Published :
Updated :
বাংলাদেশে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে চাল আমদানি ব্যাপক হারে বেড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্য মজুত বাড়ানো ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কারণ দেশে অর্থনৈতিকভাবে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে চাল আমদানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯২.৪ মিলিয়ন ডলারে, যেখানে আগের বছর একই সময়ে তা ছিল মাত্র ১৬.৪ মিলিয়ন ডলার—অর্থাৎ ২,৯০০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে এ হার ছিল ২০৫১ শতাংশ।
খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, গত বছর তিন দফা ভয়াবহ বন্যা দেশের প্রধান ধান উৎপাদনকারী অঞ্চলে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। এর ফলে খাদ্য সংকটের ঝুঁকি এবং খুচরা বাজারে দামের অস্থিরতা রোধে সরকার বড় পরিসরে চাল আমদানি করে।
একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “বন্যাগুলো চাল উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। যাতে সরবরাহে কোনো ধাক্কা না লাগে ও ভোক্তারা সংকটে না পড়ে, সে জন্যই সরকারি খাদ্য মজুত জোরদার করা হয়েছে। তবে জানুয়ারি থেকে খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়ছে।”
২০২৪ সালের আগস্টে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়, যা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লাসহ পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলাকে প্লাবিত করে। প্রায় ৫৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং পাঁচ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত হন। আমন ও আগাম বোরো ধান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তবুও সরকার চলমান বোরো মৌসুমে ফসল উৎপাদন নিয়ে আশাবাদী। এ বছর বোরো ধানের উৎপাদন ২২.৬ মিলিয়ন টনে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার রোপণ মে মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা।
চাল মজুত নিশ্চিত করতে সরকার ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য বাড়িয়েছে। বোরো ধানের দাম ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৬ টাকা এবং চালের দাম ৪৫ টাকা থেকে ৪৯ টাকা প্রতি কেজি নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার ৩.৫ লাখ টন ধান ও ১৪ লাখ টন চাল সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে, যাতে একদিকে কৃষকদের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা যায় এবং অন্যদিকে সরকারি মজুত মজবুত হয়।
সরকার সাধারণত অন্তত ১০ লাখ টন চাল মজুত রাখে, যা খোলা বাজার বিক্রি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এবং জরুরি ত্রাণে ব্যবহৃত হয়। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এবার বাম্পার বোরো ফসল হলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানির ওপর নির্ভরতা কমবে।
তবে তারা সতর্ক করেছেন, আমদানি বাড়িয়ে ফসল ক্ষতির প্রভাব কিছুটা কমানো গেলেও এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ পড়েছে। একই সঙ্গে খুচরা বাজারে চালের দাম স্থায়ীভাবে বেশি থাকার পেছনে বিতরণ ব্যবস্থার অকার্যকারিতা ও মজুদদারির সম্ভাবনা রয়েছে।