Bangla
6 months ago

মিরপুরের মাঝে ছোট্ট ‘নীলক্ষেত’ কী পাওয়া যায় এখানে?

সুইমিং পুলের ধার ঘেষে মিরপুরের বইয়ের দোকান
সুইমিং পুলের ধার ঘেষে মিরপুরের বইয়ের দোকান Photo : নীলাঞ্জনা চম্পা

Published :

Updated :

মিরপুর ১ হতে ১০ নম্বর যাওয়ার পথে চোখে পড়ে রাস্তার পাশে নীলচে এক বিশাল স্থাপনা। দূর থেকে আসা অনেকে একে স্টেডিয়াম ভেবে ভুল করতেই পারে। তবে তা স্টেডিয়াম নয়, সুবিশাল সুইমিং পুল। এরই ধার ঘেষে ফুটপাথের সাথে লম্বা লাইন ধরে সারি সারি বই ঠাঁসা যা গিয়ে শেষ হয় মিরপুর ২ এর ক্রিকেট স্টেডিয়াম এর কাছে। বইগুলোর উপরে লাল-নীল রঙের প্লাস্টিকের ছাউনি। মিরপুরের যারাই এই সুইমিং পুলকে চেনে তারা এর সংলগ্ন বইয়ের বাজার সম্পর্কেও জানে। ঢাকা মিরপুর ১০ এর সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতীয় সুইমিং পুলের পার্শ্ববর্তী এই বিপুল বই ভান্ডারকে মিরপুরবাসীরা ‘মিরপুরের ছোট্ট নীলক্ষেত’ হিসেবেই ডাকে।  

বইপ্রেমীদের পুরনো বই কেনার কথা চিন্তা করলে সবার আগে মাথায় আসে নীলক্ষেতের বই সমারোহ। তবে চোখ ঘোরালেই নীলক্ষেতের মতো ঢাকার অন্যান্য জায়গায় খোঁজ মিলবে ছোট-বড় নানা বইয়ের একগুচ্ছ দোকান। নীলক্ষেতের মতো বইয়ের সংগ্রহ অসংখ্য না হলেও প্রয়োজনীয় এবং বিখ্যাত অনেক বই পাওয়া যায় এখানে। মিরপুরবাসীরাও তাই দেড়-দুই ঘণ্টার যাত্রা না করে খুব কাছ থেকেই সংগ্রহ করতে পারে এসব পুরনো বই। 

বাজারটির সূচনা:

এখানকার স্থানীয় এক বই বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, ৮০র দশকের আগে নীলক্ষেতের ফুটপাথে যে বিশাল বইয়ের বাজার ছিল তা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় উচ্ছেদ করা হয়। পরে পুলিশের তত্ত্বাবধানে এলিফ্যান্ট রোডে একটি মার্কেট (হলিডে মার্কেট) করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবে শুধুমাত্র সাপ্তাহিক দিনগুলোতে ব্যবসা চালানোর নির্দেশনার কারণে  সেখানকার বই বিক্রেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করে। এরই সূত্র ধরে তারা চলে আসে মিরপুর ১০ নম্বরের ফায়ার সার্ভিস ট্রেনিং কমপ্লেক্সের পূর্ব পাশে। সেখান থেকে পরে সরে আসে সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতীয় সুইমিং পুলের কাছে। সেই থেকে এখানে বই বিক্রির কার্যক্রম চলে আসছে।

ছবিঃ নীলাঞ্জনা চম্পা 

দুপুর গড়ানোর পরপরই বইয়ের দোকানগুলো নীল প্লাস্টিক সরিয়ে উন্মোচন করতে থাকে সারি সারি বই। চলতে থাকে রাত ১০টা পর্যন্ত। এনসিটিবির প্রাতিষ্ঠানিক বই অর্থাৎ স্কুল-কলেজের পাঠ্য বই থেকে শুরু করে নানা বাংলা-ইংরেজি সাহিত্যের বই পাওয়া যায় এখানে। রবীন্দ্রনাথ, মধুসূদন, তারানাথ, শরৎচন্দ্র ইত্যাদি কিংবদন্তি লেখকদের বইয়ের পাশাপাশি রয়েছে বৈদেশিক নানা বই যেমন- আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি, কলিন হুভারের বইসমূহ, ফ্রানৎস কাফকা, সাতোশির মরিসাকি বইঘরের দিনগুলি ইত্যাদি পাওয়া যায়। শুধু পুরনো নয়, নতুন বইয়ের সংখ্যাও অনেক।

দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বই বিক্রির কাজে নিয়োজিত মো. আশিকুর জামান সাইফুল জানান, “এখানে পাঠকের চাহিদা মতো নানা বই পাওয়া যায়। তবে নতুন কারিকুলামের কারণে পুরনো বই আগের মতো বিক্রি হচ্ছেনা। এছাড়া স্পোকেন ইংলিশ, চাকরির বই ভালো বিক্রি হয়।” 

পুরনো বইগুলো সাধারণত বইয়ের অবস্থা বুঝে ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। নতুন বইয়ের দাম অনান্য বইয়ের দোকানের তুলনায় তেমন পার্থক্য নেই। 

বই বিক্রি আগের মতন হয় কিনা জানতে চাইলে আরেক বিক্রেতা জানায়, ইন্টারনেটের কারনে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে বই ব্যবসা বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। “আগের মতো সাহিত্যবিষয়ক বইও কেউ কেনে না। বই বিক্রির আমেজ আর আগের মতন নেই। কিছুদিন আগেও প্রতিদিন গড়ে ১৫০০-২০০০ টাকার বিক্রি হলেও তাপদাহের এই সময়টাতে বই বিক্রি নেমে এসেছে ৮০০-১০০০ টাকা।”  

বৃষ্টির সময় ব্যবসা পুরোটা সময় বন্ধ রাখতে হয় বলে জানান সেখানকার আরেক স্থানীয় ব্যবসায়ী হাবিব। অনান্য পণ্যের চেয়ে বই ব্যবসাতে বৃষ্টির সময়টায় খুবই দুর্বিষহ অবস্থা দেখা দেয়। বর্ষাকালে তাই একধারে এই বই বাজার বন্ধ থাকতেই দেখা যায়। 

করোনা কিংবা তাপদাহ, কঠিন এ সময়গুলোতে বেশ লোকসানের স্বীকার হয়েছে এখানকার বই বিক্রেতারা। মো. আশিকুর জামান এসকল অসুবিধা উল্লেখ করে বলেন, “সরকার যদি আমাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতো, ভালো একটা স্থান দিত বসার, যেখানে কম পয়সায় ভাড়া করা যেত, তাহলে আমাদের আর এমন ঝামেলা পোহাতে হতো না।” 

[email protected]

 

Share this news