Bangla
8 months ago

প্রাচীন মিশরে বিড়াল কেন এত সম্মান পেতো? 

প্রাচীন মিশরে বিড়ালকে দেয়া হতো দেবতুল্য সম্মান
প্রাচীন মিশরে বিড়ালকে দেয়া হতো দেবতুল্য সম্মান Photo : পিন্টারেস্ট 

Published :

Updated :

আমাদের অনেকেরই বাড়িতে পোষা বিড়াল আছে। আর এর বাইরে রাস্তাঘাটে তো চোখে পড়েই নানা রকম বিড়াল। গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে খুবই সমাদৃত আদুরে এই স্তন্যপায়ী প্রাণিটিকে দেখলেই মায়া হয়। তবে আজকের এই শান্ত-আদুরে বিড়ালগুলো কিন্তু একসময় এমন গৃহপালিত ছিলো না। বুনো বিড়ালকে প্রথম পোষ মানায় কারা- তা নিয়ে একটু মতভেদ আছে। কারও মতে, চীনের কৃষকেরা প্রথম বুঝতে পারেন যে, বাড়িতে বিড়াল পালন সম্ভব৷ আবার, কারও মতে, এই কৃতিত্ব প্রাচীন মিশরীয়দের। 

প্রথম পোষ মানানোর ঘটনা যারাই ঘটিয়ে থাকুন না কেন, প্রাচীন মিশরে শুধুমাত্র গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে নয়, বরং বিড়াল পেয়েছিল দেবতুল্য সম্মান। কিন্তু কী সেই কারণ- যার জন্য বিড়ালকে এতো সম্মান দেয়া হতো প্রাচীন মিশরে? চলুন, জেনে নেয়া যাক। 

আজ থেকে অন্তত চার-পাঁচ হাজার বছর আগের কথা। প্রাচীন মিশরের অর্থনীতি তখন কৃষিনির্ভর। ফসল ফলানোর আধুনিক প্রযুক্তি তখনও আবিষ্কৃত হয়নি, তাই দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে কৃষকেরা যে ফসল ফলাতেন, তা পরিমাণে অনেক বেশি ছিল না। এর ওপর আবার ছিল, ইঁদুর ও নানারকম পোকামাকড়ের উপদ্রব। বিষাক্ত সাপের কামড়ে অনেক মানুষ মারাও যেত। গ্রীষ্ম ও শীতে বুনো বিড়াল অতি গরম ও ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিত কৃষকদের বাড়িতে।

সোৎসাহে শিকার করতো ইঁদুর, সাপ ও অন্যান্য পোকামাকড়। এর ফলে ক্ষতিকর জীবের সংখ্যা কমে গিয়ে নিশ্চিত হতে থাকলো ফসলের সুরক্ষা। বিড়ালও হয়ে উঠলো সবার পছন্দের। মানুষের বাসা-বাড়ি হয়ে উঠলো তাদের স্থায়ী আবাসস্থল৷ বুনো বিড়ালেরা পোষ মানলো মানুষের, হয়ে উঠলো পরিবারের একজন। 

তবে শুধু এটুকুতেই শেষ নয়। বিড়াল একসময় পেয়ে গেল দেবতুল্য সম্মান। প্রাচীন মিশরীয়দের বিশ্বাস ছিলো, তাদের আরাধনাকৃত দেবী 'মাফদেত' তাদের বিষাক্ত ও ক্ষতিকর জীবদের হাত থেকে রক্ষা করেন। যেহেতু, এই উপকারটি বিড়ালই করে দিচ্ছিল, তাই প্রাচীন মিশরের অধিবাসীরা ধরে নিলেন, বিড়াল আসলে মাফদেত- এরই প্রাণিজ রূপ। অর্থাৎ,  মাফদেতের আরাধনা করলে তিনি বিড়ালের রূপ ধরে আসবেন অথবা বিড়াল পাঠিয়ে অধিবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবেন। 

এরপরে একসময় মাফদেত-এর জায়গায় প্রাচীন মিশরীয়রা শুরু করে আরেক দেবী 'বাসতেত' এর আরাধনা। মিশরীয় পূরাণে নারীর দেহে বিড়ালের মাথা বসিয়ে বাসতেতের প্রতিকৃতি আঁকা হতো। 

প্রাচীন মিশরে কৃষকদের পরম বন্ধু ছিলো বিড়াল, ছবি: সায়েন্সসোর্স

বাসতেত ছিলেন উর্বরতার দেবী। নারীদের সন্তান প্রসব ও অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করার দেবী মনে করা হতো তাকে। বিড়াল একসাথে কয়েকটি বাচ্চা জন্ম দেয়। তাই মনে করা হতো, বিড়াল বাসতেতের সঙ্গে সম্পর্কিত। 

একসময় বিড়াল শুধু আর সাধারণ মানুষের ঘরে গৃহপালিত হয়ে থাকেনি। বিড়াল স্থান করে নেয় রাজদরবারেও। রাজা-রাজড়ারা মারা গেলে তাদের কবরে দিয়ে দেয়া হতো তাদের দামি রত্ন, পোশাক, ছবি। এসব ছবিতে পরিবারের মানুষদের পাশাপাশি বিড়ালেরাও থাকতো।

মূলত, জীবিত অবস্থায় উপভোগ করেছেন, এমন ঘটনাসমূহ কবরেও ঘটবে- এমনই ছিল অভিজাতদের বিশ্বাস।

একসময় বিড়ালকে মমি করে কবরে দিয়ে দেয়ার চল শুরু হয়। মনে করা হতো, এতে করে মৃত ব্যক্তির আত্মা একসময় মমি করা বিড়ালের শরীর দখল করে এক নতুন জীবন পেয়ে যাবে। 

এছাড়া, সে সময় মিশরে আইন করে বিড়ালের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়। কোনো বিড়ালকে কেউ হত্যা করলে, তার শাস্তি ছিলো মৃত্যুদণ্ড। কোনো বাড়িতে বিড়াল মারা গেলে পরিবারের সবাই শোকপ্রকাশে নিজেদের ভ্রু ফেলে দিতো। আবার ভ্রু উঠলে শোকপালন সমাপ্ত হতো। 

সে সময় রাজদরবারে দেবদূত হিসেবে সম্মান দেয়া হতো বিড়ালকে। তাই বিড়াল পোষা ও তাকে সম্মান দেয়া ছিলো দেবতাদের তুষ্ট করার একটি উপায়। রাজদরবারের অংশ হিসেবে বিড়ালকে পরানো হতো স্বর্ণখচিত পোশাক ও অলংকার।  

প্রাচীন মিশরীয়দের বিশ্বাস, দেবতারা বিভিন্ন প্রাণির রূপ নিতে পারেন। আর এক্ষেত্রে সবার আগে বিবেচনা করা হতো বিড়ালকে। তারা মনে করে, দেবতাদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রয়েছে বিড়ালের। বিড়াল মমি করে কবরে দেয়ার ব্যাপারেও উদ্দেশ্য ছিলো দেবতাদের সন্তুষ্ট করা। অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন দেবতাদের পার্থিব প্রতীক হয়ে ওঠে বিড়াল। তার সঙ্গে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে বিড়ালের উপকারী ভূমিকা তো ছিলোই। তাই প্রাচীন মিশরে বিড়াল পেয়েছিল দেবতূল্য সম্মান।

mahmudnewaz939@gmail.com

Share this news