Bangla
13 days ago

পড়াশোনার পাশাপাশি ইন্টার্নশিপ কেন প্রয়োজন?

Representational image
Representational image

Published :

Updated :

আজকাল চাকরির বাজারে চাকরির বিজ্ঞাপণ দেখলেই দেখা যায় নিয়োগকারীরা চাকরিপ্রার্থীদের কাছে কাজের অভিজ্ঞতা চাইছেন। কিন্তু একজন স্নাতক কিংবা সদ্য স্নাতকোত্তরের তো চাকরির অভিজ্ঞতা থাকার কথা না। এজন্য অনেকেই মন খারাপ করে আবেদনপত্র জমাই দেন না আর। কিন্তু এই মন খারাপের সমাধান রয়েছে ইন্টার্নশিপে।  

ইন্টার্নশিপ কী?

ইন্টার্নশিপ বিষয়টির সাথে এখনো আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের এক বিশাল অংশ ভালোভাবে পরিচিত নয়। ইন্টার্নশিপ হলো একটি প্রশিক্ষণ পর্ব, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ শেখা। দক্ষতা বৃদ্ধি ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যও কাজ করে একজন শিক্ষার্থী এই ইন্টার্নশিপের সময়। নব্য স্নাতককে চাকরিজীবনের পরিবেশের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেও সহায়তা করে এই প্রশিক্ষণ পর্ব। যারা ইন্টার্নশিপ করে তাদেরকে বলা হয় ইন্টার্ন বা শিক্ষানবিশ।

পড়াশোনার পাশাপাশি ইন্টার্নশিপ কেন প্রয়োজনীয়? 

এই সময়টাতে  কর্মক্ষেত্রে হাতে-কলমে কাজ শেখার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং তারা একটি নির্দিষ্ট চাকরির বিষয়ে প্রাথমিক অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকে। কয়েক মাস একটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে কর্মরত থাকার ফলে তারা তাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবন কেমন হতে পারে তার একটি ছোট অভিজ্ঞতা হয়। ফলে প্রস্তুতি নিতে পারে। এই প্রশিক্ষণ শিক্ষার্থীদের পেশাদারিত্ব, নেতৃত্ব, কৌশল ও দলগতভাবে কাজ করতে শেখায়। 

বর্তমানে আমাদের দেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে স্নাতক পর্যায়ের শেষ বর্ষে কিংবা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ইন্টার্নশিপ বিষয়টিকে পাঠ্যক্রমের বাধ্যতামূলক অংশ হিসেবেই যুক্ত করা হয়েছে , এর অভিজ্ঞতা ও শিখনফলের ওপর একটি কোর্সের সমমান নম্বর বরাদ্দ থাকে। ইন্টার্নশিপ শেষে শিক্ষার্থীদের প্রতিবেদন জমা দিতে হয়, নতুবা স্নাতক সনদ পাওয়া কঠিন। 

ইন্টার্নশিপের প্রকারভেদ 

কাজের সময়ের ওপর ভিত্তি করে, ইন্টার্নশিপকে পার্ট-টাইম এবং ফুল টাইম; এই দুইভাগে ভাগ করা যায়। আবার বেতন প্রদানের ওপর নির্ভর করে দুই ধরনের ইন্টার্নশিপ হয়। পেইড অর্থাৎ বৈতনিক ইন্টার্নশিপে ইন্টার্নকে মাসিক বা এককালীন একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাতা প্রদান করা হয়। আন-পেইড  অর্থাৎ অবৈতনিক ইন্টার্নশিপের ক্ষেত্রে কোনো ভাতা বা বেতন প্রদান করা হয় না। 

আবার কাজের ধরন অনুযায়ী দুই ধরনের ইন্টার্নশিপ হয়ে থাকে,  প্রজেক্ট ভিত্তিক ইন্টার্নশিপ ও সাধারণ  ইন্টার্নশিপ। কোনো নির্দিষ্ট প্রকল্পের অধীনে কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব ইন্টার্নশিপ প্রদান করে  সেটি হচ্ছে ‘প্রজেক্ট বা প্রকল্প ভিত্তিক ইন্টার্নশিপ।’ আর কোনো প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ও সাধারণ কাজের জন্য দেয়া হয় সাধারণ (রেগুলার) ইন্টার্নশিপ। 

আবেদনের সময় যা মনে রাখা উচিত 

ইন্টার্নশিপে আবেদন করার ক্ষেত্রে নিজের কাজ করার আগ্রহ, এবং নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার সাথে ইন্টার্নশিপের ক্ষেত্রটি কতটা  মানানসই প্রথমেই লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। যেমনঃ কেউ যদি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি আগ্রহী হয় কিংবা ব্যবসায়শিক্ষা বিষয়ে পড়ালেখা করে থাকে, তাহলে তার জন্য বিভিন্ন অলাভজনক এনজিও প্রতিষ্ঠান বা তত্ত্বীয় গবেষনামূলক প্রতিষ্ঠান এর চেয়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যুক্ত হওয়া ভালো। পড়ালেখার বিষয়ের থেকে ভিন্ন ধরনের ক্ষেত্রেও ইন্টার্নশিপ করা যায়, তবে পড়ালেখার ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত এবং সাদৃশ্যপূর্ণ হলে তা ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতা হিসেবে আরো বেশি ফলপ্রসূ হয়। 

এছাড়া যেকোনো প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ শুরু করার আগে জেনে নেয়া ভালো যে ইন্টার্ন বা শিক্ষানবিশ নিয়োগের ক্ষাত্রে তাঁদের প্রাধান্যের বিষয়গুলো কি কি।  যেসব প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যৎ নিয়োগের ক্ষেত্রে ইন্টার্নদের অগ্রাধিকার দেয় অবশ্যই এমন প্রতিষ্ঠানকে বেছে নেয়া উচিত। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় সব সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক, মোবাইল ফোন অপারেটর, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসসহ বহু প্রতিষ্ঠান ইন্টার্ন নিয়োগ দিচ্ছে। 

বছরের বিভিন্ন সময়ে এইসব প্রতিষ্ঠান ইন্টার্নশিপের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক, লিংকডইন এমনকি ইনস্টাগ্রামেও বিভিন্ন পোস্টে তারা এই শূন্য পদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা চাকরির সিভিতে উল্লেখ করার সুযোগ রয়েছে। তাই কর্মক্ষেত্রে নেমে পড়ার আগে ইন্টার্নশিপ করলে সিভিতে ‘Experience’ সেকশনে এটি যুক্ত করা 

ইন্টার্নশিপের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা বা গুণাবলি  

একজন ইন্টার্নের জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ তা হলো তার শেখার আগ্রহ এবং তার কাজের প্রতি দায়িতবশীলতা । সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করা, ভুল হলে তা সহজভাবে মেনে নিয়ে সংশোধন করা, এবং নতুনত্ব, বৈচিত্র্যকে সহজভবে গ্রহণ করা একটি প্রশংস্নীয় গুণ। 

ইন্টার্নশিপ নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে সাধারণ কারিগরি দক্ষতা অপরিহার্য বলা চলে। এছাড়া বাংলা ও ইংরেজিতে কথা বলতে পারার পাশাপাশি কম্পিউটারে টাইপ করার দক্ষতাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেট ও মাইক্রোসফট অফিস সফটওয়্যার বরতমানে চাকরির বাজারে অত্যাবশ্যকীয় দক্ষতা। 

ইন্টার্নশিপ চলাকালে কি কি কাজ প্রতিদিন করছেন, শিখছেন, শিক্ষার্থীরা সেগুলো জার্নালের মতো করে নোট করে রাখতে পারেন। পরবর্তীতে শিখনফল মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এই নোটগুলো সহায়ক হতে পারে। 

অনেক সময়ই কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ একটু কঠিন হতে পারে, উচ্চপদে আসীন নির্দেশনা্দানকা্রী মানুষজন একটু কড়া হতে পারেন, কিংবা হতে পারে কিছু সহকর্মী যথেষ্ট বন্ধুসুলভ নন। এসব বিষয়ে মনোক্ষুণ্ণ হয়ে হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না, নিজের ওপর আস্থা রেখে ধৈর্য ধরে আরোপিত দায়িতবগুলো শেষ করতে হবে। 

নেতিবাচক দিক ও চ্যালেঞ্জসমূহ 

স্নাতক স্নাততকোত্তরে অধ্যয়নরত একজন শিক্ষার্থীর জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রের চাপ সামলে ওঠা। আমাদের দেশে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাসের সময়সূচী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অফিস সময়সূচী, একই কিংবা কাছাকাছি সময়ে। এজন্য ক্লাসের পাশাপাশি অফিসে নিয়মিত উপস্থিত থাকার শর্ত শিক্ষারথীদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে যায়। 

আবার ইন্টার্নশিপ শেষে শিক্ষার্থীকে ফুল টাইম চাকরির সুযোগ দেয়াই হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই এবং অস্থায়ী চাকুরে হওয়ায় অনেক সময় অতিরিক্ত কাজ প্রদান করা হয় ইন্টার্নদের। নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। 

ইন্টার্নশিপে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও এগুলোর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারলে ভবিষ্যত কর্মজীবনে এই অভিজ্ঞতা হতে পারে খুবই উপকারী। বর্তমান যুগে চাকরির প্রতিযোগিতায় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি। ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে ইন্টার্নশিপের প্রয়োজনীয় তথ্য সংরহ হয়েগেছে সহজ। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং ইন্টার্নশিপের  বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর  দৃষ্টিপাত প্রয়োজন। 

[email protected]

 

Share this news