Published :
Updated :
বর্তমানে সারা দেশে বিরাজ করছে এক ধরনের উৎসবের আমেজ। আগামী ৭ জুন পালিত হবে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। এই দিন ত্যাগের এক অনন্য মহিমা হিসেবে পশু কুরবানির মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করেন ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায়।
ইতোমধ্যে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে হাটবাজার- সর্বত্রই কুরবানির পশু নিয়ে আলোচনা বেশ জমে ওঠেছে। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে অনলাইনেও জমে ওঠেছে কুরবানির পশুর হাট।
কুরবানির সময়টিতে প্রায় প্রতিটি মুসলিম পরিবারেই মাংস দিয়ে তৈরি বিভিন্ন রেসিপি দেখা যায়। বাংলাদেশে কুরবানির পশু হিসেবে সাধারণত গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, উট কুরবানি করতে দেখা যায় যদিও গরু দিয়ে কুরবানি করার প্রচলন এদেশে সর্বাধিক।
কুরবানির এসব পশুর মাংসে রয়েছে নানাবিধ পুষ্টি উপাদান যা দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারি। চলুন এবারের লেখায় জেনে নেওয়া যাক কোন পশুর মাংসে কী কী পুষ্টি উপাদান আছে সেই সম্পর্কে।
গরুর মাংস
গরুর মাংস খেতে যেমন সুস্বাদু, ঠিক তেমনি এটি পুষ্টিগুণেও অনন্য। প্রোটিনের ভালো উৎস হিসেবে খ্যাতি রয়েছে গরুর মাংসের। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে প্রায় ২২.৬ গ্রাম প্রোটিন এবং ২.৬ গ্রাম চর্বি থাকে।
এছাড়া ভিটামিন বি-১২ এর ভালো উৎস হচ্ছে গরুর মাংস। তিন আউন্স গরুর মাংস খেলে দৈনিক ভিটামিন বি-১২ এর চাহিদার প্রায় ৩৭ শতাংশ পূরণ হয়ে যায়।
এছাড়া এই মাংসে রয়েছে ফসফরাস, জিংক, সেলেনিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ। অন্যদিকে গরুর মাংসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে বিধায় তা শরীরের রক্তাল্পতার সমস্যা দূর করে। তবে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্থূলতার সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য পরিমিত মাত্রায় এই মাংস গ্রহণ করা উচিত।
ছাগলের মাংস
ছাগলের মাংসেও রয়েছে নানাবিধ পুষ্টি উপাদান যা দেহের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতি ১০০ গ্রাম ছাগলের মাংসে ১২২ ক্যালরি, ২২ গ্রাম প্রোটিন, এবং ২.৫৮ গ্রাম ফ্যাট পাওয়া যায়।
ছাগলের মাংস খেলে দেহের রক্তাল্পতার সমস্যা অনেকটাই দূর হয়। এছাড়া ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও সাহায্য করে ছাগলের মাংস।
এই মাংসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে বিধায় তা হাড়ের গঠনে সাহায্য করে। এছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য ছাগলের মাংস উপকারি। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে ছাগলের মাংস খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। কারণ তা না হলে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
মহিষের মাংস
গরুর তুলনায় মহিষের মাংসের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি হলেও আমাদের দেশে মহিষের মাংস অনেকটাই উপেক্ষিত থাকে। তবে কুরবানে অনেকেই পশু হিসেবে মহিষ জবাই করে থাকেন। পুষ্টিগুণ বিচারে প্রতি ১০০ গ্রাম মহিষের মাংসে ২০-২২ গ্রাম প্রোটিন, ৩-৪ গ্রাম ফ্যাট, এবং ৪-৫ মিলিগ্রাম জিংক রয়েছে।
প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায় বিধায় এটি হাড়ের গঠনে সহায়ক। তাই শিশু এবং বয়স্কদের জন্য মহিষের মাংস খুবই উপকারি। জিংকের ভালো উৎস হওয়াতে এটি আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া ত্বক ও চুল ভালো রাখতেও মহিষের মাংস কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এই মাংস ফসফরাসের ভালো উৎস হওয়াতে তা দাঁত ও হাঁড়ের গঠনেও সাহায্য করে।
ভেড়ার মাংস
বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ভেড়ার উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু পশম উৎপাদনের জন্যই নয়, বরং খাদ্য হিসেবেও ভেড়ার মাংস বেশ উপকারি।
এই মাংস সহজে হজম হয় বিধায় এটি খেলে গ্যাস্ট্রিক কিংবা বদহজমের সমস্যা থেকে অনেকটাই দূরে থাকা যায়। এছাড়া এই মাংসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি এবং প্রোটিন পাওয়া যায়।
অন্যদিকে চর্বি এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম থাকে বিধায় এটি খেলে স্থূলতাজনিত সমস্যা থেকে অনেকটাই রেহাই মিলে। এছাড়া ভিটামিনেরও ভালো উৎস এই মাংস। ভেড়ার মাংসে রয়েছে ভিটামিন এ, ই, এবং সি যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারি।
উটের মাংস
বর্তমানে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পশুর হাটে কুরবানির পশু হিসেবে উট বিক্রি হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে উট কুরবানি খুব জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে এটি এখনও তেমন একটা জনপ্রিয়তা পায়নি। তবে পুষ্টিগুণের দিক থেকে কিন্তু কোনো অংশে কম যায় না উটের মাংস।
প্রথমত, এটি একটি উচ্চ মাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। এছাড়া এই মাংসে চর্বির পরিমাণ গরুর মাংসের তুলনায় কম। তাই এটি খেলে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমার আশংকা কম থাকে।
এই মাংসে অসম্পৃক্ত চর্বি বেশি থাকে বিধায় তা রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে৷ এছাড়া ভিটামিন সি, ডি এর ভালো উৎস হিসেবে পরিচিত উটের মাংস। পাশাপাশি জিংকসহ নানাবিধ খনিজ পদার্থ পাওয়া যায় উটের মাংসে যা মানবদেহের জন্য উপকারি।