Bangla
6 months ago

আপনিও কি মুলা অপছন্দ করেন?

মুলা নিয়ে মুলামুলি আর নয়, জেনে নিন মুলার উপকারিতা

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

Published :

Updated :

আপনিও কি মুলা অপছন্দ করেন?

আসলে ছোটবেলা থেকেই আমাদের অপছন্দের তালিকায় কোনো না কোনো শাক-সবজি থেকে থাকে। মজার বিষয় হলো, দুয়েকটি সবজি প্রায় অনেকেরই অপছন্দের। আর এর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই সর্বাগ্রে আসে মুলার নাম। বাজারে গিয়ে সকলেই দাম নিয়ে মুলামুলি করতে পছন্দ করেন, কিন্তু খাবার টেবিলে মুলা দেখলে পালাই পালাই করেন। তাইতো মুলা নিয়ে হাসাহাসি, মুলা দেখলেই নাক সিঁটকানো বেশ পরিচিত একটি দৃশ্য। কিন্তু সবজি জগতে অত্যন্ত অবহেলিত এই মুলার উপকারিতা জানলে হয়তো কেউ কেউ মুলাকে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করবেন। 

মুলার বিভিন্ন উপকারিতা

ক্রুসিফেরাস গোত্রের অন্যান্য শাক-সবজির মতো মুলাতেও রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান। আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের টিউমারের বৃদ্ধি রোধে সাহায্য করতে পারে মুলার মতো খাবার। তাই কোলন, কিডনি, অন্ত্র, পেট– বিশেষ করে মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে মাঝে মাঝেই মুলা খাওয়া দরকার।

মানুষের দেহে সাধারণত ক্যান্ডিডা অ্যালবাইকানস নামে একটি ছত্রাক বাস করার ক্ষমতা রাখে। এদিকে মুলা হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিফাংগাল এজেন্ট। তাই খাদ্যতালিকায় মুলা রাখলে যে সে ছত্রাক থেকে গা বাঁচিয়ে চলা যাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ছত্রাক থেকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণও হয়ে থাকে, অতঃপর সতর্ক থাকাই ভালো। 

আবার কেউ যদি ওজন কমানোর অভিযানে নামেন, তবে তার খাদ্যতালিকায় মুলা যোগ করা বিচক্ষণের কাজ হবে। কেননা প্রতিটি প্রমাণ আকারের মুলায় রয়েছে মাত্র ১ ক্যালোরি। এবং সেই ১ ক্যালোরির কোত্থাও নেই কার্ব কিংবা চর্বির উপস্থিতি– বরং আছে ভরপুর মাত্রায় ভিটামিন সি। 

কিন্তু মুলা খাবেন কীভাবে?

মুলার এত উপকারিতা জানা সত্ত্বেও অনেক মুলাবিরোধী হয়তো ভ্রূ কুঁচকে বলছেন, সবই বুঝলাম– ‘কিন্তু কী করে রান্না করলে মুলাও খেতে ভালো লাগবে?’ সে কথায়ই আসছি। 

বেশ কিছু সবজি রয়েছে, যা রান্না না করে সালাদ হিসেবে কাঁচাও খাওয়া যায়। এর মধ্যে আছে বাঁধাকপি, মুলা, পেঁপে ইত্যাদি। সালাদের মধ্যে কুঁচি কুঁচি সাদা মুলা ছড়িয়ে দিলে আগে থেকে যদি কাউকে না বলা হয়, তাহলে বুঝতে অনেকটা সময় লেগে যাবে। যে বাচ্চারা মুলা খেতে চায় না, তাদেরকে সালাদের মাঝে করে মুলা খেতে দিতে পারেন। 

এমনিতে বিটরুটের শরবত বানিয়ে তো অনেকেই খান। বিটরুটের সঙ্গে লাল মুলো মিশিয়ে একখানা মকটেল জাতীয় শরবত বানিয়েও দেখতে পারেন, কেমন লাগে। বেশ খানিকটা সময় ব্যায়ামের পর শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এধরনের অর্গানিক শরবত স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ভালো।

এছাড়া একটু অন্যরকমভাবেও রান্না করতে পারেন মুলা। চিজ গ্রেটার দিয়ে মুলা কুঁচি কুঁচি করে কেটে নিয়ে, কালোজিরা ফোঁড়ন দিয়ে, হলুদ-মরিচ গুঁড়ো আর পরিমাণমতো লবণ মিশিয়ে নিন। এ রান্নায় পেঁয়াজ দেবার দরকার নেই। এরপর ভালোমতো কষিয়ে রান্না প্রায় হয়ে এলে এক চিমটি চিনি ছড়িয়ে দিন। একই সময়ে দু তিনটে কাঁচামরিচ চিরে দিতে পারেন, তবে খেয়াল রাখবেন, মরিচ সবুজ থাকতে থাকতেই কিন্তু রান্না নামিয়ে ফেলতে হবে। নইলে কাঁচামরিচের কাঁচা ভাবটি হারিয়ে যাবে। গরম ভাতের সাথে এই মুলা ভাজি খেতে গেলে অন্য তরকারির খোঁজ হতে অনেকক্ষণ লাগবে, সেকথা হলফ করে বলে দেয়া যায়। কেউ আরেক কাঠি সরেস হয়ে চাইকি রান্না করে ফেলতে পারেন মুলার পাকোড়া কিংবা কাবাবও! 

রূপচর্চায় মুলার ব্যবহার

আর যদি কেউ এতশত উপকারিতা ও স্বাদ জানার পরও মুলার সঙ্গে রসনাসন্ধি না করতে চান, তবে অন্তত রূপচর্চার দিকটি খেয়াল রাখবেন। মুলায় থাকা জিংক, ফসফরাস ও ভিটামিন সি ত্বকের শুষ্কতা দূর করে, এমনকি বিভিন্ন ধরনের অ্যাকনি ও র‍্যাশ থেকেও মুক্তি দেয়। মুলায় থাকা পানির উচ্চ পরিমাণ ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। তাই কাঁচা মুলো বেটে বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিয়ে সপ্তাহে একদিন মুখে মুলার মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। প্রাকৃতিকভাবে ত্বক পরিষ্কার হবে, ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতাও ফেরত আসবে।

anindetac@gmail.com 

Share this news