হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেন লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক পান্না

Published :
Updated :

সন্ত্রাসী বিরোধী আইনে গ্রেপ্তার মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এবং সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের পৃথক আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার রুলসহ এ আদেশ দেন বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও ফজলুর রহমান। তাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এম আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া।
মঞ্জুরুল আলমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন ও রমজান আলী শিকদার। তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রিয়া আহসান চৌধুরী।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, “আদালত বীর মুক্তিযোদ্ধা লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নার জামিন মঞ্জুর করেছেন। তবে লিখিত আদেশ রোববার দেবেন।”
সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, “সামনে আছে জোর লড়াই। মুক্তিযুদ্ধ বনাম মুক্তিযুদ্ধবিরোধী। সে লড়াইয়ে আমরা জিতবো, তাতে কোনো সন্দেহ নাই। কারণ যে বয়সে আমরা দেশটাকে স্বাধীন করেছি, এই দেশতো আমাদের।
“এই দেশে থেকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, ৭২ এর সংবিধানের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে দেব না।”
আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ভাই কাদের সিদ্দিকী বলেন, “বিচার বিভাগের প্রতি দেশের মানুষের ও আমাদের আস্থা আছে। আমার ভাই লতিফ সিদ্দিকীর জামিন তার প্রমাণ। আমি বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই।”
গেল ২৮ অগাস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান নিয়ে এক আলোচনা সভায় ‘মব’ হামলার শিকার লতিফ সিদ্দিকী, সাংবাদিক পান্নাসহ ১৬ জনকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
পরের দিন শাহবাগ থানায় তাদের নামেই উল্টো মামলা করা হয়, যেখানে ‘দেশকে অস্থিতিশীল এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ এনেছে পুলিশ।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, “মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি বন্ধের লক্ষ্যে গত ৫ অগাস্ট ‘মঞ্চ ৭১’ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ সংগঠনের উদ্দেশ্য জাতির অর্জনকে মুছে ফেলার সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আত্মত্যাগের প্রস্তুতি নেওয়া। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ২৮ অগাস্ট সকাল ১০টায় একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
“সেগুনবাগিচায় বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর মধ্যেই এক দল ব্যক্তি হট্টগোল করে স্লোগান দিয়ে সভাস্থলে ঢুকে পড়েন। একপর্যায়ে তারা অনুষ্ঠানস্থলের দরজা বন্ধ করে দেন। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কয়েকজনকে লাঞ্ছিত করেন। হট্টগোলকারীরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন এবং আলোচনায় অংশ নেওয়াদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।
“একপর্যায়ে অতিথিদের অনেককেই বের করে দেওয়া হলেও আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবং অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরে পুলিশ এসে ১৬ জনকে আটক করে। এ ঘটনায় শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা করেন এসআই আমিরুল ইসলাম। পরবর্তীতে এ মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।”
তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ আমলে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হওয়া লতিফ সিদ্দিকী ছাড়া বাকি ১৫ জন হলেন- মো.আব্দুল্লাহ আল আমিন (৭৩), শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন (৫৫), মঞ্জুরুল আলম (৪৯), কাজী এ টি এম আনিসুর রহমান বুলবুল (৭২), গোলাম মোস্তফা (৮১), মো. মহিউল ইসলাম ওরফে বাবু (৬৪), মো. জাকির হোসেন (৭৪), মো. তৌছিফুল বারী খান (৭২), মো. আমির হোসেন সুমন (৩৭), মো. আল আমিন (৪০), মো. নাজমুল আহসান (৩৫), সৈয়দ শাহেদ হাসান (৩৬), মো. শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার (৬৪), দেওয়ান মোহম্মদ আলী (৫০), মো. আব্দুল্লাহীল কাইয়ুম (৬১)।
এই মামলায় পরে সাবেক সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম ও আবু আলম শহীদ খানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

For all latest news, follow The Financial Express Google News channel.