Bangla
a year ago

তেহরান দূতাবাসের বাংলা নববর্ষ বরণ: নাচ, গান, পিঠাপুলি, ছড়া, কবিতায় ভরপুর

অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী। ছবি: সৈয়দ মূসা রেজা
অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী। ছবি: সৈয়দ মূসা রেজা

Published :

Updated :

তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে শুক্রবার (২৬ মে) অনুষ্ঠিত হলো নববর্ষ বরণ উৎসব। এবারই প্রথম দূতাবাসের আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইরানি কোনো কন্যা বাংলা গানের তালে নাচ পরিবেশন করেন। আল্লামা তাবাতা’য়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাবা নিজ উদ্যোগেই নাচ শিখেছেন বলে জানান।

তেহরানে সাধারণভাবে বাংলাদেশের জাতীয় দুটো অনুষ্ঠান- ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবস এবং নববর্ষ একটু দেরিতে উদযাপন করা হয়। প্রথম অনুষ্ঠানের সময়টি ইরানি ঐতিহ্যবাহী নওরোজের কাছাকাছি হওয়ায় পিছিয়ে দেয়া হয়। এ কারণে পিঠাপিঠি অনুষ্ঠান এড়াতে দ্বিতীয়টিও, অর্থাৎ বাংলা নববর্ষ উদযাপনও পিছিয়ে যায়। এবারে পবিত্র রমজান মাসে পড়েছিল বাংরা নববর্ষের দিনটি। তাছাড়া, ইরানে নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী’র আগমনে বিলম্ব, এই দুইয়ে মিলে অনুষ্ঠানের সময় একটু বেশিই পিছিয়েছে।

তাড়াহুড়োর চেয়ে দেরি ভালো যদি সুন্দর হয়- লোকমুখে প্রচলিত কথাকেই এবারে সার্থক করে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশি লোকজ সংস্কৃতিকেন্দ্রিক কুটির শিল্পের মেলা থেকে শুরু করে নাচ, গান, চিত্রাঙ্কন, পিঠাপুলি- কিছুই বাদ যায়নি মনোজ্ঞ এ অনুষ্ঠানমালা থেকে। 

‌অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী বলেন, পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ বাঙালির সার্বজনীন উৎসব। ধর্মবর্ণগোত্র নির্বিশেষে সবাই প্রাণের টানে এ উৎসব উদযাপন করে থাকে। এ উৎসব আমাদের ঐতিহ্য ধারণ করে, আমাদেরকে একতাবদ্ধ করে, আমাদের মন-মননকে অনুরণিত করে। তিনি বলেন, সরকারের নানাবিধ উদ্যোগ এ উৎসবের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি সরকারি বিবিধ উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন।

চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন রাষ্ট্রদূত এবং তার সহধর্মিণী ফারজানা নাসরিন। ছবি: সৈয়দ মূসা রেজা

বক্তৃতায় রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ধারার বিভিন্ন দিক নিয়ে বেশি বেশি চর্চার আহ্বান জানিয়ে  এক্ষেত্রে অভিভাবকদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন।

এছাড়াও বক্তব্য দেন রেডিও তেহরানের সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুর রশিদ ও আমির হোসেন, তেহরানে অধ্যায়নরত ডাঃ হেদায়েতুল্লা সাজু, দূতাবাসের প্রথম সচিব মোল্লা আহমদ কুতুবুদ-দ্বীন, মন্ত্রী (বাণিজ্য) ডক্টর জুলিয়া মঈন। অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা করেন দূতাবাসের প্রথম সচিব মোল্লা আহমদ কুতুবুদ-দ্বীন ।

শিশু কিশোরদের অংশগ্রহণে 'আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর' গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। দূতাবাসের কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যগণের অংশগ্রহণে ‘এসো হে বৈশাখ’ সংগীতের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর্ব শুরু হয়। এতে ঘেটু গান পরিবেশন করেন দূতালয় প্রধান ওয়ালিদ ইসলাম। অনুষ্ঠান উপস্থাপনে ছিলেন মোল্লা আহমদ কুতুবুদ-দ্বীন, দূতালয় প্রধান ওয়ালিদ ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন ডক্টর জুলিয়া মঈন।

অনুষ্ঠানে আগত সবাইকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিণী ফারজানা নাসরিন। বরাবরের মতো স্বরচিত ছড়া পাঠ করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সৈয়দ মুসা রেজা। রাষ্ট্রদূতসহ সমবেত অতিথিদের অংশগ্রহণে ধনধান্য পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা গানের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বের সমাপ্তি টানা হয়।

বালিশ বদল খেলায় তিন বিজয়ীর সাথে রাষ্ট্রদূত এবং তার সহধর্মিনী

‌দূতাবাসের অনুষ্ঠানে আগত নারী অতিথিরা বালিশ বদল খেলায় অংশগ্রহণ করেন। এর আগে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বালিশ বদল খেলার তিন বিজয়ীসহ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সকল শিশু-কিশোরদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করেন রাষ্ট্রদূত।

‌বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্বলিত তথ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং ভোজের মাধ্যমে পুরো অনুষ্ঠানের ইতি টানা হয়।

‌উল্লেখ্য, বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে দূতাবাস পরিবার ও ইরানে প্রবাসী বাংলাদেশি গোষ্ঠীর উদ্যোগে দূতাবাস প্রাঙ্গণে ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির আয়োজন করা হয়। এতে অংশগ্রহণকারী সবাইকে পুরস্কার প্রদান করেন রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী।

Share this news