Published :
Updated :
ত্রিশালের নাম নিলে আনমনেই জাতীয় কবি কাজী নজরুলের নাম চলে আসে। অনেকটা প্রবাদ প্রতীমের মতো নজরুলের নামের সাথে জড়িয়ে আছে জায়গাটি। এখানকার মানুষের সাথে জড়িয়ে আছে কবি নজরুলের অমলিন স্মৃতি। ঠিক যেমন ত্রিশালের নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জাতীয় কবির নাম, তেমনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ‘কুয়াশা উৎসব’।
ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ১ কি.মি দূরে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। কবি নজরুলের স্মৃতি রক্ষার্থে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি।
গ্রাম বাংলার শীত সংস্কৃতিকে বরণ করে নিতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে উদযাপিত হয় ‘কুয়াশা উৎসব’। অবশ্য করোনার কারণে মাঝের দুই বছর ‘কুয়াশা উৎসব’ উদযাপিত হয়নি। ২০২২ সালে দ্বিতীয় বারের মতো উৎসবটি উদযাপিত হয় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
'হারাবার আগে পায়ে মাখো শিশির, কুয়াশার মাঠে বাড়ুক প্রাণের ভিড়’ - এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে তৃতীয় বারের মতো (১০ ও ১১ ডিসেম্বর) আয়োজিত হয়ে গেলো ‘কুয়াশা উৎসব ১৪৩০’।
বাংলা ক্যালেন্ডারের পাতায় এখন অগ্রহায়ণ মাস, হেমন্ত ঋতু। বাংলা মাস অনুযায়ী পৌষ-মাঘ হলো শীতকাল। হেমন্তের পর শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে হাজির হচ্ছে প্রকৃতি। শীতের দিনে কুয়াশার চাদরে আবৃত হয়ে পড়ে পুরো শহর। শীতের দিনে কুয়াশার জন্য ঠিক মতো বোঝা যায় না কখন সকাল হয়, কখন সন্ধ্যা হয়।
রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ভাষায় -
‘হে আমার বিষণ্ন সুন্দর
হৃদয়ের কূল ভেঙে কেন আজ এতো জল ছড়ালো শরীরে
কেন আজ বাতাসে বসন্ত দিন ফিরে এলো কুয়াশার শীতে’!
অন্যান্য ঋতুর তুলনায় শীতকাল একটু ব্যতিক্রম। শীতকালে উৎসব পার্বণ যেন লেগেই থাকে। শীত উপভোগেও আয়োজনের কমতি থাকে না।
শীত উপভোগ করতে এমনি এক ভিন্নধর্মী আয়োজনে মেতে উঠে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শীতের আগমনকে কিছুটা ব্যতিক্রমভাবে তুলে ধরতেই কুয়াশা উৎসবের আয়োজন করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এক মাসের বেশি সময়ের প্রস্তুতিতে তৃতীয় বারের মতো সফলভাবে আয়োজিত হয় ‘কুয়াশা উৎসব'।
শহর জীবনে মানুষ এখন খুব বেশি কুয়াশা দেখতে পায় না। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কিছুটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এখানে ঘন কুয়াশা পড়ে। কুয়াশাকে অনেকেই হতাশার প্রতীক বলে মনে করে। প্রচলিত ধারণা পাল্টে দিয়ে কুয়াশাকেই আশার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরতেই এ আয়োজন করা হয়ে থাকে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আবহমান বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ব্যতিক্রমী আয়োজন কুয়াশা উৎসব । পৌষ মেলা যেমন আমাদের শান্তি নিকেতনের কথা মনে করিয়ে দেয়, তেমনি কুয়াশা উৎসবের আয়োজক হিসেবে সবাই হয়তো মনে রাখবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা।
সংস্কৃতিপ্রেমী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরলস পরিশ্রমের ফলে উৎসবটি আয়োজিত হয়। গ্রাম বাংলার চিরচেনা সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে উল্লসিত পরিবেশে কুয়াশা উৎসব হয়। এটি ত্রিশালের একটি সর্বজনীন শীত উৎসবে পরিণত হয়েছে এখন।
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ উৎসব দেখতে ত্রিশাল ভ্রমণ করে। এছাড়াও ত্রিশালের সর্বস্তরের মানুষ কুয়াশা উৎসবে যোগদান করে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করে।
কুয়াশা উৎসব-১৪৩০ উৎসর্গ করা হয়েছে মৈমনসিংহ গীতিকার শতবর্ষ উদযাপনকে। আবহমান গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে দুই দিন ব্যাপী কুয়াশা উৎসবে যুক্ত হয় নানা আয়োজন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে আয়োজিত হয় চিত্রকলা প্রদর্শনী, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, আদিবাসী নৃত্য, সাহিত্য আড্ডা, কবিতা প্রহরী, পিঠা পার্বণ উৎসব, রম্য বিতর্ক, পালা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, সংগীত অনুষ্ঠান, সমাপনী কীর্তন, ইত্যাদির মতো অনুষ্ঠান।
কুয়াশা উৎসবের প্রথমদিন গান পরিবেশন করেন ব্যান্ড দল গঞ্জে ফেরেশতা ও মাদল। দ্বিতীয় দিন উৎসবে একাত্ম হয়ে গান পরিবেশন করেন কফিল আহমেদ, মুয়ীয মাহফুজ ও ব্যান্ড দল সহজিয়া।
কুয়াশা উৎসবকে ঘিরে আয়োজিত প্রতিটি আয়োজনেই ছিল স্বতন্ত্র বাঙালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরার প্রয়াস। বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশ গেইট থেকে শুরু করে পুরো ক্যাম্পাসজুড়েই ছিলো গ্রামীণ সংস্কৃতির ছোঁয়া। উৎসবকে কেন্দ্র করে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়।
mohammadullahtusher@gmail.com