Bangla
2 years ago

হজযাত্রার বিমান ভাড়া যথাসাধ্য কমই ধরা হয়েছে, আর কমানো সম্ভব নয়: বিমান এমডি

Published :

Updated :

হজযাত্রার বিমান ভাড়া যথাসাধ্য কমই ধরা হয়েছে উল্লেখ করে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম জানিয়েছেন, ভাড়া এর চেয়ে কমানো সম্ভবপর না।

রবিবার বিমানের সদর দপ্তর বলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, “২০২২ সালে হজ ফ্লাইটের বেইজ ফেয়ার (ভিত্তিভাড়া) ছিল ১৫০৮ ডলার; এই বছর সেটি করা হয়েছে ১৭৩৫ ডলার। রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম, ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে। সৌদি আরবে বিমানবন্দরের ট্যাক্স বেড়েছে।”

“এমনিতেই সারা পৃথিবীতে এভিয়েশন কস্ট অলমোস্ট ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে।”

এবারের হজ ফ্লাইট শুরু হবে ২১ মে থেকে, আর ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ২ অগাস্ট। হজে যেতে ১৫৯টি ও ফিরতি ১৫২টি ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

হাজীদের ইমিগ্রেশন আশকোনা হজক্যাম্পে সম্পন্ন হবে। বোয়িং ৭৭৭ ও ড্রিমলাইনারের মতো অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ দিয়ে হজ ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিমান এমডি শফিউল। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা, আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। টাকার এ অঙ্ক গতবারের চেয়ে দেড় থেকে দুই লাখ বেশি।

শফিউল আজিম বলেন, “বেইজ ফেয়ার কিন্তু বেশি বাড়েনি। ডলারটাকে যখন টাকায় কনভার্ট করবেন, তখন বাড়তি মনে হচ্ছে। এবারের হজ প্যাকেজের বিমান ভাড়া ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা (ট্যাক্সসহ)। আমরা তিন মাস ধরে এটা নিয়ে কাজ করছি।”

“আমাদের প্রাথমিক ভাড়ার প্রস্তাব ছিল দুই লাখ ১০ হাজার ৩৩৮ টাকা। সেটিকে আমরা বারবার বৈঠক করে এক লাখ ৯৭ হাজার টাকায় নিয়ে এসছি। এখানে মূল ভাড়া (ট্যাক্স বাদে) হল এক লাখ ৮২ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে ১৯ শতাংশ, ডলারের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ আর এয়ারপোর্টের বিভিন্ন চার্জ বেড়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। আমরা যেটি দিয়েছি সেটিই সর্বনিম্ন (ভাড়া)। এরপরে আর কমানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।”

সৌদি আরবে হজ ফ্লাইট চালাতে অনেক শর্ত মানতে হয় উল্লেখ করে বিমানের এমডি বলেন, “আমাদের সবচেয়ে ভাল এয়ারক্রাফটগুলো হজ ফ্লাইট চালাচ্ছি, এগুলো সব ইকোনমি ক্লাস। এ সময় আমরা অন্যান্য রুট অপারেশন বন্ধ রাখি।

“এই ফ্লাইটগুলোকে হজযাত্রীদের নামিয়ে দিয়েই সৌদি থেকে খালি আসতে হয়। যাত্রী তোলার সুযোগ নেই। সেখানে গ্রাউন্ডটাইম খুবই কম। একটু এদিক-সেদিক হলেই জরিমানা হয়ে যায়। সেখানে সিভিল এভিয়েশন ট্যাক্স বেড়েছে।”

শফিউল আজিম বলেন, “হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে যে চুক্তিটা হয় সেখানে যে বিষয়গুলো বলা হচ্ছে- প্রথমত হল হজ ফ্লাইট হতে হবে ডেডিকেটেড, ফ্লাইটে হজ যাত্রীদের সঙ্গে অন্য যাত্রীদের মেশানো যাবে না, ফিরতি যাত্রী নেওয়া যাবে না, ৩০ শতাংশ ফ্লাইট মদীনা থেকে চালাতে হবে এবং তাদের (সৌদি কর্তৃপক্ষের) খরচের বিষয়ে কথা বলার কোন সুযোগ থাকবে না। এখানে আমাদের নিজের মতো করার কিছু নেই। আমরা কম্পিটিটিভ প্রাইসে যাচ্ছি।”

হজযাত্রার ভাড়া ‘সর্বনিম্নই’ নির্ধারণ করা হয়েছে দাবি করে বিমান এমডি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি, যাতে হাজি সাহেবরা সর্বনিম্ন ভাড়ায় যেতে পারেন। কিন্তু আমাদের বিষয়টা দেখেন। আমাদের ফ্লাইটগুলো কিন্তু আসার সময় কিন্তু খালি আসছে। আমার এখানে যাতায়াত মিলিয়ে কিন্তু চারবার ফ্লাই করতে হচ্ছে।

“প্রতি সেকেন্ড যে জেটফুয়েল বার্ন হচ্ছে, এটা কিন্তু ডলারে দিতে হচ্ছে। এই যে আমরা ভাড়ার টাকা নিচ্ছি- এটা ফুয়েলে যাচ্ছে, এয়ারপোর্ট ট্যাক্সে যাচ্ছে। আপনি যদি আমার প্রতি সদয় না হন, তাহলে বিমান কীভাবে কাজ করবে?”

শফিউল বলেন, “জাতীয় বিমান সংস্থা হিসেবে কোনো অযৌক্তিক, অনুমাননির্ভর, অর্ধসত্য বলার সুযোগ নেই আমাদের। সারা পৃথিবীতে যেভাবে করা হয়, সেভাবেই বৈজ্ঞানিক উপায়ে প্রতিটি পাই পয়সার হিসাব করে আমাদের ভাড়া নির্ধারণ করতে হয়। আমি নির্দ্বিধায় বলছি- এটি আমাদের সর্বশেষ, যতটুকু পারি কমিয়ে আমরা সেখানেই এসেছি।”

“আমার যে ট্যাক্স বেড়েছে, আমি কাউকে বলছি না যে ট্যাক্স কমান। ওই এন্ডে (সৌদি আরবে) খরচ বেড়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি, ডলারের উচ্চমূল্য, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ট্যাক্স বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে ফ্লাইটের ভাড়ায়।”

বিমানের এমডি জানান, সরকারের হজ প্যাকেজ ঘোষণা সংক্রান্ত জাতীয় নির্বাহী কমিটি যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেখানে ১৬টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে। সেই প্যাকেজে বিমান ভাড়ার বিষয়টি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অঙ্ক। হজের বাড়ি ভাড়া, গাড়ি ভাড়া, মোয়াল্লেম খরচ সবকিছুই কিন্তু বেড়েছে।

প্রতিবেশী দেশগুলোর হজ ফ্লাইটের সঙ্গে তুলনা করে ফেইসবুকে নানা রকম আলোচনা চলছে জানিয়ে বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম বলেন, “কোথাও এসেছে আমাদের পাশের দেশে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। আমাদের পাশের দুই দেশ এখনও হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেনি।”

আগের বছরগুলোর ব্যয়ের প্রসঙ্গ ধরে তিনি দাবি করেন, “ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে হজ প্যাকেজের বিমানভাড়া বাংলাদেশেই সবচেয়ে কম।”

হজ যাত্রার ধাক্কা সামলাতে বিমান ৭ ক্যাটাগরিতে জনবল নিয়োগ করছে জানিয়ে এমডি শফিউল বলেন, “আমরা নতুন ইঞ্জিনিয়ার নিয়েছি, ১০০ কেবিন ক্রু নিয়োগ চুড়ান্ত হয়েছে, চারজন বিদেশি পাইলট দলে যুক্ত হয়েছেন।”

Share this news