Bangla
7 months ago

কতটা ক্ষতিকর ও ভয়াবহ রাসেল’স ভাইপার?

Published :

Updated :

ঋতুর পরিক্রমায় বর্তমানে দেশে বিরাজ করছে বর্ষাকাল। এর শুরুতেই ক্রমাগত বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বন্যার দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি ডুবে যাওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকার মানুষেরা মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। একেতো বন্যার কারণে দেশের নদীবেষ্টিত ও নিচুভূমিতে বাস করা মানুষের নানাবিধ সংকট, এর উপর এখন তাদের উদ্বেগ-উত্কণ্ঠার কারণ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বিষাক্ত প্রজাতির সাপ রাসেল’সভাইপার। কয়েকবছর আগেও এটি বিপণ্ন প্রজাতির প্রাণীর তালিকায় থাকলেও বর্তমানে দেশের ২৫ টি জেলায় দেখা মিলেছে হিংস্র ও বিষধর এই সাপ।

বরেন্দ্র এলাকায় এর আবাসস্থল হলেও সম্প্রতি দেশের নদী অববাহিকায় অবস্থিত জেলাগুলোতে এর অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ, পটুয়াখালীসহ পদ্মা , মেঘনা ও যমুনা অববাহিকায় অবস্থিত এলাকায় এর দাপট লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ইতোমধ্যে এই সাপের কামড়ে দেশে কয়েকজন মানুষের মৃত্যও ঘটেছে। এরপর থেকেই এটি নিয়ে দেশের সর্বমহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

রাসেল’স ভাইপার সাপটি আমাদের দেশে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামেও পরিচিত। এটি দেখতে অনেকটা অজগর সাপের মতো। ছোট ও সরু লেজের প্রাণীটির লম্বায় তিন থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। মাথা চ্যাপ্টা, ত্রিভুজাকার ও ঘাড় থেকে আলাদা। এর মাথা ও লেজের অংশটা অনেক সরু তবে পেটের অংশটা প্রশস্ত। শরীরজুড়ে চাঁদের মতো গাঢ় বাদামি গোল গোল দাগ থাকে। একারণেই এটি সহজেই ধানক্ষেতে লুকিয়ে থাকতে পারে।

কতটা ক্ষতিকর ও ভয়াবহ রাসেল’স ভাইপার?

বিষধর সাপের তালিকায় পৃথিবীতে রাসেল’সভাইপার সাপের অবস্থান পঞ্চম। তবে হিংস্রতা ও আক্রমণের দিক দিয়ে এটি প্রথম অবস্থানে রয়েছে। এটি এতোটাই আক্রমণাত্নক যে, এক সেকেন্ডের ১৬ ভাগেরও ১ ভাগ সময়ে এটি পুরোপুরি দংশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে।

সাপটির বিষ হেমাটোটক্সিক, একারণে ছোবল দেয়া স্থানে পচন ধরে। ছোবল দেয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আক্রান্ত স্থান ফুলে ওঠে। কয়েক ঘন্টার মধ্যে দেহের অন্যান্য অঙ্গগুলোও ফুলে যেতে পারে। এর কাপড়ে দংশিত স্থান হতে বিষ সারাদেহে ছড়িয়ে পড়ে অঙ্গহানি, রক্তপাত, রক্ত জমাট বাঁধা, স্নায়ু বৈকল্য, চোখ ভারী হয়ে আসা, কিডনি ও ফুসফুসের সংক্রমণসহ মৃত্যর সম্ভাবনা রয়েছে।

সাপের অন্যান্য প্রজাতি ডিম ফুটালেও এটি সরাসরি বাচ্চা জন্ম দেয়। স্ত্রী রাসেল’স ভাইপার একসাথে ২০ থেকে ৪০ টি বাচ্চা সাপ জন্ম দিতে পারে। এরা সর্বোচ্চ ৮০ টি বাচ্চা একত্রে জন্ম দিতে পারে।

একেতো এরা উচ্চ প্রজনন ক্ষমতাসম্পন্ন পাশাপাশি এদের যেসকল প্রাকৃতিক শ্ত্রু যেমনঃ শিয়াল, বেজি, গুইসাপের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বাংলাদেশে রাসেল’স ভাইপার সাপের পুনরায় আগমন ও এর ঝূঁকি নিয়ে গবেষণা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান।

গবেষকদের মতে কৃষিজমিতে বছরে দুই-তিন বার ফসল চাষ করলে সে জমি খুব কম সময়ই খালি পরে থাকে।ফলে সারা বছর জমিতে ফসল থাকায় ইঁদুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় যা সাপের অন্যতম প্রধান খাবার। ফলে সাপও বংশবিস্তারের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পায়।

এখন পর্যন্ত রাসেল’স ভাইপারের কবল থেকে বাঁচার জন্য বিশেষজ্ঞরা সকলকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। আর সাপজনিত দংশনের ঘটনা ঘটলে সময় নষ্ট না করে রোগীকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

[email protected]

Share this news