Published :
Updated :
ফ্ল্যাট ও ভবনে বিনিয়োগ করে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ বাতিল করেছে সরকার।
আজ রবিবার (২২ জুন) আগামী অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজধানীর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়, যেখানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রাথমিকভাবে ২ জুন ঘোষিত বাজেটে অ্যাপার্টমেন্ট বা ভবন কেনার মাধ্যমে নির্ধারিত হারে কর পরিশোধ করে কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, এলাকার ভেদে প্রতি বর্গফুটে ১০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত কর পরিশোধ করলেই টাকার উৎস সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে হবে না। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেও এই সুবিধা থাকত। তবে চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় সেই বিধান বাতিল করা হয়েছে। ফলে এবার থেকে ফ্ল্যাট বা ভবনে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ আর থাকছে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকার অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২২–২৩ অর্থবছরে বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হলেও কেউ সে সুযোগ নেননি।
এছাড়া এবারের বাজেটে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও শুল্কের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। করহার হ্রাস ও ভর্তুকির মাধ্যমে কিছু খাতে সুবিধা দেওয়া হয়েছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে করহার বাড়ানো হয়েছে।
আয়করের ক্ষেত্রে আইপিও বা সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তরকারী পাবলিক কোম্পানির করহার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে তাদের সব ধরনের লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন হলে করহার কমে ২০ শতাংশ হবে। অন্য পাবলিক কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে করহার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ব্যাংক লেনদেনের ভিত্তিতে ২৫ শতাংশে নামবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ডেন্টাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পাশাপাশি শুধুমাত্র তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের করহার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে কর কর্তনের হারও কমিয়ে আনা হয়েছে।
ভ্যাট বা মূসকের ক্ষেত্রে রিফাইন্ড পেট্রোলিয়াম পণ্যের আমদানিতে আগাম কর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ঝুট থেকে পুনঃপ্রক্রিয়াজাত তুলার উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট মওকুফ করা হয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের পরিচালিত বিউটি পারলারের ভাড়ার ওপরও মূসক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বলপয়েন্ট কলম, হার্ট রিং এবং চোখের লেন্স আমদানির ওপর ভ্যাট ও আগাম করও মওকুফ করা হয়েছে।
শুল্কের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন এসেছে পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্ষেত্রে। সরকার এবার ট্যারিফ মূল্যের পরিবর্তে ইনভয়েস মূল্যের ভিত্তিতে শুল্ক নির্ধারণ করতে চায়। এতে করে ক্রুড অয়েলের আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ এবং অন্যান্য পণ্যে ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে।
সৌরশক্তি খাতে ব্যবহৃত সোলার ইনভার্টারের আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে মাত্র ১ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি টায়ার শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল ‘টেকনিক্যাল স্পেসিফায়েড ন্যাচারাল রাবার’-এর আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব পরিবর্তনের বিষয়টি জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাজেটটি কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয়েছে।