Bangla
2 years ago

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি মানুষের স্থান নিতে চলেছে?

দাবা খেলায় স্টকফিশ ও লীলার মত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে নতি স্বীকার করেছে গ্র্যান্ডমাস্টাররা। (ছবি: ডেইলি মেইল অনলাইন)
দাবা খেলায় স্টকফিশ ও লীলার মত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে নতি স্বীকার করেছে গ্র্যান্ডমাস্টাররা। (ছবি: ডেইলি মেইল অনলাইন)

Published :

Updated :

আগামী কয়েক বছরে বিশ্বের ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে খুব সম্ভবত একটা বিপর্যয় নামতে যাচ্ছে। 

‘গ্রাফিক্স ডিজাইন, কপিরাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইনিং ইত্যাদি কাজগুলো এখন থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা করে দিবে। বাজারে টিকে থাকার একমাত্র কৌশল, আপনাকে কাজে এক্সপার্ট হতে হবে। অল্পবিস্তর দক্ষতা নিয়ে টিকে থাকা কষ্টকর হবে’, বলছিলেন জনপ্রিয় ইউটিউবার ও ফ্রিল্যান্সার খালিদ ফারহান।  

বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটা রীতিমত দুঃসংবাদ। প্রতি বছর ফ্রিল্যান্সিং থেকে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ। এখন বহু কাজ চলে যাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাতে। আপওয়ার্ক ও ফাইভারের মত জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসে কাজ খুঁজে পাওয়া এখন আরো বেশি কঠিন হয়ে পড়ছে। ফ্রিল্যান্সিং ছাড়াও বিভিন্ন কলকারখানা পরিচালনা, এমনকি গাড়িও চালানো হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি তাহলে মানুষের জায়গা নিতে চলেছে? 

ওপেন এআই কী? 

“ওপেন এআই” হলো একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে জনপ্রিয় ‘চ্যাট জিপিটি’ ও ‘ডাল-ই’র মত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাগুলো ওপেন এআই এর প্রজেক্ট। 

ওপেন এআই এর সূচনা হয়েছিল ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে। ২০২৩ সালে এসে প্রতিষ্ঠানটির মূল্যমান দাঁড়ায় ত্রিশ বিলিয়ন ডলারে। বিশ্বের অন্যতম টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফট এই ওপেন এআই এর বিনিয়োগকারীদের একজন। 

ওপেন এআই নিয়মিত তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আপডেট করছে। চ্যাট জিপিটি এখন বাংলা বোঝে। তাদের ওয়েবসাইটে ঢুকে যে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করা মাত্র উত্তর দিতে প্রস্তুত এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। উত্তর শুনে যে কারো মনে হতে পারে, নিশ্চয় অপর প্রান্তে বসে আছে কোনো জলজ্যান্ত মানুষ। তাকে যদি বলা হয়, বাংলা ভাষায় একটা ভালোবাসার কবিতা তৈরি কর। সেটাও করে ফেলবে মুহুর্তের মাঝে। 

যে কারণে এআই মানুষের স্থান নিতে ব্যর্থ হবে 

আজ থেকে শত বছর আগের মানুষের মনে একবিংশ শতক নিয়ে অনেক জল্পনাকল্পনা ছিল- ২০২০ সালের পর মানব সভ্যতা হবে অত্যাধুনিক। পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করবে রোবটেরা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের জায়গা নিয়ে নিবে। সৌরজগতের বাইরে ভিনগ্রহে পাড়ি জমাবে মানুষ। আমাদের বর্তমান অবস্থা দেখলে তারা কিছুটা হতাশই হতেন। এখনো মানুষ মঙ্গলগ্রহে পা ফেলতে পারেনি। 

যদিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক দূর এগিয়েছে, তবে তা আসলে পর্যাপ্ত নয়। ওপেন এআই এর সিইও স্যাম আল্টম্যান নিজেই দাবী করেছেন, “মানুষের বুদ্ধিমত্তার সাথে তুলনা করার মত কোনো কিছুই এখনো আমাদের হাতে নেই। ভবিষ্যতেও আসবে কিনা সন্দেহ আছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাগুলো এখনো মানুষের সাহায্যে পরিচালিত হয়।”

মানুষ কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে তার বিচারবোধ, আবেগ-অনুভূতি, পূর্ব-অভিজ্ঞতা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে। প্রতিটি মানুষের বিচার করার ক্ষমতা পুরোপুরি ভিন্ন। মানুষের মস্তিষ্ক এতটাই জটিল যে, আধুনিক বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত নতুন তথ্য আবিষ্কার করছে। অপরদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কেবল কিছু ডাটার সমষ্টি। খুবই সীমিত তথ্য ব্যবহার করে এটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। 

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা মানবিকতাবোধ মানব মস্তিষ্কের এক বিস্ময়কর ক্ষমতা। মানুষ অন্যের দুঃখে ব্যথিত হয়। অন্যের স্থানে নিজেকে রাখতে পারে। অন্যের প্রতি সহমর্মীতাবোধ জাগ্রত হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এর ধারে কাছেও নেই। মানুষ যে তথ্যগুলো ইনপুট দিয়ে থাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাগুলো তার উপরই নির্ভরশীল। 

তবুও ধরা যাক, কোনোভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পৃথিবীতে আধিপত্য বিস্তার করে ফেলেছে। অনেক গবেষকদের মতে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। মানব মস্তিষ্ক যে কোনো পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। সাইবেরিয়ার মত দূর্গম ও হিমশীতল স্থানে মানুষ টিকে থাকতে পারে। এআই শাসিত পৃথিবীতেও মানুষ টিকে থাকবে। মানব বিবর্তন আরো শক্তিশালী মানুষ তৈরি করবে।

আমেরিকার বিখ্যাত এঞ্জেল ইনভেস্টর নাভাল রাভিকান্তের ভাষায়, “মানুষ এখনো অ্যামিবার মত সামান্য এককোষী জীব আবিষ্কার করার যোগ্যতা রাখেনা, মস্তিষ্ক তৈরি তো দূরের ব্যপার। এআই এর দুনিয়া দখল অন্তত এই শতকে হচ্ছে না।”

তাই আপাতত চাকরি হারানোর ভয় না করলেও চলবে। 

সাজিদ আল মাহমুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষে পড়াশুনা করছেন।

 shajidmahmud11@gmail.com

Share this news