Bangla
2 days ago

তিন মাসে ৭৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি

Published :

Updated :

মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে চলতি বছরের মার্চের শেষ দিকে দেশের ব্যাংকিং খাতে ক্লাসিফাইড ঋণের পরিমাণ প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এতে পুরো ব্যাংকিং খাতজুড়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

এই সময়ে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায়, যা দেশের ৬১টি বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক বিতরণকৃত মোট ১৭ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।

এমন বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের ভারে ব্যাংকগুলো অত্যন্ত রক্ষণশীল হয়ে পড়েছে এবং নতুন ঋণ বিতরণে সীমাবদ্ধতা আরোপ করছে। একই সঙ্গে, এসব খেলাপি ঋণের জন্য প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে ব্যাংকের মুনাফাও কমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক আশঙ্কা করছে, খেলাপি ঋণের এই ঊর্ধ্বগতি আগামী কয়েক প্রান্তিকেও অব্যাহত থাকবে। কারণ, ইতিমধ্যে মেয়াদি ঋণ শ্রেণিকরণের সময়সীমা ৯ মাস থেকে ৬ মাসে নামিয়ে আনা হয়েছে। চলতি বছরের ৩১ মার্চ থেকে তা আরও কড়াকড়িভাবে ৩ মাসে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত রয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের একই সময়ের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে চলতি বছরের মার্চে শ্রেণিকৃত ঋণের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশে। এসব শ্রেণিকৃত ঋণের মধ্যে ৮১ দশমিক ৩৮ শতাংশই ‘খারাপ ঋণ’ বা সম্পূর্ণ আদায় অনিশ্চিত।

ব্যাংকভিত্তিক হিসেবে দেখা গেছে, আগের মতো এবারও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর শ্রেণিকৃত ঋণের হার বেশি। ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণকৃত ঋণের ৪৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

অন্যদিকে, ৪৩টি বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা বা ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকের (৯টি) খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা (৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ)। তিনটি বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

খেলাপি ঋণের এই দ্রুত ঊর্ধ্বগতি ব্যাংকিং খাতের জন্য বড় সংকট তৈরি করেছে। সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, এই ঋণ বৃদ্ধির বিষয়টি অনুমিতই ছিল। কারণ, গত সরকার আমলে কিছু ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে ‘দুর্নীতির চক্র’ ছিল এবং ব্যাংক খাত থেকে বিপুল অর্থ পাচার করা হয়েছে।

তিনি জানান, গত ১৫ বছরে ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদপুষ্ট অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাব খুলে ঋণ নিলেও ক্ষমতা বদলের পর সেগুলোর আয়-ব্যয় বা লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে।

মাসরুর আরেফিন আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ৩১ মার্চের মধ্যে ক্লাসিফাইড ঋণ নির্ধারণের কঠোরতা এই ঋণ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকিনির্ভর এই ব্যবসা বুঝতে হবে এবং সঠিক ‘ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট’ ও ‘বোর্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটি’ গঠন করতে হবে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ক্ষমতা পরিবর্তনের পর ব্যাংকগুলোর প্রকৃত খেলাপি ঋণের চিত্র সামনে আসতে শুরু করেছে। তার মতে, নতুন শ্রেণিকরণ বিধিমালা কার্যকর হলে আগামীতে খেলাপি ঋণ আরও বাড়তে পারে।

শুধু ব্যাংকিং শৃঙ্খলা নয়, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশও নিশ্চিত করা জরুরি বলে তিনি মত দেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান বলেন, " খেলাপি ঋণ আদায়ে আমরা জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছি এবং এর ইতিবাচক ফল আগামী প্রান্তিকেই দেখা যাবে। তিনি বলেন, আমরা খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার করে তা সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণে কাজে লাগাবো। " 

বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১৯ শতাংশ, যা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে কম।

jubairfe1980@gmail.com

Share this news