Published :
Updated :
বিশ্বজুড়ে ক্রমেই বাড়ছে পরিবেশবান্ধব পণ্যের চাহিদা, অবশ্যম্ভাবীভাবেই যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের বাজারেও। রেডিমেড গার্মেন্টস খাতে ইতোমধ্যে সবুজায়নের উপর জোর দেয়া হয়েছে, তৈরি হচ্ছে পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট, আর বাড়ছে টেকসই পণ্যের উৎপাদন। বাংলাদেশে এই টেকসই পণ্যের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন সুপারির খোল থেকে তৈরি প্লেট, বাটি, ট্রে সহ অন্তত ডজনখানেক তৈজসপত্র।
কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে সুপারির খোলের মতো অনেক কিছুই প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণ জন্মে থাকে এবং পরিত্যক্ত হিসেবে বিলীন হয়। কিন্তু খুলনার ইমরান হোসেনের মতো উদ্যোক্তাদের হাতে কোনোকিছুই আর ‘অপ্রয়োজনীয়’ থাকে না।
ইমরানের উচ্চশিক্ষা কম্পিউটার সায়েন্সে হলেও ভার্চুয়াল দুনিয়ার বাইরে কাজ করার আগ্রহই ছিল বেশি। টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে সুপারির খোল থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাসনকোসন তৈরি ভাবনা মাথায় আসে তার। অবশ্য নিজের বেড়ে ওঠার জায়গা খুলনায় সুপারির উৎপাদন হয় ব্যাপক পরিমাণে।
তবে সুপারির খোলকে কাজে লাগানোর অভিনব এই প্রক্রিয়ার প্রচলন মূলত শুরু হয় ভারতের তামিলনাড়ুতে। ইমরান বেড়াতে গিয়েছিলেন সেখানেও, আর ফিরে আসেন নিজ দেশে ভিন্নধর্মী একটি উদ্যোগ গ্রহণের অনুপ্রেরণা নিয়ে।
২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সুপারির খোল থেকে প্লেট, ট্রের মতো নিত্য ব্যবহার্য তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয় ইমরানের ‘ব্রাইট এরিকা’র হাত ধরে। ভারত থেকে আমদানি করা মেশিনেই সেখানে তৈরি হয় নানাকরম পণ্য, যাতে ব্যবহার করা হয় না কোনোপ্রকার রাসায়নিক। ফলে এই পণ্যগুলো একদিকে যেমন সম্পূর্ণরূপে পরিবেশবান্ধব, দামেও সাশ্রয়ী।
এদিকে সুপারি উৎপাদনে সুনাম আছে কক্সবাজার, টেকনাফেরও। ঝরে পড়া সুপারির খোল থেকে সেখানকার অনেক তরুণই পণ্য উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। টেকনাফের শামলাপুরের সিরাজুল কবির হিরো কিংবা বাগান মালিক ইমাম শরীফরা পথ দেখাচ্ছে আরো অনেককেই। ফলে মাটির চুলায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার কিংবা বাড়ির বেড়া তৈরির পরও ব্যাপক পরিমাণ অবশিষ্ট থাকা সুপারির খোলের এখন বিক্রয়মূল্য তৈরি হয়েছে।
এছাড়াও সুপারির খোল সংগ্রহ এবং পরিবহনকে কেন্দ্র করে এসব এলাকায় শ্রম সংস্থান হচ্ছে। স্থানীয় এনজিওর সহায়তায় অনেক উদ্যোক্তাই শুরু করছে সুপারির খোলের তৈজস উৎপাদন। আর এসব পণ্যের চাহিতা কক্সবাজার, টেকনাফ কিংবা খুলনা ছাড়িয়ে সারা দেশেই বেড়ে চলেছে।
সুপারির খোলে তৈরি প্লেট, বাটি নিত্যদিন ব্যবহারের পাশাপাশি এককালীন ব্যবহারের জন্যেও উপযোগী। প্লাস্টিকের ওয়ান-টাইম গ্লাস, প্লেট বর্তমানে পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি। যদি সুপারির খোলে তৈরি পণ্য প্লাস্টিককে প্রতিস্থাপন করতে পারে, তাহলে তা একদিকে যেমন পরিবেশবান্ধব হবে, অন্যদিকে ক্রেতাদের জন্যও হবে সাশ্রয়ী।