Bangla
2 days ago

পিৎজা পাকায়া: আগ্নেয়গিরিতে তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক পিৎজা

পিৎজা পাকায়া
পিৎজা পাকায়া

Published :

Updated :

পিৎজা বর্তমানে আমাদের অনেকেরই অতিপ্রিয় মুখরোচক একটি খাবার। বন্ধুদের সঙ্গে পার্টিতে, পরিবারের সাথে কিংবা গভীর রাতে একাকী মুভি দেখার সময় পিৎজা যেন আমাদের সঙ্গী। তবে আমরা চিরাচরিত বেক করা পিৎজা খেয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেলেও একজন মানুষ এটিকে নিয়েগেছেন অন্য এক মাত্রায়।

গুয়াতেমালার রাজধানী গুয়াতেমালা সিটি থেকে প্রায় ২৫ মাইল দূরে স্যান ভিনসেন্ট গ্রামের কিনারে রয়েছে প্রায় ৮ হাজার ফুট উচ্চতার পাকায়া আগ্নেয়গিরি। পরিষ্কার রোদ-ঝলনলে দিনে পাহাড়ের চূড়া থেকে গুয়াতেমালা সিটি এবং এর আশেপাশের অন্যান্য আগ্নেয়গিরি আগুয়া, ফুয়েগো ও আকাতেনানগো দেখা যায়।

১৯৬৫ সাল থেকে পাকায়া আবার একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি হয়ে ওঠে। পাকায়াতে ধীর গতির লাভা প্রবাহিত হওয়ায় এটি তুলনামূলক কম বিপজ্জনক হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং তারপর থেকে পর্যটকদের চুম্বকের মতো আকর্ষণ করছে এই জায়গাটি।

বর্তমানে এটি গুয়াতেমালার পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছে। এই আগ্নেয়গিরির আরেকটি বিষয় হলো ২০১৯ সালে পাকায়া বিশ্বের প্রথম পিৎজা প্লেস হয়েছে যেখানে আগ্নেয়গিরির লাভাকে ওভেন হিসেবে ব্যবহার করে তৈরি করা হয় পিৎজা।

পিৎজা পাকায়ার প্রতিষ্ঠাতা, শেফ এবং একাউন্ট্যান্ট গার্সিয়া ম্যানসিলা নামের এক ভদ্রলোক। তিনি একজন ওয়ান ম্যান আর্মি। পাকায়া নিয়ে তিনি বিমুগ্ধ হয়েছিলেন ২০১০ সালে।

সে বছরে পাকায়ায় একটি ছোটখাটো অগ্নুৎপাত হয়। স্যান ভিনসেন্ট গ্রামের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া জ্বলন্ত পাথরের টুকরো দেখে গ্রামবাসীরা জীবনের ভয়ে পালিয়ে গেলেও গার্সিয়া ম্যানসিলা পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে এর ভয়ংকর সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য পাহাড়ের কাছাকাছিই থাকেন।

তার বেশ অনেকদিন পরে একদিন পাহাড়ের চূড়ায় ঘুরতে যাওয়ার সময় তিনি দেখেন যে একজন গাইড কিছু ট্যুরিস্টকে নিয়ে লাভার আগুনের কাছাকাছি মার্শম্যালো রোস্ট করছে।

এটি দেখার পর তিনি কৌতুহল থেকে বন্ধুদের জন্য লাভার আগুনে পিৎজা বেক করা শুরু করেন। সর্বশেষে ২০১৯ সালে তার এই লাভার আগুনে পিৎজা বেক করার কৌশল আয়ত্তে এলে শখটিকে ব্যবসায় পরিণত করেন তিনি।

গার্সিয়া ম্যানসিলা নিয়মিত পাকায়ার চূড়ায় প্রায় ৩০ কেজি ওজনের মালামাল নিয়ে যান তার পিঠে করে যার মধ্যে রয়েছে পিৎজা বানানোর সকল উপাদান, টেবিল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ।

আগ্রহী পর্যটক আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখেন।

গার্সিয়া ম্যানসিলা তাদের পিৎজার টপিং এর বিভিন্ন অপশন দেন যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মাংস এবং ভিগানদের জন্য রয়েছে ভেজিটারিয়ান পিৎজা টপিংস। গ্রাহকরা চাইলে আগে থেকেই অন্যান্য অতিরিক্ত টপিংস অর্ডার দিয়ে রাখতে পারেন যা গার্সিয়া লাভার আগুনে তৈরি করে খাওয়াবেন।

বাজার থেকে রেডিমেড ফ্রোজেন পিৎজা কিনে এনে বেক করার পরিবর্তে গার্সিয়া এখন সম্পূর্ণ পিৎজাটি নিজই তৈরি করেন। লাভার পাথরের উপর যখন বেক করার কারণে মাত্র কয়েক মিনিটই পিৎজা বেক হয়ে হয়ে যায়। কেননা, লাভার তাপমাত্রা প্রায় ১৮০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা যেকোনো ইলেকট্রিক বা গ্যাসের ওভেম থেকে কয়েকগুণ বেশি।

তবে গার্সিয়া ম্যানসিলার জীবন তার এই শখ পূরণে কেটে গেলেও বিপদহীন নয় এই পেশা। পর্যটক কিছুক্ষণ থেকে চলে গেলেও গার্সিয়াকে সেখানে থাকতে হয় সারাটি দিন। সারাদিন আগ্নেয়গিরির চূড়ায় থাকার ফলে দিন শেষে তার পা প্রচন্ড জ্বালাপোড়া করে ফলে বরফের ঠান্ডা পানিতে সারারাত পা ডুবিয়ে রাখতে হয় তাকে। এছাড়া আগ্নেয়গিরির গরম সালফারযুক্ত বিষাক্ত বাতাসে দিনের একটি বড় অংশ শ্বাস নিয়ে ব্যয় হয় যা স্বাস্থ্য আরও খারাপ করে তোলে।  

samiulhaquesami366@gmail.com

Share this news