পর্যটন শিল্পে সম্ভাবনাময় গাবরাখালী গারো পাহাড় ও পর্যটনকেন্দ্র
Published :
Updated :
ময়মনসিংহ শহরের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় ভারতের সীমান্ত ঘেঁষে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড়। হালুয়াঘাটে তৈরী করা হয়েছে গাবরাখালী গারো পাহাড় ও পর্যটনকেন্দ্র। এপারে বাংলাদেশ, ওপারে ভারত। পাহাড়, লেক,বন আর সীমান্ত এই মিলে গাবরাখালী। এখান থেকে দুই দেশের সীমান্ত দেখার সুযোগ মেলে। গাবরাখালীতে একসময় হাজং ও বানাই জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। বিশাল লেকের পাড়ে বসে কিংবা পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে সীমান্তের ওপারের নৈসর্গিক দৃশ্য চোখ ও মন জুড়ায়।
সরকারি ভূমি সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে স্থানীয় বিনিয়োগের মাধ্যমে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন এবং হালুয়াঘাট উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে এ পর্যটনকেন্দ্রটি। ২০১৯ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান গাবরাখালীতে পর্যটনকেন্দ্র করার উদ্যোগ নেন। করোনার কারণে কিছুটা বিলম্ব হলেও ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে পুরোদমে কাজ শুরু হয়। মাস্টারপ্ল্যান ধরে চলছে পর্যটনকেন্দ্রটির আরও সম্প্রসারণ কার্যক্রম।
১২৫ একর জায়গা জুড়ে ছোট-বড় ১৬৭টি টিলা রয়েছে এখানে। কোনোটি প্রায় ৭০ ফুট আবার কোনোটি ২০০ ফুট উঁচু। এদের ওপর থেকে দেখা মেলে ভারতের সীমান্ত ও মেঘালয়ের উঁচু উঁচু পাহাড়।
টিলাগুলো স্থানীয়দের কাছে নানান নামে পরিচিত।চিতাখলা টিলা, যশুর টিলা, মিতালি টিলা, বাতাসি টিলাসহ আছে বাহারি সব নাম। টিলাগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে মেঘালয় রাজ্যের মানুষের জীবন ও জীবিকার দৃশ্য খুব কাছ থেকে দেখা যায়।
সন্ধ্যায় ভারতের সীমানার দিকে নীলাভ আলোর বিচ্ছুরণ দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। এই পর্যটন কেন্দ্রকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য প্রবেশ মুখেই রয়েছে সুউচ্চ পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলের মনোরম ঝরণা ধারা। এখানে আছে পিকনিক স্পট, প্যাডেল বোট, শিশু পার্ক, ন্যাচারাল পার্ক, গারো জাদুঘর, রেষ্ট হাউজ, প্রদর্শনী খামার, কাঠের ব্রিজ, কানেকটিং ব্রিজ, ফুড পার্ক ও জারামবং, ফ্রিংতালসহ পাহাড়ের উপরে রয়েছে বিনোদন প্রেমীদের বিশ্রামস্থল।
পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পাহাড়ে রোপণ করা হয়েছে কাজুবাদাম, আগর (সুগন্ধি), চা, কফি গাছ। পাহাড়ের টিলায় ওঠার জন্য করা হয়েছে স্টিলের সিঁড়ি, গাড়ি রাখার জন্য রয়েছে গাড়ি পার্কিং জোন। টিলায় বসবাসরত স্যাটেলারদের জন্য উপজেলা প্রশাসন বিশেষ ব্যবস্থা করে দিয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সমবায়ের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার জন্য গৃহীত হচ্ছে আয় বৃদ্ধির নানান কর্মকাণ্ড। পাশাপাশি স্থানীয় বেকার যুবকদের উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজের আওতায় আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই পর্যটন কেন্দ্রটি ঘিরে বিভিন্ন দোকানের পশরা সাজিয়ে বসেছেন স্থানীয়রা।
ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড়ের অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সব বয়সের মানুষকে। পিকনিক স্পটটি শুধু পর্যটনকেন্দ্র নয়, বরং এটিকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় মানুষের আয়ের উৎস। এখানে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। চারপাশে সমতল বেষ্টিত পাহাড়, পাখিদের কোলাহল ও দৃষ্টিনন্দন পানির দৃশ্য যেন শীতল করে দেয় মনকে।
তবে বেশকিছু সমস্যাও রয়েছে এই পর্যটন কেন্দ্রে। এখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই যে কারণে যোগাযোগ অপ্রতুল। ছোট ছোট চা-বিস্কুট খাওয়ার দোকানপাট থাকলেও নেই ভালো মানের খাবার। বিশুদ্ধ পানি নেই; বোতলের পানি খেতে হয় পর্যটকদের।
পর্যটন কেন্দ্রের পাশে কুয়া রয়েছে। কুয়ার পানি ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই । এই পর্যটন কেন্দ্র দেখতে আসা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আকমাল হোসেন শাকির বলেন, “এখানে দেখার মতো অনেক কিছু আছে। পাহাড়ের ওপরে দাঁড়ালে ভারতের ভেতরের দৃশ্য দেখা যায়। কিন্তু এখানে বেশকিছু সমস্যা আছে। আসার রাস্তার অবস্থা একদম ভালো না। ঢোকার পর থেকে মোবাইলে নেটওয়ার্ক নেই। তাই কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। থাকার মতো ব্যবস্থা নেই। এই সমস্যাগুলো সমাধান হলে পর্যটনে অপার সম্ভাবনা রয়েছে।”
পার্কটি খাস জমির ওপর নির্মিত হওয়ায় সরকারের রাজস্ব আদায় হচ্ছে। এখানকার অপরূপ সৌন্দর্য আকৃষ্ট করে সবাইকে। সবুজ প্রকৃতির টানে শহরের কোলাহল আর অবসাদ কাটাতে মানুষ ছুটে আসে গাবরাখালী পাহাড়ে, হারিয়ে যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে।
বাংলাদেশের যেকোন স্থান থেকে গাবরাখালী পর্যটন কেন্দ্রে আসতে চাইলে প্রথমে ময়মনসিংহ শহরের শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ মোড়ে আসতে হবে। ব্রীজ থেকে বাসে করে হালুয়াঘাট উপজেলা বাসস্ট্যান্ডে আসতে হবে। হালুয়াঘাট থেকে ১৪ কি.মি উত্তর-পূর্বে অবস্থিত হওয়ায় বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস, সিএনজি অথবা যে কোনো যানবাহনে করে গোবড়াকুড়া হয়ে বর্ডার রোডে খুব সহজেই আসা যায় গাবরাখালী গারো পাহাড় ও পর্যটনকেন্দ্রে।
mohammadullahtusher@gmail.com