Bangla
a day ago

রিজার্ভ বেড়ে ২৭.৪১ বিলিয়ন ডলার, অর্থনীতিতে স্বস্তির বার্তা

Published :

Updated :

এবছর এপ্রিলের শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। গত ২০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ এই রিজার্ভ বাংলাদেশের অর্থনীতি্র জন্য কিছুটা স্বস্তিদায়ক, যদিও সম্প্রতি বিভিন্ন খাতে বড় অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, এটি ২০২৩ সালের আগস্টের পর সর্বোচ্চ রিজার্ভ, তখন রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার।

সরকার সম্প্রতি বড় অঙ্কের বৈদেশিক বকেয়া বিল পরিশোধ করলেও রিজার্ভ উর্ধ্বমুখী থেকেছে, যা স্থিতিশীল পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দেয়।

এপ্রিল শেষে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ (এনআইআর) ১৬ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও আমদানি আদেশ ও পরিশোধও বাড়ছে, তবুও রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধিই রিজার্ভ বৃদ্ধির মূল কারণ।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার এবং আইএমএফ-এর বিপিএম-৬ মানদণ্ডে ২২ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা জানান, এত বড় বৈদেশিক বকেয়া পরিশোধ করেও রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা 'একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন'।

তিনি বলেন, "আর এই পুনরুদ্ধার এসেছে আইএমএফ-এর কোনো সহায়তা ছাড়াই।" 

এর একদিন আগেই সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেছিলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি আর আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক-নির্ভর নয় কারণ তহবিল এখনও ঋণ ছাড়ের বিষয়টি অমীমাংসিত রেখেছে। 

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মানসুর দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নয়নের লক্ষ্যে বিদেশি বকেয়া পরিশোধের নির্দেশ দেন।

এর অংশ হিসেবে কাতার এনার্জি ও শেভরনের মতো প্রতিষ্ঠানকে পাওনা পরিশোধ করা হয়। বড় অঙ্কের অর্থ পরিশোধ সত্ত্বেও রিজার্ভ বেড়েই চলেছে।

রেমিট্যান্স ও রপ্তানিকারকদের অবদানের স্বীকৃতি দিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, "বর্তমানে যেভাবে রেমিট্যান্স আসছে, তাতে মে মাসে ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় পরিশোধ করেও রিজার্ভ ২৫ বিলিয়নের ওপরে থাকবে।" 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত প্রবাসীরা ২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছেন। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২৪ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (সর্বোচ্চ ছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার)।

রপ্তানির দিক থেকেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে আয় হয়েছে ৩৭ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি।

এই ইতিবাচক আবহে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, তারা জুন ২০২৫-এর সময়সীমার দুই মাস আগেই ৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক দায় পরিশোধ করেছে। শুধু মার্চ ও এপ্রিল মাসেই ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের চার ধরনের পাওনা শোধ করা হয়েছে।

এদিকে আমদানি কার্যক্রমও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে এলসি পরিশোধের মাধ্যমে আমদানি বেড়েছে ৪ দশমিক ০৭ শতাংশ, যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে নতুন এলসি খোলার হার বেড়েছে ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ, যার পরিমাণ হয়েছে ৪৭ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার।

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসকে বলেন, "বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ধারাবাহিক বৃদ্ধি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে দেশের বহির্বাণিজ্য খাত (ব্যালেন্স অফ পেমেন্টস) পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে।" 

তিনি আরও বলেন, আমদানি বাড়লেও রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় যে হারে বাড়ছে, তা রিজার্ভের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক ও উৎসাহব্যঞ্জক।

Share this news