Bangla
a year ago

ঘুরে আসুন মোঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী 'বজরা শাহী মসজিদ'

Published :

Updated :

১৬৬৬ সালে ষষ্ঠ মোঘল সম্রাট আওরেঙ্গজেবের শাসনামলে বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খান আরাকান দস্যু ও পর্তুগিজদের দমন করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মোগল শাসনের ভীত গড়ে তোলেন। ফলে তৎকালীন ভুলুয়া (বর্তমান নোয়াখালী) অঞ্চলে স্থায়ীভাবে মুসলিম শাসন শুরু হয়। 

সে সময়ে এই অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের প্রচার বাড়তে থাকে। সে সুবাদে মসজিদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। সে মসজিদগুলোর একটি ‘বজরা শাহী মসজিদ’। 

নোয়াখালীতে যে ক’টি ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ‘বজরা শাহী মসজিদ’। দ্বাদশ মুঘল সম্রাট মুহাম্মদ শাহ’র শাসনামলে ১৭৪১-৪২ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। 

তৎকালীন বজরার জমিদার আমান উল্লাহ মসজিদটি নির্মাণ করেন। দিল্লির শাহী জামে মসজিদের নকশার অনুকরণে বানানোর চেষ্টা করা হয় মসজিদটি। এ কারণেই মসজিদটির নাম শাহী মসজিদ। 

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আমান উল্লাহ’র উত্তরসূরি বজরার দুই জমিদার খান বাহাদুর আলী আহমদ ও খান বাহাদুর মুজির উদ্দীন মসজিদটি সংস্কার করেন। তারাই মসজিদটিকে মোজাইক পাথরে মুড়ে দেন।  

নোয়াখালী জেলার একটি উপজেলা সোনাইমুড়ি। সোনাইমুড়ি উপজেলার বজরা ইউনিয়নে মসজিদটির অবস্থান। কথিত আছে ইরানের এক সুফি সাধক বজরা (এক ধরনের নৌকা) দিয়ে এসে এই অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতেন। সে সূত্রে এই অঞ্চলের নাম হয়ে যায় ‘বজরা’। 

নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে মসজিদটির অবস্থান। আমান উল্লাহ মসজিদটি নির্মাণের পূর্বে বজরায় ৩০ একর জায়গা জুড়ে একটি দীঘি খনন করেন। দীঘির পশ্চিম পাশে উঁচু ভিটির ওপর মসজিদটির অবস্থান। 

মসজিদটির চারপাশ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। মসজিদ প্রাঙ্গনে প্রবেশের জন্য পূর্বদিকে একটিমাত্র পথ রয়েছে। মূল মসজিদের মতই প্রবেশ-পথটি মোজাইক পাথর দিয়ে নির্মিত। মসজিদটির রয়েছে তিনটি দৃষ্টিনন্দন গম্বুজ। 

আয়তাকার আকৃতির মসজিদটি উত্তর দক্ষিণে লম্বা। প্রায় ১১৭ বর্গ মিটার আয়তনের মূল মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১৬ মিটার ও প্রস্থ ৭.৩২ মিটার। মূল মসজিদের পূর্বে ৩টি, উত্তরে ও দক্ষিণে ১টি করে মোট ৫টি দরজা রয়েছে। 

মসজিদের পূর্বদিকের মাঝের দরজায় একটি ফারসি ফলকে এর নির্মাণকাল ও নির্মাতার নাম লেখা রয়েছে। মসজিদের ভেতরের পশ্চিম দেয়ালে ৩টি মেহরাব রয়েছে। অবতল আকৃতির মেহরাবগুলো কারুকার্যময়। 

মসজিদের চার কোণে ৪টি সুন্দর মিনার আছে। মসজিদের চার পাশে ছোট ছোট সুসজ্জিত সরু মিনার রয়েছে যা এর সৌন্দর্যকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে।

সম্রাট মোহাম্মদ শাহ’র অনুরোধে মক্কার বাসিন্দা মাওলানা শাহ আবু বকর সিদ্দীকি মসজিদটির প্রথম খতিব হিসেবে দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে তার বংশধররা এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে সপ্তম প্রজন্মের ইমাম হাসান সিদ্দীকি এই দায়িত্ব পালন করছেন। 

মসজিদটিতে প্রায় সারা বছরই দর্শনার্থীরা ভীড় করে। তবে শবে বরাত, শবে কদরের মতো বিশেষ দিনগুলোয় জনসমাগম বেশি হয়। প্রচলিত আছে, এই মসজিদে মানত করলে আশা পূরণ হয়। মানতের উদ্দেশ্যেও অনেক দর্শনার্থী আসে এখানে। 

ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা যেমন মসজিদের স্থাপত্যশৈলীতে মুগ্ধ হন, তেমনি তারা মনে করেন মসজিদটির সংস্কারও প্রয়োজন। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম রিমন মসজিদটি ঘুরে এসে বলেন,

”মসজিদটির নকশা এবং স্থাপত্যেশৈলী আমাকে অনেক মুগ্ধ করেছে৷ এখনকার সময়ে এসেও অন্য আধুনিক মসজিদের সাথে তুলনা করলে এটা অনেক এগিয়ে থাকবে। এই মসজিদের কিছু সংস্কার করলে আরো শত বছর মোগল আমলের ঐতিহ্যে ধরে রাখবে বলে আমি মনে করি।“

যেভাবে যাবেন বজরা শাহী মসজিদে

মাইজদী (নোয়াখালী জেলা শহর) থেকে সিএনজি চালিত অটো-রিক্সায় যাওয়া যায়। এছাড়াও সোনাপুর (নোয়াখালী স্টেশন) বা মাইজদী কোর্ট স্টেশন থেকে ঢাকাগামী উপকূল এক্সপ্রেসে বজরা যাওয়া যাবে। 

উল্লেখ্য, উপকূল এক্সপ্রেস সকাল ৬ টায় সোনাপুর থেকে ছেড়ে আনুমানিক ৬:৩০ টায় বজরা স্টেশনে পৌঁছায়। সড়কপথে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় ট্রেনে যাওয়া বেশি সুবিধাজনক। 

mizanur2351@gmail.com

Share this news