Published :
Updated :
প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আবহাওয়ার দরুন ইউরোপ থেকে সরে গিয়েছিলেন আদিম মানুষদের দল। প্রায় দুই লাখ বছর তারা ছিলেন এখান থেকে দূরে। তবে নতুন এক গবেষণা বলছে, তারা অভিযোজিত হয়েছিলেন, মানিয়ে নিয়ে আবার ফিরে এসেছিলেন এখানে।
বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন সমুদ্রের তলদেশে জমা পলিমাটি। ১.১ মিলিয়ন বছর আগে জমা পলি পরীক্ষা করে তারা বলছেন, সে সময় স্বাভাবিকের তুলনায় তাপমাত্রা কমে গিয়েছিলো প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তাদের মতে, আমাদের আদিম পূর্বসূরিরা এমন আবহাওয়ায় টিকে থাকতে পারতেন না। তাদের শীত নিবারণের গরম কাপড় বা অন্য কিছুই ছিলো না।
সমীক্ষাটি বলছে, ইউরোপে ধারাবাহিকভাবে মানুষ বাস করেছে প্রায় দেড় মিলিয়ন বছর ধরে৷
পর্তুগালের লিসবন শহরের উপকূলে সাগরের তলদেশে জমা পলি পরীক্ষা করে অতি ঠাণ্ডা আবহাওয়ার প্রমাণাদি পাওয়া গেছে। প্রতি বছর জমতে থাকা পলির স্তর থেকে সাগরের অবস্থা বুঝতে পারা যায়৷ এছাড়া, এখানে থাকা পরাগরেণুর উপস্থিতি উদ্ভিদ জন্মানোর প্রমাণ দেয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে থাকা 'আইবিএস সেন্টার ফর ক্লাইমেট ফিজিক্স' এর গবেষকরা পলি থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত ব্যবহার করে কম্পিউটারের সাহায্যে সিমুলেশন চালান। তারা দেখেন ইউরোপের বহু জায়গায়, এমনকি অপেক্ষাকৃত উষ্ণ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলেও তাপমাত্রা হুট করে নেমে গিয়েছিলো হিমাঙ্কের নিচে।
গবেষকদের দলটির সমন্বয়ক অধ্যাপক অ্যালেক্স টিমারম্যান-এর মতে,' আদিম মানুষের জন্য এমন পরিস্থিতি সামলানো সহজ ছিলো না। সে সময় আগুন জ্বাললেও তা তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন, এমন কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই। কাজেই ইউরোপের এই ভয়াবহ ঠাণ্ডায় বেঁচে থাকা ছিলো তাদের জন্য খুব কঠিন।'
ইউরোপে থাকা সবচেয়ে প্রাচীন মনুষ্য নমুনাটি ১.৪ মিলিয়ন বছর আগের, উদ্ধার করা হয়েছে স্পেন থেকে। তাদের ধারণা, আফ্রিকার হোমা ইরেক্টাস প্রজাতিটি দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া হয়ে ইউরোপে পৌঁছে।
অধ্যাপক ক্রনিস জেদাকিস এর নেতৃত্বে একদল গবেষক জীবাশ্ম পরীক্ষা করে দেখতে চাইছেন, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হাওয়া আসলেই ইউরোপ থেকে আদিম মানুষদের সরিয়েছিলো কিনা।
তারা প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখেছেন, ১.১ মিলিয়ন বছর আগে স্পেনে মানুষের অস্তিত্ব ছিলো। এরপর থেকে ৯ লক্ষ বছর আগে পর্যন্ত আর মানুষের চিহ্ন পাওয়া যায়না।
ইংল্যান্ডের নরফোকের হাপিসবার্গে পাওয়া যায় কিছু সুপ্রাচীন পায়ের ছাপ৷ তবে জীবাশ্ম না থাকায় তাদের প্রজাতিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে অন্য কিছু অঞ্চলের প্রমাণাদি থেকে এদের আরেকটু উন্নত হোমা অ্যান্টিসেসর বলে মনে হয়।
সেই তুমুল ঠাণ্ডা হাওয়ার যুগের একসময় অবসান ঘটে৷ তবে এরপরও আজকের ইউরোপের চেয়ে বেশ খানিকটা ঠাণ্ডা ছিলো সেখানে। ব্রিটিশ মিউজিয়ামের অধ্যাপক নিক অ্যাস্টন এর মতে, 'আদিম মানুষদের সেই প্রজাতি একসময় অভিযোজিত হয় ও সেখানে মানিয়ে নিতে শিখে যায়। এই মানিয়ে নিতে গিয়ে মানুষের শরীরে চুল ও লোম বৃদ্ধি পায়, তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষার্থে দেহে চর্বি ও শর্করা জমতে থাকে।'
এর ফলে শিকার করা ও এর মাংস সংরক্ষণ, বস্ত্র ও বাসস্থানের উন্নতি ঘটাতেও সচেষ্ট হয় মানুষ।
ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের অধ্যাপক ক্রিস স্ট্রিঙ্গার মনে করেন, ' এসব উন্নতির ফলে ইউরোপের চরম ঠাণ্ডা অঞ্চলগুলোতে মানিয়ে নিয়ে টিকে যেতে থাকে মানুষ। ইউরোপকে তাই মানব অভিযোজনের ল্যাবরেটরি হিসেবে দেখা যায়।'
তিনি যোগ করেন, ' ইউরোপে উন্নততর প্রজাতির প্রত্যাবর্তন ঘটে, হয় তারা অভিযোজনের ফলে এখানে টিকে থাকতে শিখে যায়, নয়তো ভিন্ন কোনো প্রজাতি আসে, যারা এদের চেয়ে উন্নততর ও প্রতিকূল অবস্থায় টিকে থাকতে আরো বেশি সক্ষম।'
হাপিসবার্গে প্রাপ্ত প্রজাতিটি বিবর্তিত হয়ে নিয়ান্ডারথালের রূপ পেয়েছিলো বলে মনে করা হয়। সে প্রায় ৪ লক্ষ বছর আগেকার কথা।
মানুষের বর্তমান প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্স এর উৎপত্তি হয় প্রায় ৪ লক্ষ বছর আগে, আফ্রিকায়। ইউরোপে তারা স্থায়ী হয় প্রায় ৪২,০০০ বছর আগে। খুব অল্প সময়ের জন্য হয়তো নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গে সহাবস্থান হয়েছিলো স্যাপিয়েন্সদের। নিয়ান্ডারথালেরা বিলুপ্ত হয় ৪০,০০০ বছর আগে।
mahmudnewaz939@gmail.com