Published :
Updated :
কাঁটাবনে 'দ্রু ক্যাফে' একটা ছোট কফি শপের মালিক আল আসাদুল করিম শিশির। কফি বানাতে বানাতে, কাস্টমারকে কাপ এগিয়ে দিতে দিতে কিংবা ক্যাশের টাকা গুনতে গুনতে তিনি স্বপ্ন দেখেন- সিনেমা বানানোর। জীবনের ঘেরাটোপে আটকে পড়া মানুষটির সন্দেহ হয়- তিনি সিনেমাকে ভালোবেসেছেন, বিনিময়ে সিনেমা কি তাকে ভালোবেসেছে! নিজের সাথে বোঝাপড়ায় নামেন তিনি। এই যে একজনের সিনেমায়, আরেকজনের সিনেমা নির্মাণে না পারার দীর্ঘশ্বাস ওঠে আসা- এটাকেই বলা যেতে পারে এই ছবির বিশেষত্ব।
ছবিটির নাম ওয়েটিং ফর সিনেমা। পরিচালক সাঈদী হাসান রাব্বি। প্রামাণ্যচিত্রটি 'চতুর্থ বাংলাদেশ স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসব'-এ সেরা প্রামাণ্যচিত্র ও সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতে নিয়েছে।
দশ মিনিট ছয় সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের চলচিত্রটিতে বলা হয়েছে সিনেমা বানানোর স্বপ্ন দেখে বেঁচে থাকা এক ছোট কফি শপের মালিক আল আসাদুল করিম শিশিরের গল্প। একদিকে তিনি একজন ভালো স্বামী, পিতা; অন্যদিকে তিনি এখনো সিনেমা নির্মাণের স্বপ্ন বোনা মানুষ। জীবনের ঘেরাটোপে আটকে পড়া মানুষটির সন্দেহ হয়।
প্রামাণ্যচিত্রটিতে উঠে এসেছে তার জীবনেরই ঘটনাপ্রবাহ। ছোট থেকেই সিনেমা দেখতেন তিনি। রুবেলের মার্শাল আর্টভিত্তিক অ্যাকশন ফিল্ম, ব্রুস লি বা জ্যাকি চ্যানের মার্শাল আর্টভিত্তিক সিনেমা কিংবা ভিসিআরে দেখা হিন্দি সিনেমা- এসবকিছুই তাকে আগ্রহী করে তোলে সিনেমার প্রতি।
এরপর একদিন সিনেমার টানে বাড়ি ছাড়েন তিনি। পাড়ি দেন মুম্বাই। তারপর ঘটনাচক্রে দেশে ফিরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্ক্রিপ্টরাইটিং কোর্স, সেকেন্ড হওয়া।
প্রসঙ্গক্রমে এসেছে প্রয়াত লেখক ও নির্মাতা তারেক শাহরিয়ার ও মদন গোপাল সিংয়ের কথাও৷ তাদের কাছ থেকে অনেককিছু শিখেছেন তিনি। তারপর ইরানের নানা ছবি, হুলিও মেডেমের 'লাভার্স অব দ্য আর্কটিক সার্কেল', 'সেক্স অ্যান্ড লুসিয়া'- এর মতো সিনেমা দেখে তিনি পড়ে গেলেন সিনেমার প্রেমে।
কিন্তু একটি সিনেমা বানানোর স্বপ্ন তার আর পূরণ হয়নি। কারণ, বাজার অভিমুখী সিনেমা বানাতে তিনি চাননি৷ এখনও সেই স্বপ্ন লালন করেন তিনি। সিনেমাটির বিষয়বস্তু এই৷ আলো, চিত্রগ্রহণ ও সম্পাদনার কাজে নৈপুণ্য দেখা গেছে। তবে আবহসঙ্গীত অনেকক্ষেত্রে মানানসই মনে হয়নি। তবে পুরো সময় দর্শক আগ্রহ নিয়ে দেখতে পারবেন ছবিটি৷ শিশির এখানে কথা বলেছেন একেবারেই ক্যাজুয়াল ঢঙে, যেন আড্ডা দিচ্ছেন।
এমন সিনেমার ক্ষেত্রে বাজেট সংকট একটি বড় বিষয়। এই সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রেও সেই সংকট ছিলো। তবে একটা ভাল গল্প আর ইচ্ছাশক্তির বলে সিনেমাটি শেষপর্যন্ত তারা নির্মাণ করতে পেরেছেন।
চলচিত্রটিতে প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন আলি আফজাল উজ্বল; সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন সানজিদুল ইসলাম, সাউন্ড ডিজাইন করেছেন শৈব তালুকদার এবং রঙ বিন্যাস হয়েছে চিন্ময় রায়- এর হাতে। সিনেমাটির নির্মাতা রাব্বি নিজের ভেতরে কাজ করা অপূর্ণতাকে স্বীকার করে নিয়েই মনে করেছেন, তার কাজটি মানুষকে দেখানো দরকার।
দ্রু ক্যাফের কর্ণধার আল আসাদুল করিম শিশির এখনো সিনেমা বানাতে পারেননি। কিন্তু তার স্বপ্ন এখনো তিনি লালন করেন বুকের গভীরে। তাই প্রামাণ্যচিত্রটির শেষেও আমরা শুনতে পাই- 'আরে গল্প শ্যাষ কইরা কী হইবো? শ্যাষ করলেই কি আরেকটা শুরু হইবো না? গল্পের কি শ্যাষ আছে কোনো স্যার? আজ পর্যন্ত পাইছেন?'
mahmudnewaz939@gmail.com