Bangla
3 months ago

ইন্টারনেট সেবা বন্ধে ই-কমার্স খাতে লোকসান ৬০ কোটি টাকা

Published :

Updated :

সারাদেশে গত ১৯ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত টানা পাঁচ দিন ধরে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় ই-কমার্স বাণিজ্যে অন্তত ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর্থিক ক্ষতির কথার পাশাপাশি উদ্যোক্তারা জানান, কারফিউ বা সান্ধ্য আইন জারির ফলে পণ্য ট্র্যাকিং থেকে শুরু করে পণ্যের ডেলিভারি সবকিছুতেই তারা ভোগান্তির মুখে পড়েছেন।

তাদের মতে, এমন পরিস্থিতি সেইসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ করেছে যারা নিজেদের পণ্যের অর্ডার কেবল ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে নিয়ে থাকেন। এসব উদ্যোক্তাদের অফলাইনে অর্ডার নেওয়ার সুযোগ থাকে না।

ই-কুরিয়ার লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিপ্লব ঘোষ রাহুল বলেন,"অনলাইন ব্যবসার উপর নির্ভরশীল ২-৩ লাখ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।"

কোটাবিরোধী আন্দোলনেকারীরা মহাখালীর একটি ডেটা সেন্টারে আক্রমণ চালিয়েছে এবং সেটার ক্ষতি সাধন করেছে - এমন তথ্য প্রকাশের পর ১৮ জুলাই রাত থেকে সারাদেশে ইন্টারনেট  সেবা বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় দেশের সকল ই-কমার্সএবং ফেসবুক-ভিত্তিক এফ-কমার্স সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে।  

চব্বিশ জুলাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পুনরায় চালু হলেও মোবাইল ইন্টারনেট সেবা এখনো বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা স্বল্প গতির ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছেন।

প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ যা ধারণা করা হয়েছিল ই-কমার্স নেতারা বলছেন ক্ষতির পরিমাণ তারচেয়েও অনেক বেশি। তাদের মতে, মোট ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ২শ কোটিতে।

জনাব রাহুল বলছিলেন, তারা আসলে পচনশীল দ্রব্য নিয়ে বেশি চিন্তিত কারণ সেগুলো বেশিদিন সংরক্ষণ করা সম্ভব না।

তিনি আরও জানান, যেসব তরুণ ডেলিভারি-কর্মী পণ্যের ডেলিভারির ভিত্তিতে পারিশ্রমিক পান তারাও মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

ই-কুরিয়ার লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, তাদের ৮০ শতাংশ ডেলিভারি-কর্মী চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। তাদেরকে প্রতিটি ডেলিভারি হিসাবে করে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।

অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যমে পণ্য বিক্রেতা দেশের অন্যতম বৃহৎ রিটেল চেইনশপ 'স্বপ্ন’র হোল্ডিং কম্পানি এসিআই লজিস্টিক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির জানান, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় তারা ফোনকলের মাধ্যমে পণ্যের অর্ডার নিচ্ছেন।

তিনি জানান, দেশব্যাপী কারফিউ'র কারণে স্বপ্নের ৪৮৩টির মধ্যে ১৭৫টি আউটলেট বন্ধ আছে। তিনি বলেন," আমাদের বিক্রি প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছে, যা এ পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি করেছে।"

জনাব নাসির বলেন, স্বপ্নের পচনশীল পণ্য সংগ্রহ করা হয় সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে, কিন্তু সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হওয়ায় অনলাইন গ্রোসারি শপগুলো পণ্য সংগ্রহ করতে পারছে না। এ বিষয়ে স্বপ্নের মতো 'চালডাল'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়া আশরাফও তার উৎকণ্ঠার কথা জানান।

জনাব আশরাফ জানান, ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসাগুলো পণ্যের ট্র্যাকিং থেকে শুরু করে ডেলিভারি সব ক্ষেত্রেই ভোগান্তিতে পড়েছে। তিনি যোগ করেন,"নেটওয়ার্ক বিঘ্নিত হওয়ায় আমাদের দৈনিক ৮০ লাখ টাকার বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে।"

তিনি বলেন, চালডাল’র ডেলিভারি চ্যানেলে ৬ শর বেশি লোক কাজ করেন যাদের বেশিরভাগই বেতনভুক্ত কর্মচারী।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম শোভন বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ফ্রিল্যান্সাররাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে দ্রুত পরিস্থিতির সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ই-ক্যাবের তথ্য অনুসারে, প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার লোক সরাসরি ই-কমার্স ব্যবসায়ে জড়িত, যাদের পাশাপাশি ২ লাখ গৃহিণী এই মাধ্যমে খণ্ডকালীন কাজ করেন। ই-কমার্স ব্যবসার ভোক্তাদের প্রায় ২৩ শতাংশ গ্রামীণ এলাকায় বাস করেন, বাকিরা থাকেন শহরে।

কোভিড-১৯ মহামারীর আগে এক বাস্কেট ভ্যালু অর্থাৎ এক অর্ডারে বিক্রি হওয়া মোট পণ্যের দাম ছিল ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকা, যা মহামারী চলাকালে ২ হাজার ২শ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। তবে মহামারী-পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালে এই মূল্য ১ হাজার ৪৫০ টাকায় নেমে আসে বলে জানা যায় ই-ক্যাব থেকে।

[email protected]

 

 

 

Share this news