Published :
Updated :
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া বিখ্যাত গান যা সাধারণত "তব তবি তব" নামেই পরিচিত। গানটি ইন্টারনেটে পুরো জেঁকে বসেছে এবং সবার মধ্যেই একটি ফ্যান ফেভারিট হয়ে ওঠেছে।
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবের মতো সকল প্ল্যাটফর্ম ছেঁয়ে গিয়েছে এই গানের উন্মাদনায়। মিম থেকে শুরু করে গানটি মুখস্থ করে গাওয়ার ভিডিও, সবকিছুরই চলছে অনুশীলন।
তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে খুব অর্থহীন এই গানটি এবং এর কোনো ঐতিহাসিক পটভূমিও নেই। কোনো এক অলস মস্তিষ্ক থেকে বের হয়ে এসেছে এই গান এমন মনে হওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আপাতদৃষ্টিতে অর্থহীন এই গানের পিছনে রয়েছে বুদ্ধি ও প্রতিভার অবাক করা গল্প।
সাধারণত তব তবি তব নামে খ্যাত এই গানের আসল নাম সাওত সাফির আল-বুলবুল বা বুলবুলির কিচিরমিচির।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে সাধারণত গান হিসেবে ধরা হলেও এর উৎপত্তি হয়েছে কবিতা হিসেবেই। পৃথিবী জুড়ে গানটির খ্যাতি নতুন হলেও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায়শই গাওয়া হয় এবং ছোট বাচ্চাদের শিখানো হয় এটি।
কিন্তু কীভাবে উৎপত্তি হয়েছে এই কবিতার তা জানতে হলে যেতে হবে ১২০০ বছর আগে আব্বাসীয় যুগে। বাগদাদে তখন দ্বিতীয় আব্বাসীয় খলিফা আল-মনসুরের সভা চলে।
খলিফা আল-মনসুর কবিতার প্রচন্ড ভক্ত ছিলেন এবং তার স্মৃতিশক্তি এতোই ভালো ছিলো যে তিনি যেকোনো কবিতা শুধুমাত্র একবার শুনেই মুখস্থ বলতে পারতেন।
তিনি তার সারা সাম্রাজ্য জুড়ে থাকা বিভিন্ন কবিদের দরবারে নিমন্ত্রণ করে বলতেন যে যদি তারা এমন কোনো কবিতা তাকে শুনাতে পারে যা তিনি আগে কখনও শোনেননি তাহলে সেই কবিকে যেই পাথরের খন্ডের উপর কবিতা লেখা হয়েছে তার সমান ওজনের স্বর্ণ পুরষ্কার প্রদান করা হবে।
এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে কবিরা অনেক পরিশ্রম করে কবিতা লিখার পর তার সামনে এসে কবিতা আবৃত্তি করলে তিনি বলতেন যে, এই কবিতাটি তিনি আগে শুনেছেন।
যখন কবিরা জানাতো যে এটি তাদের মৌলিক কবিতা তখন তিনি কবিতাটি আবৃত্তি করে শুনাতেন এবং বলতেন যে তিনি তাহলে কীভাবে কবিতাটি বলতে পারলেন আগে থেকে না জানলে। এভাবে অনেক কবিই তার দরবার থেকে খালি হাতে ফিরে যায়।
তবে এক সময় কবি আল-আসমাই খলিফার এই কান্ডের কথা শুনতে পান এবং তিনি বুঝে ফেলেন খলিফার কৌশল। তিনি খলিফার দরবারে গিয়ে জানান যে, তিনি এমন একটি কবিতা লিখতে পারবেন যে খলিফা আগে কখনও শুনেননি। খলিফা তাকে বলেন এমন কবিতা লিখতে পারলে যেই পাথরের উপর কবিতা লেখা হবে তার সমান ওজনের স্বর্ণ তাকে প্রদান করা হবে।
তখন কবি আল-আসমাই এই কবিতাটি লিখেন যাকে বুলবুলির কিচিরমিচির নাম দেন তিনি।
খুব অদ্ভুত বাক্য প্রণালী ও অর্থহীন শব্দ ব্যবহার করে কবিতাটি লিখা হয়। পরের দিন আল-আসমাই খলিফাকে কবিতাটি শুনালে প্রথমবারের মতন খলিফা একবার শুনে কবিতাটি বলতে পারেননি। তখন তিনি জিজ্ঞেস করেন কিসের উপর কবিতাটি লেখা হয়েছে সেই পাথরের খন্ডটি নিয়ে আসতে। কিন্তু তখন আল-আসমাই জানান যে তা তিনি একটি ভূপতিত পাথরের স্তম্ভে কবিতাটি লিখেছেন যা কাঁধে নিতে ছয়জন শক্তসমর্থ সৈনিকের প্রয়োজন।
খলিফা যখন বুঝতে পারলেন যে আল-আসমাইকে এতো স্বর্ণ দিতে হলে তার কোষাগার খালি হয়ে যাবে তখন আল-আসমাই বললেন যে, তার স্বর্ণের দরকার নেই কিন্তু যেসব কবিরা আগে খালি হাতে ফিরে গিয়েছে তাদের যেন তাদের প্রাপ্য স্বর্ণ বুঝিয়ে দেওয়া হয় এবং খলিফা যেন এভাবে আর কোনো কবিকে না ঠকায়।
অন্যদিকে আরেকটি সূত্র থেকে জানা যায় যে, খলিফা প্রথম থেকেই জানিয়ে রাখতেন যে এমন কবিতা লিখতে হবে যা তিনি মুখস্থ করতে পারবেন না একবার শুনেই এবং তা করতে পারলে যার উপর কবিতাটি লেখা হবে তার সমওজনের স্বর্ণ দেওয়া হবে কবিকে।
তখন আল-আসমাই তার এই কবিতাটি লিখেন।
যখন আল মনসুর কবিতাটি মুখস্ত করতে পারেননি তখন তিনি কবিতাটি কোথায় লেখা হয়েছে তা জানতে চান এবং যখন দেখেন যে কবিতাটি আল-আসমাইয়ের গাধার উপর লেখা হয়েছে তখন তিনি প্রচন্ড বিস্মিত হন।
কিন্তু তাও তিনি আল-আসমাইয়ের প্রতিভায় খুশি হন প্রথমবারের মতো এরকম কবিতা লিখতে পারার জন্য। তিনি আল-আসমাইকে তার গাধার ওজনের সমাণ স্বর্ণ প্রদান করেন। তবে দিনশেষে মনে রাখা উচিৎ এই ইতিহাসগুলো লোকমুখে চলে আসা লোকগাথা এবং এর কোনো লিখিত রূপ নেই। তাই শুনতে অন্তত চমকপ্রদ মনে হলেও চোখ বুঁজে বিশ্বাস না করে নেয়াই উত্তম।
samiulhaquesami366@gmail.com