Published :
Updated :
গ্রীষ্মে তীব্র গরমের সাথে বেড়ে চলেছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এয়ারকন্ডিশন বা এসির ব্যবহার। তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতেই এসির দিকে ঝুঁকছেন অনেকে। তবে এসি ব্যবহারের সাথে সাথে বিদ্যুৎ বিলের চিন্তাও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিলের হিসেব মেলাতে হিমশিম খেয়ে যায় সাধারণ মানুষ। এর মাঝে এসি কিনতে গিয়ে অনেকেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন কোনটি হবে সাশ্রয়ী, আবার যত্ন-আত্তিতেও কম ঝক্কি যার।
ইনভার্টার ও নন-ইনভার্টার - এই দুই ধরনের এসির কাজের প্রক্রিয়া ভিন্ন। যেকোনো একটি পছন্দ করে নিতে চাইলে শুরুতেই জেনে নিতে হবে এই দুই প্রকারের এসি কীভাবে কাজ করে।
এসির কাজ হল রুমের মধ্যে থাকা বাতাস টেনে নেওয়া। তারপর বাষ্পীভবন যন্ত্রের সাহায্যে সেই বাতাস কে ঠান্ডা করে পুনরায় রুমে পাঠানো। এই কাজটি করে কম্প্রেসর যন্ত্র। কম্প্রেসর বাতাসকে সংকুচিত করে ঠান্ডা করে, এসি বা ফ্রিজের কুলিং সিস্টেমকে কার্যকর রাখে।
একটি নন-ইনভার্টার এসিতে এই কম্প্রেসর একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুইচ অন-অফ হয়। এসি একবার পূর্ণ শক্তিতে চালু হয়ে ঘরের তাপমাত্রা কাঙ্ক্ষিত তাপমাত্রায় আসলে কম্প্রেসর বন্ধ হয়ে যায়। আবার ঘরের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে গেলে কম্প্রেসর পুনরায় চালু হয়। এভাবেই কম্প্রসর বার বার চালু হয়ে এবং বন্ধ হয়ে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
ইনভার্টার এসির ক্ষেত্রে এভাবে বার বার কম্প্রেসর অন-অফ হয় না। শুরুতেই এসির কম্প্রেসর পূর্ণ শক্তিতে চালু হয়। তারপর কম্প্রেসর কাজের গতি প্রয়োজনীয়ভাবে বাড়িয়ে বা কমিয়ে ঘরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। একবার এসি চালু করার পর এখানে বারবার কম্প্রেসর অন-অফ হয় না। কম্প্রেসর পুরোটা সময় চালু হয়েই থাকে। শুধু এর কাজের গতির কিছু সময় পর পর প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তন হয়। এভাবেই ঘরে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায়ে থাকে।
ইনভার্টার ও নন-ইনভার্টার এসির কাজের প্রক্রিয়ায় পার্থক্য থাকায় বিদুৎ বিল সহ আরও কিছু বিষয়ে পার্থক্য হয়ে থাকে। ইনভার্টার এসির ক্ষেত্রে কম্প্রেসর বার বার চালু হয় না, তাই ইনভার্টার এসিতে বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলক কম হয়। নন-ইনভার্টার এসির ক্ষেত্রে বার বার এসি চালু ও বন্ধ হওয়ায় বিদ্যুৎ খরচ অনেকটাই বেড়ে যায়।
বিদ্যুৎ খরচের পার্থক্যের পাশাপাশি ইনভার্টার এসি নন-ইনভার্টার এসির তুলনায় বেশি পরিবেশ বান্ধবও।
নন-ইনভার্টার এসির কম্প্রেসর বার বার অন অফ হওয়ায় এটি ইনভার্টার এসির তুলনায় বেশী শব্দ করে। প্রতিবার কম্প্রেসর চালু হওয়ার সময় বেশ শব্দ করে চালু হয়। ইনভার্টার এসির ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা যায় না।
ইনভার্টার এসি সাধারণত দ্রুত সময়ে ঘর ঠান্ডা করতে পারে। এটি শুরুতেই বেশি শক্তি ব্যবহার করে চালু হয়। এবং পরে কম্প্রেসর পুরোপুরি বন্ধ না হয়ে শুধু মোটর এর কাজের গতির পরিবর্তন হয়। শুরুতেই অধিক শক্তিতে কম্প্রেসর চালু হয়ে দ্রুত ঘরকে ঠান্ডা করে। নন-ইনভার্টার এসির ক্ষেত্রে ঘর ঠান্ডা হতে ইনভার্টার এসির থেকে বেশি সময় লাগে।
ইনভার্টার এসির যেহেতু কম্প্রেসর বন্ধ হয় না। সেন্সরের সাহায্যে তাপমাত্রা পরিমাপ করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, তাই ঘর সমান ভাবে পুরোটা সময়ের জন্য নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় থাকে। নন-ইনভার্টার এসির ক্ষেত্রে কম্প্রেসর চালু হয়ে ঘর ঠান্ডা হওয়ার পর কম্প্রেসর বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ঘরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে আবার কম্প্রেসর চালু হয়। যার দরুন ঘরে একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রা পুরো সময় ধরে থাকে না, বারবার পরিবর্তন হয়।
ইনভার্টার এসির বিদ্যুৎ খরচ কম হলেও এটি রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করতে তুলনামূলকভাবে বেশি খরচ হয়।
ইনভার্টার এসি চলার সময় শব্দ হয় খুব কম বা একবারেই নিঃশব্দে চলে।
তবে দামের দিক থেকে নন-ইনভার্টার এসি এগিয়ে থাকবে। ইনভার্টার এসির দাম নন-ইনভার্টার এসির তুলনায় অনেকটাই বেশি।
এই দুই প্রকারের এসির মাঝে বাছাই করে সঠিক এসি কিনতে হলে অপরের সুবিধা অসুবিধাগুলো বিবেচনা করার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত। যেমন প্রতিদিন এসি কতো সময়ের জন্য ব্যবহার হবে। দিনে ৩ থেকে ৪ ঘন্টার বেশী সময় এসি চলানো হলে ইনভার্টার এসি ব্যবহার করাই যুক্তিযুক্ত হবে। এটি বিদ্যুৎ শক্তির যথাযথ ব্যবহার করে এবং বিদ্যুৎ খরচ সাশ্রয় করে। এসি কিনতে এককালীন বেশি খরচ হলেও ইনভার্টার এসি ব্যবহারে বিদ্যুৎ খরচ কম হবে।