Published :
Updated :
মানুষের জীবন সম্পর্কের বেড়াজালে বন্দী। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন সম্পর্কে জড়ায় মানুষ। কিছু সম্পর্ক জন্মের সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায়, যেমন মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি ইত্যাদি সম্পর্ক। আবার কিছু সম্পর্ক শুরু হয় মানুষের সাথে চলাফেরা, উঠাবসা কিংবা পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে। সময়ের সাথে সাথে এ সম্পর্কগুলো মানুষের জীবন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে।
কিন্তু অনেক সময়ই এ সম্পর্কগুলোতে ফাটল ধরে। অনেকে হাজারো চেষ্টা করে তখন সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার, আবার অনেকে হয়তো এক ঝটকায় শেষ করে ফেলে সবকিছু। কিন্তু এর মধ্যে কোনটা ঠিক? একটি সম্পর্ক কখনই বা শেষ করা উচিৎ?
সম্পর্ক শেষ করে দেওয়া কারো জন্যই সহজ নয়। যেকোনো সম্পর্ক মানুষের জীবনে অনেক স্মৃতির জন্ম দেয়, হোক সে সম্পর্ক বন্ধুত্বের কিংবা প্রেমের। একারণে সম্পর্ক শেষ হওয়ার পরেও অনেকে বের হয়ে আসতে পারেন না সে সম্পর্কের স্মৃতির পাতা থেকে। চাইলেই তো এতো এতো সব মুহূর্ত মুছে ফেলা যায় না।
আবার অনেকে ‘মুভ অন’ করলেও দেখা যায় সেসব সম্পর্কের ভাঙন তাদের হৃদয়ে বিশাল ক্ষত সৃষ্টি করে। অনেকের জন্য এরকম অভিজ্ঞতা আবার মানসিক ট্রমার মতো হয়ে যায়। অনেকে পরবর্তীতে আর কোনো সম্পর্কে জড়াতেও ভয় পায়।
তথ্য ও প্রযুক্তির উন্নয়ন বাহ্যিকভাবে মানুষের মাঝে দূরত্ব কমিয়েছে মনে হলেও আদতে তা বাড়িয়েছে বহুগুণে। ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইলে চ্যাট করা কিংবা ভয়েস কলে কথা বলার পরও তাই সম্পর্কের গভীরতাগুলো আর আগের জায়গায় নেই। শুধু আবেগ, ভালোবাসা কিংবা আকর্ষণ দিয়ে আসলে যেকোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না। সাথে দরকার পারস্পরিক বোঝাপড়া, ত্যাগ স্বীকার করা কিংবা একে অপরের সাথে মানিয়ে চলার ব্যাপারগুলোও। আর এগুলো না থাকলে কোনো সম্পর্ক শেষ করার সিদ্ধান্তে আসাই যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত।
পারস্পরিক যোগাযোগের ঘাটতি একটি সম্পর্ক শেষের দিকে মোড় নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ কারণ। যদি আপনার এবং আপনার সঙ্গী কিংবা বন্ধুর সাথে কোনো অর্থবহ যোগাযোগ না থাকে এবং অনেক চেষ্টা করেও সে যোগাযোগ আর স্থাপন না করা যায় তাহলে সে সম্পর্ক থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা উচিৎ।
যেকোনো সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিশ্বাস। পরস্পরের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি থাকলে সে সম্পর্ক নিয়ে বেশিদূর যাওয়া যায় না। বিশ্বাসের ঘাটতি নিয়ে কোনো সম্পর্ক সামনের দিকে ঠেলে নিতে থাকলেও, সামনে চলার এ পথ ক্রমশ বন্ধুর হতে থাকে। যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বাস প্রাণশক্তির মতো। প্রাণ না থাকলে তো আর বেঁচে থাকা যায় না। ঠিক তেমনি যেকোনো সম্পর্কে বিশ্বাস না থাকলে সে সম্পর্কটা আর টিকিয়ে রাখা যায় না।
সম্পর্কে মনোযোগের অভাব আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ যেকোনো সম্পর্ক শেষ হওয়ার। ভালোলাবাসার কিংবা ভালোলাগার মানুষের কাছে সবসময় মানুষ একটু বিশেষ মনোযোগ প্রত্যাশা করে। আর সেটা না পেলে, অর্থাৎ, অপর মানুষটি সমানভাবে মনোযোগী না হলে তখন সঙ্গী হয় একরাশ হতাশা। তাই যখনই এ ব্যাপারটা ঠাহর করা যায় যে নিজের ভালোবাসার মানুষটি থেকে আর আগের মতো মনোযোগ পাওয়া যাচ্ছে না, তখন বুঝে নিতে হবে সম্পর্ক শেষ করার সময় চলে এসেছে।
কিন্তু এ শেষ মানে আসলে কী? শেষ বলে কী আসলে কিছু হয়? সব শেষই আসলে পরিবর্তন। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই আসলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পরিবর্তন আসে। আর তাই দুটি মানুষের সম্পর্কের মধ্যেও পরিবর্তন আসবে এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। তাহলে কেন বলা হচ্ছে শেষও এক প্রকার পরিবর্তন?
পরিবর্তন যখন আর মেনে নেওয়া যায় না সে পরিবর্তনটাই সম্পর্কের শেষ ঘোষণা করে দেয়। সব পরিবর্তন তো আর মেনে নেওয়া যায় না। তাই সোজা কথায় যখন বোঝা যাচ্ছে যে এ পরিবর্তনগুলো আর মেনে নেওয়া সম্ভব না, তখনই একটি সম্পর্ক শেষ করা উচিৎ।
jafinhasan03@gmail.com