Bangla
a month ago

সুলতান সুলেমান কে এবং কেন তিনি এত জনপ্রিয়?

Published :

Updated :

বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে কেউ বেছে নেন সিনেমা, কেউ আবার টিভি সিরিজ। আরব্য রজনীর গল্প হিসেবে 'আলিফ লায়লা' একসময় এদেশের মানুষের কাছে ছিল অতুলনীয়। শুক্রবার রাত মানেই ছিল বিটিভিতে 'আলিফ লায়লা' দেখার এক অঘোষিত রীতি যেখানে যোগ দিত এলাকার সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ।

সময়ের সাথে প্রযুক্তিতেও পরিবর্তন এসেছে যার ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশেও। একসময় বিটিভি এদেশের মানুষের কাছে একমাত্র টেলিভিশন চ্যানেল থাকলেও বর্তমানে স্যাটেলাইট সম্প্রচারের কল্যাণে অসংখ্য চ্যানেল চালু হয়েছে বাংলাদেশে।

তাই তো 'আলিফ লায়লা'র মতো আরো কিছু টিভি সিরিজ এদেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে যার একটি হলো 'সুলতান সুলেমান'।

দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে এটি সর্বপ্রথম বাংলাদেশে প্রচারিত হয় যা অল্প সময়ের মধ্যেই দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে। তবে কখনও কি ভেবে দেখেছেন সুলতান সুলেমান আসলে কে? আর কেনই বা তিনি এত জনপ্রিয়?

সিরিজে থাকা সুলতান সুলেমান কিন্তু একটি বাস্তবিক চরিত্র। টিভির পর্দায় যেমন নিজের বীরত্ব দিয়ে দর্শকদের মন কেড়ে নিয়েছেন, ঠিক তেমনি এক সময় বাস্তবিক জীবনেও এই চরিত্রটি ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এক অকুতোভয় শাসকের নাম। তৎকালীন অটোমান (ওসমানীয়) সাম্রাজ্যে অন্যতম ক্ষমতাধর শাসক হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলেন তিনি।

১৪৯৪ সালের ৬ নভেম্বর তুরস্কে জন্মগ্রহণ করেন সুলতান সুলেমান। মাত্র সাত বছর বয়সেই তিনি ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য এবং সামরিক বিদ্যা গ্রহণ করা শুরু করেন। তার পিতা সুলতান সেলিম প্রথমের মৃত্যুর পর ১৫২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অটোমান সাম্রাজ্যের দায়িত্ব নেন।

সেসময় সুলতানের সাহসিকতা ও প্রজ্ঞা দেখে অনেকেই মুগ্ধ হতেন। তিনি ইসলামী রীতি-নীতির উপর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং মসজিদ, মাদরাসাসহ বহু ইসলামিক স্থাপনা নির্মাণ করেছিলেন।

এছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তিনি বেশ প্রশংসার দাবিদার। তার সাম্রাজ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। এছাড়া প্রশাসনিক কাঠামোতেও তিনি আমূল পরিবর্তন সাধন করেছিলেন যার ফলশ্রুতিতে সুলতান হিসেবে তার সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

সুলতান সুলেমানের রাজত্বকাল ৪৬ বছর স্থায়ী হয়েছিল। ১৫৬৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন এই সাহসী বীর। তার মৃত্যুর পর তার ছেলে দ্বিতীয় সেলিম সিংহাসনে বসেন।

সিরিজে সুলতান সুলেমানকে দেখা যায় দুর্দান্ত যোদ্ধা হিসেবে। নিজের সাম্রাজ্যকে অক্ষুণ্ণ রাখা এবং তা বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা সুলতানের মনোজগতের একটি বড় অংশজুড়ে থাকে। এছাড়া সুলতানের হারেমখানা এবং সেখানে বসবাসরত সুন্দরী নারীদের গল্পও এই সিরিয়ালের অন্যতম উপজীব্য।

এখানে আছে প্রেম, আছে ষড়যন্ত্র। এছাড়া রয়েছে প্রাসাদে থাকা উজিরদের কৌশলী চাল-চলন। হাজারো দায়িত্ব পালন করেও সুলতান যেন এক প্রেমিক পুরুষ যা মুগ্ধ করে অনেক দর্শককেই। এছাড়া বিদেশী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নিজের সাম্রাজ্যকে টিকিয়ে রাখার প্রয়াসও গল্পের একটি অন্যতম অংশ।

বাংলাদেশে 'সুলতান সুলেমান'সহ তুর্কি সিরিজগুলো জনপ্রিয়তা পাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।

কেন জনপ্রিয়?

ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনোমিস্টের প্রতিবেদনেও ওঠে এসেছে এমন তথ্য। তাদের মতে, তুর্কি সিরিজগুলোতে দেখানো দৃশ্যগুলো চোখের জন্য আরামদায়ক। এখানকার গৃহসজ্জা, পোশাক-পরিচ্ছদ, কিংবা চারদিকের পরিবেশ- সবই থাকে খুব গোছানো যা একজন দর্শকের মন কেড়ে নেয়। আর এতে করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিনদিন এসব সিরিজের চাহিদা বাড়ছে।

এছাড়া মুসলিম প্রধান দেশ হওয়াতে বাংলাদেশের মানুষ শালীনতা পছন্দ করে। হলিউড কিংবা বলিউড সিনেমার তুলনায় তুর্কি সিরিজগুলো থাকে শালীন ও মার্জিত যা পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখা যায়। আর তাই তো বাংলাদেশে এই ধরনের সিরিজের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

আবার হলিউড কিংবা বলিউডে যেখানে মুসলিমদের জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসী হিসেবে দেখানো হয়, তুর্কি সিরিজগুলোতে তেমনটি থাকে না। আর এতে করে বাংলাদেশীদের কাছেও এই ধরনের সিরিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।

'সুলতান সুলেমান' সিরিজের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এখানে যুদ্ধ, প্রেম, ষড়যন্ত্র সবকিছুই নিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এতে করে একদিকে যেমন তা বিনোদনের খোরাক যোগায়, ঠিক তেমনি অতীতে অটোমান সাম্রাজ্য সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায় এই সিরিজ দেখে৷ আর বিনোদন এবং ইতিহাসের এক দারুণ সংমিশ্রণ হওয়ায় তা দর্শকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

tanjimhasan001@gmail.com

Share this news