাই। তবে জলখাবার হতে হবে হালকা এতে জল ও ফাইবারের ভাগ থাকবে। 

ডিম পাউরুটির সাথে রাখা যেতে পারে ফল কিংবা ফলের রস। নাস্তা নিজে হাতে তৈরি করতে পারলে সেটি খুব ভালো হয়। তবে খেতেও হবে মন দিয়ে। ফোন ঘাটতে ঘাটতে নয়।

টু ডু লিস্ট দেখে নেয়া 

বের হবার কী কী করতে হবে আরেকবার মনে করে নেয়া ভালো। এতে সারাদিনের  সব কাজ ঠিকঠাক সময় মিটে গেলে, মানসিক চাপ মুক্ত থাকা যাবে। 

[email protected]

Share this news