Published :
Updated :
রেটিনল শব্দটা শোনা মাত্রই মাথায় আসে চোখের কথা। এই জাদুকরী উপাদানটির জন্য আমরা দেখতে পাই। চোখের দৃষ্টিপথে দর্শন উদ্দীপনা জাগায় রেটিনল। তবে শুধু চোখের নয়, রেটিনল ত্বকের জন্যও সঞ্জীবনী বটে। ত্বকের যৌবন দীর্ঘায়িত করে। এর ব্যবহারে চট করে কেউ যদি বয়স আন্দাজ করেও ফেলে, সেটি নিশ্চয়ই বাস্তব হতে কমই হবে।
রেটিনল রাসায়নিকটি আমাদের অতি চেনা ভিটামিন এ এর নামান্তর। রাসায়নিক সমীকরণে রেটিনলটি এলকোহল গনভুক্ত, এটি ছাড়াও এলডিহাইড রূপে রেটিনয়েড বা এসিড রূপে রেটিনয়িক এসিড রূপচর্চার প্রসাধনীতে ব্যবহৃত হয়। রেটিনয়েড এদের ভেতর সবচেয়ে শক্তিশালী এবং অধিকাংশ চিকিৎসকের পছন্দের। তবে এটির ক্ষেত্রে মূল্য একটু বেশিই খরচ করতে হয়।
সুন্দর মুখ পেতে সাধারণত মাঝবয়সী তরুণী থেকে মধ্য বয়সীরা রেটিনল সেরাম, নাইট ক্রিম, আই ক্রিম মাধ্যমে ব্যবহার করে থাকে। একটু বয়স বাড়লে ত্বকের লাবণ্য, কোমলতা, টানটান ভাবটা কমে যেতে থাকে। যারা একটু সৌন্দর্য সচেতন তাদের তখন থেকে পড়তে শুরু করে চিন্তার রেখা। তাই তো যৌবন ধরে রাখতে ত্বকের যত্নে নতুন সংযোজন রেটিনল। এটি সেরাম হিসেবেই বেশি ব্যবহার করা হয়।
রেটিনলের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার আর সুনাম এন্টি রিঙ্কেল ক্ষমতার জন্য। ত্বকের ভাঁজ আর বলিরেখা অনেক খানি কমিয়ে আনে। এটি ত্বকের উপর ব্যবহার করলে ত্বকের মধ্যম স্তর ডার্মিস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এটি প্রদাহ সৃষ্টিকারী সক্রিয় ফ্রি রেডিকেল গুলোর কার্য ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে কোলাজেন আর ইলাস্টিন নামক প্রোটিনগুলোর উৎপাদন বাড়ে। কোলাজেন ত্বকের লাবণ্য ফিরিয়ে আনে আর ইলাস্টিনের জন্য টানটান ভাব অটুট হয়। জড়তা মলিনতা কাটিয়ে ত্বক পায় নতুন করে দীপ্তি। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে তখন বয়েস যেন বাড়ছেই না!
রেটিনল হাইপারপিগমেন্টেশন বা কালচে ছোপ দূর করে বেশ কার্যকরী। আমাদের ত্বকের রঞ্জক হলো মেলানিন। এই পিগমেন্টের দানা গুলোকে ছড়িয়ে দেয় রেটিনল, এক জায়গায় দলা পাকিয়ে জমা হতে দেয় না। যার ফলে আস্তে আস্তে কালচে ভাব দূর হয়ে যায়। ম্যালাসমাসের চিকিৎসায় তাই এর ব্যবহার রয়েছে।
ত্বকের সমস্যার নাম করলে তরুণ-তরুণীরা এক কথায় ব্রণের নাম করবে। রেটিনল কিন্তু এই ব্রণের সাথেও লড়াই করে। ব্রণ হবার মূল কারণ অতিরিক্ত সেবাম তৈরি হওয়া। রেটিনল এই সেবামের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। আর তার ফলাফল ব্রণহীন চকচকে মুখ।
রেটিনল নিঃসন্দেহে একটি আশ্চর্যকর উপাদান। তবে ভালো ফলাফল পেতে এটির দৈনন্দিন ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। খুব বেশী ব্যবহারে হবে হিতে বিপরীত। আগের রাতে সারা মুখে যদি ঘষে ঘষে রেটিনল ক্রিম বা সেরাম মাখা হয়, তবে পরদিন সকালে নিজেকে আবিস্কার করতে হবে খোলক ওঠা সরীসৃপ হিসেবে। মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে এটি ত্বককে বেশ শুষ্ক করে দেয়। চামড়া ঝরতে শুরু করে তখন।
তাই এর ব্যবহার বিধি হয় মুখ ধোবার ৩০মিনিট পরে মুখ মাখতে হবে। আঙুলের ডগায় মটরদানার আকারে নিয়ে সেটুকুই সারা মুখে সমভাবে ছড়িয়ে নিতে হবে। ভালো হয় যদি কোনো মসচারইজারের সাথে মিশিয়ে ত্বকে তোলা হয়। রাতে ঘুমোতে যাবার আগে ব্যবহার সর্বোত্তম। তবে খেয়াল রাখতে এটি ব্যবহারের সময় একই সঙ্গে সেলিসাইলিক এসিড আছে এমন কোনো পণ্য ব্যবহার করা যাবে না। তাহলে চামড়ার উপর সেটি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। যদি একান্তই ব্যবহার করতে হয়, সেক্ষেত্রে একটি সকালে এবং অন্যটি রাতে এই ভাবে ব্যবহার করতে হবে।
রেটিনল নতুন ব্যবহার শুরু করলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শুরু করা ভালো। ভালো এবং দ্রুত ফলাফল পেতে শুধু রেটিনল ব্যবহার করলেই চলবে না। এর সাথে একটা দাগ দূরকারী স্পট লাইটার এবং অবশ্যই রোদে যাবার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। তবেই ভালো করে দেখা যাবে রেটিনলের জাদু।
সুস্মিতা রায় বর্তমানে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজে ৪র্থ বর্ষে পড়াশোনা করছেন।
susmi9897@gmail.com