Published :
Updated :
দেশের ৪১টি কর অঞ্চলের প্রতিটিতে গড়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারী (টিআইএন ধারী) ব্যক্তি গত অর্থবছরে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পরিচালিত একটি গ্যাপ অ্যানালাইসিসে দেখা গেছে, অধিকাংশ কর অঞ্চলে টিআইএনধারীদের যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি, যা কর ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুতর দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়।
এই বিশ্লেষণটি করা হয়েছে ২০২৫ অর্থবছরে আয়কর রিটার্ন দাখিলে মাত্র ৬ শতাংশ হারে নামমাত্র প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করার পর।
বাংলাদেশে টিআইএনধারীদের সংখ্যা এবং রিটার্ন দাখিলকারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবধান একটি আলোচিত বিষয়। দেশে বর্তমানে জিডিপির তুলনায় কর আহরণ হার মাত্র ৬ দশমিক ৭ শতাংশ, যা বিশ্বের সর্বনিম্নের মধ্যে অন্যতম।
গত অর্থবছরে প্রায় ৫৩ লাখ টিআইএনধারী রিটার্ন দাখিল করেননি। তবে কর কর্মকর্তারা মাত্র ১৩ লাখ জনের জন্য ফাইল খোলেন।
একজন ঊর্ধ্বতন কর কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি কর অঞ্চলের দায়িত্ব হলো তাদের আওতাধীন প্রতিটি টিআইএনধারীর জন্য আলাদা ট্যাক্স ফাইল খোলা এবং তাদের নিয়মিত অনুসরণ করে রিটার্ন দাখিলে উৎসাহ দেওয়া।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের কর কাঠামো দুর্বল থাকার জন্য করদাতা এবং কর কর্মকর্তারা উভয়েই দায়ী।
সম্প্রতি এনবিআর দেশের সব কর অঞ্চলে নির্দেশনা জারি করেছে যেন তারা তাদের আওতাধীন রিটার্ন দাখিল না করা টিআইএনধারীদের নোটিশ প্রদান করে।
২০২৫ অর্থবছরে প্রায় ৯ লাখ টিআইএনধারীকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তবে শুধু ১৭ দশমিক ২৮ শতাংশ রিটার্ন-না-দেওয়া টিআইএনধারীরা এসব নোটিশ পেয়েছেন বলে ' দ্য ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের' বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।
কর কর্মকর্তারা জানান, নতুন আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রয়েছে, তবে যারা প্রথমবার রিটার্ন দাখিল করেন তাদের জন্য জরিমানার পরিমাণ খুবই নামমাত্র।
এনবিআরের ট্যাক্স অ্যাডমিন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার সদস্য জিএম আবুল কালাম কায়কোবাদ বলেন, এনবিআর কর অঞ্চলগুলোকে চিঠি দিয়ে নির্দেশ দিয়েছে যাতে তারা রিটার্ন-না-দেওয়া টিআইএনধারীদের নিয়মিত অনুসরণ করে।
গ্যাপ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে মাত্র ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ সাড়া দিয়েছেন। নোটিশ পাওয়ার পর ১,৭১,০৪৯ জন রিটার্ন দাখিল করেন।
মাঠপর্যায়ের কর কর্মকর্তারা জানান, জনবল সংকট, লজিস্টিক সহায়তার অভাব ও স্বয়ংক্রিয়তা না থাকায় তারা বিদ্যমান রিটার্নগুলো সামলাতেই ব্যস্ত থাকেন।
তাদের ভাষ্যমতে, প্রান্তিক করদাতাদের পেছনে সময় ব্যয় করলেও রাজস্ব আহরণে তেমন ফল আসে না।
একজন মাঠপর্যায়ের কর কমিশনার নাম প্রকাশ না করে বলেন, "আমরা সাধারণত উচ্চ আয়ের করদাতাদের টার্গেট করি, কারণ একজন বড় করদাতার কাছ থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব আসে, তা ১০০ জন প্রান্তিক করদাতার সম্মিলিত করের সমান।"
কর কর্মকর্তারা আরও বলেন, রিটার্ন দাখিলের হার এখনও হতাশাজনক। ২০১৫ অর্থবছরে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা ছিল ১৭ লাখের নিচে। গত এক দশকে এক কোটির বেশি টিআইএনধারী যুক্ত হলেও তার প্রতিফলন রিটার্ন জমার সংখ্যায় দেখা যায়নি।
বর্তমানে প্রায় ৪০টি সরকারি-বেসরকারি সেবা গ্রহণে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ বাধ্যতামূলক।
আয়কর আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক টিআইএনধারীর জন্য রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক।