Published :
Updated :
আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে (আইএসএস) পা রাখলেন প্রথম আরব নারী। তার নাম রায়ানাহ বারনাউই। ৩৩ বছর বয়স্ক সৌদি নাগরিক রায়ানাহ একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। তার সঙ্গে ছিলেন সহকর্মী ৩১ বছর বয়সী আলী আল-কার্নি। তিনি একজন ফাইটার পাইলট।
সৌদি আরব থেকে মহাকাশগামী প্রথম ব্যক্তিটি ছিলেন যুবরাজ সুলতান বিন সালমান। তিনি ছিলেন সৌদি বিমানের একজন পাইলট, যিনি আরব বিশ্বের প্রথম মুসলিম হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ শাটল অভিযানে গিয়েছিলেন। সেটি ১৯৮৫ সালের কথা। তিনি সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সৎ ভাই- তাই নামে এত মিল!
যা হোক, দীর্ঘ ৩৮ বছর পর আবার মহাকাশে সৌদির নাগরিক, তার ভেতর দেশ থেকে প্রথম নারী নভোচারী। রায়ানাহ এ নিয়ে বলেন, "বিশ্বের মানুষেরা শোনো, ভবিষ্যত খুব ভালো৷ আমি তোমাদের বলবো, বড় স্বপ্ন দেখতে, নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতে ও মানবতার প্রতি বিশ্বাস রাখতে।"
আর জনাব আলী আল-কার্নির বক্তব্য, "আমি যখন মহাকাশে পৌঁছে চারপাশটা দেখলাম, মনে হলো যেন আমাদের সবার জন্য দুর্দান্ত এক যাত্রার শুরু হলো কেবল!"
তারা ১০ দিনের মিশনে ওখানে গেছেন। তাদের সম্ভাষণ জানান সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্যেতির্বিজ্ঞানী সুলতান আল-নেয়াদি। তিনি আছেন ছয় মাসের মিশনে। তিনি প্রথম আরব হিসেবে মহাকাশে হেঁটে আরেকটি রেকর্ড করেছেন৷ তিনি ও আমেরিকান প্রকৌশলী স্টিফেন বোয়েন আইএসএস এর বাইরে যন্ত্র-সরঞ্জাম নিয়ে সাত ঘণ্টা কাটান।
সৌদির এই দুজন এখানে ২০ টি পরীক্ষা চালাবেন, যার ভেতর রয়েছে ক্যান্সার সম্পর্কে যৌক্তিক অনুমান ও প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণা এবং চাঁদ ও মঙ্গলে মানববসতির জন্য প্রয়োজনীয় কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। তারা ঠিক করেছেন স্কুলের বাচ্চাদের সাথেও আলাপ করবেন। ফ্যান চালিয়ে দিয়ে শূণ্য মহাকর্ষ বলে একটি ঘুড়ি ওড়ানোর চেষ্টা করে দেখবেন তারা! ফলটি নিশ্চয়ই অবাক করবে সেই শিশুদের৷
এই বাণিজ্যিক মিশনটি স্পেসএক্স ফ্যালকন-৯ রকেটে করে ফ্লোরিডার ক্যাপ ক্যানাভেরালে অবস্থিত কেনেডি মহাকাশ কেন্দ্র থেকে গত রবিবার যাত্রা করে। 'ড্রাগন ফ্রিডম' নামের এই ক্যাপসুলটির কমান্ডের দায়িত্বে আছেন আমেরিকান জ্যেতির্বিজ্ঞানী পেগি উইটসন। পাইলটের কাজ করছেন ব্যবসায়ী জন স্কফনার৷ মিশনটির ব্যবস্থাপনায় রয়েছে হিউস্টনভিত্তিক সংস্থা অ্যাক্সিয়ম স্পেস। তারা জনপ্রতি ৫৫ মিলিয়ন ডলার অর্থ খরচ করে টিকেটের ব্যবস্থা করেছে৷
বিশ্ব পেরোনোর আগে রায়ানাহ বারনাউইকে পেরোতে হয়েছে ভেতরকার বিভিন্ন বাধা৷ অতিরক্ষ্মণশীল সৌদি আরবের তীব্র প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে একজন নারী হিসেবে সৌদি আরব ও নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োমেডিকেল সায়েন্সে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেছেন তিনি৷
গত বছর তিনি সৌদি আরবে প্রশিক্ষণ নেন। অক্সিজেনশূণ্য ও মহাকর্ষ বলহীন পরিবেশে যাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন।
তার মহাকাশযাত্রার পরপর সৌদিতে নারীদের গাড়ি চালানো, স্টেডিয়ামে খেলা দেখা ও মাহরাম ছাড়াই পাসপোর্ট গ্রহণ ও ভ্রমণের ব্যাপারগুলোর নিষেধাজ্ঞায় শিথিলতা আনা হয়৷ তবে এখনো সেখানে বহুক্ষেত্রেই নারী-পুরুষের সমান সুযোগ নেই৷ বিয়ে ও বিচ্ছেদের মতো ব্যাপারে এখনো তারা পুরুষদের সিদ্ধান্তের অধীন। এর বিরুদ্ধে বলায় অনেককে পাঠানো হয়েছে জেলে। এমন একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রথম আরব নারী হিসেবে রায়ানাহ এর মহাকাশ যাওয়ার ব্যাপারটি নিঃসন্দেহে অবিস্মরণীয় ও প্রণিধানযোগ্য।
মাহমুদ নেওয়াজ জয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।