Bangla
a year ago

রাজশাহী অঞ্চলে কেন আম ও লিচুর অধিক ফলন হয়?

Representational image
Representational image

Published :

Updated :

মধুমাস শেষ হয়েছে কিছুদিন হলো। তবে মজার ব্যাপার হলো এখনো বাজারে দিব্যি আধিপত্য বজায় রেখেছে মধুমাসের ফলসমূহ। এ যেন রবি ঠাকুরের সে বিখ্যাত উক্তি "শেষ হইয়াও হইলো না শেষ।”

বাজারে এখনো দেখা যাচ্ছে ফলের রাজা আম, জাতীয় ফল কাঁঠাল, কিংবা রসালো ফল লিচু। এর মধ্যে কাঁঠাল বাংলাদেশের সর্বত্র উৎপাদিত হলেও আম ও লিচুর জন্য বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলের সুনাম দেশব্যাপী।

মূলত রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নঁওগা এবং নাটোর জেলা এ দুইটি ফলের জন্য বিখ্যাত। এখন প্রশ্ন হলো কেন বাংলাদেশের এ জেলাগুলোতে সুস্বাদু আম ও লিচুর অধিক ফলন দেখা যায়?

এই প্রশ্নের সর্বোৎকৃষ্ট উত্তর হলো এই অঞ্চলসমূহের মাটি এবং আবহাওয়া। প্রথমে মাটির বিষয়ে আলোচনা করা যাক। রাজশাহী অঞ্চলের মাটি আম ও লিচুর জন্য অনুকূল হওয়াতে এসব অঞ্চলে আম ও লিচুর বাম্পার ফলন দেখা যায়।

মুকুল আসার সময় একটি নির্দিষ্ট আবহাওয়ায় সেটি বিশেষ কুড়ি ফুলে রূপান্তরিত হয়। অন্যথায় সে মুকুল পাতায় পরিণত হয়। রাজশাহী অঞ্চলের আবহাওয়া অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় আম উৎপাদনে অনুকূল হওয়ায় এখানে বেশি পরিমাণ মুকুল কুড়িতে রূপান্তরিত হতে পারে। এতে করে একদিকে যেমন আমের অধিক ফলন হয় ঠিক তেমনি আমের গঠনও তুলনামূলকভাবে অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় পরিপক্ক হয়ে থাকে।

অন্যদিকে আম পাকার সময় সূর্যের আলোর মাধ্যমে আমে সুক্রোজ নামক এক ধরনের পদার্থ তৈরি হয় যা আমকে মিষ্টি করে তোলে। কিন্তু এসময় যদি বৃষ্টি হয় কিংবা আকাশ মেঘলা থাকে তাহলে সুক্রোজের উৎপাদন ব্যাহত হয় যা আমকে সুমিষ্ট করে তুলতে বাধা প্রদান করে। আমরা জানি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কিংবা পূর্বাঞ্চলের তুলনায় উত্তরবঙ্গে বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হয়। আর এতে করে বেশি সূর্যের আলো পাওয়ার দরুন আমের সুমিষ্ট স্বাদ রাজশাহী অঞ্চলে অক্ষুণ্ণ থাকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশে প্রায় এক হাজার জাতের আম রয়েছে যার মধ্যে কিছু আমের জাত আছে যেগুলো অঞ্চলভেদে অধিক ফলন দেয়। রাজশাহী অঞ্চলের বিখ্যাত আমের জাতগুলো হলো মোহনভোগ, রাজভোগ, ক্ষীরভোগ, ফজলি, গোবিন্দভোগ, হাঁড়িভাঙা ইত্যাদি।

আর এই জাতগুলো গুনে-মানে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও সুনাম কুড়িয়েছে যা রাজশাহী অঞ্চলকে শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্ব দরবারে সুপরিচিতি এনে দিয়েছে।

এবার আসা যাক লিচুর প্রসঙ্গে। লিচু মূলত অবউষ্ণ জলবায়ুতে সবচেয়ে ভালো ফলন দেয়। মূলত যেসব অঞ্চলে শীতকালে প্রচুর শীত পড়ে কিন্তু তুষারপাত হয় না এবং গ্রীষ্মকালে উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজ করে সেসব অঞ্চলে লিচুর অধিক ফলন হয়।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতকালে প্রচন্ড শীত অনুভূত হয় কিন্তু তুষারপাতের মতো ঘটনা সেখানে ঘটে না। অন্যদিকে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় রাজশাহী অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা কম হয়ে থাকে। আর এতে করে লিচু উৎপাদনের অনুকূল আবহাওয়া বজায় থাকে বিধায় রাজশাহী অঞ্চলে লিচুর উৎপাদন ভালো হয়।

গ্রীষ্মকালে একইসময়ে শুষ্ক আবহাওয়া এবং বৃষ্টিপাত হলে লিচু ফেটে যায় এবং উৎপাদন ব্যাহত হয়। তবে এ ধরনের পরিস্থিতি দেশের উত্তরাঞ্চলে কম দেখা যায় যা লিচু উৎপাদনের জন্য অনুকূল।

অন্যদিকে লিচু স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া পছন্দ করলেও জলাবদ্ধতায় লিচু গাছের ফলন ব্যাহত হয়। বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে জলাবদ্ধতার ঘটনা তুলনামূলকভাবে কম ঘটে এবং মাটিও প্রাকৃতিক কিংবা কৃত্রিম উপায়ে স্যাঁতস্যাঁতে রাখা সম্ভব। আর তাই রাজশাহী অঞ্চলে লিচুর ফলন যেমন বেশি হয়, ঠিক তেমনি স্বাদেও অত্যন্ত সুস্বাদু হয়ে থাকে।

tanjimhasan001@gmail.com

Share this news