Bangla
7 months ago

উমানাথপুর: সুখের সংজ্ঞা ভিন্ন যে গ্রামে

Published :

Updated :

সুখ একটি আপেক্ষিক বিষয়। সুখের কোনো একক সংজ্ঞা নেই। এটি স্থান, কাল, পাত্র, ব্যক্তি, সম্প্রদায়, জাতি অনুসারে ভিন্নতা পেয়ে থাকে। অনেকে বিশাল কোনো বাড়িতে প্রচুর অর্থ–সম্পদের মালিক হয়ে আরামে আয়েশে দিন কাটানোকে সুখের সংজ্ঞা মনে করে, আবার অনেকে ছোট কুটিরে কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়া নীরোগ থাকাকে সুখ মনে করে। তাই সুখের মাত্রা বহুমাত্রিক। পৃথিবীর উন্নত দেশের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশটিও যখন ব্যাপক হারে নগরায়ণের পথে ধাবিত হচ্ছে, উন্নত জীবনযাপনের আশায় মানুষ যখন নিজের শিকড় ছিঁড়ে শহরমুখী হচ্ছে, ঠিক তখনই আমাদের দেশে সন্ধান মিলেছে এমন একটি গ্রামের যার সদস্যসংখ্যা মাত্র ০২ জন। এখানেই তারা খুঁজে নিয়েছে তাদের জীবনের সুখ।

অনিন্দ্য সুন্দর এই গ্রামটির নাম উমানাথপুর। উমানাথপুর গ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে।

উপজেলা থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এটি। এখানে রয়েছে মাত্র একটি বাড়ি। সেই বাড়িতে বসবাস করেন একেএম সিরাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।

এরা দুজনই এই গ্রামের বাসিন্দা। ১৯১৬ সালে সেসময়ের স্থানীয় জমিদার উমানাথ চৌধুরীর নামে গ্রামটির নামকরণ করা হয়।

এর আয়তন ১০ একর। ওই সময়ে এখানে কোনো বসতভিটা ছিল না। কোনো লোকজনও বাস করতো না। কারণ এখানের অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। ১৯৬৫ সালে একেএম সিরাজুল ইসলামের পিতা প্রয়াত রমজান আলী শান্ত ও নীরব পরিবেশের আশায় এখানে জমি কিনে বসতি গড়ে তোলেন। তাদের আদি নিবাস ছিল পার্শ্ববর্তী রামগোবিন্দপুর গ্রামে। সেখানে লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উমানাথপুরে চলে আসে প্রয়াত রমজান আলীর পরিবার।

বংশের জ্ঞাতি-গোষ্ঠীদের জমিজমা উমানাথপুর গ্রামে থাকলেও তারা কেউ এখানে থাকেন না। একমাত্র সিরাজুল ইসলামই তার সহধর্মিণীকে নিয়ে প্রয়াত পিতার স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটিতে থাকেন। এটি ২৫ শতক জায়গা নিয়ে তৈরি হয়েছে।এখানে দুটি বসতবাড়ি ছাড়াও রয়েছে একটি পুকুর ও গোয়ালঘর। বাড়ির চারপাশ ঘিরে রয়েছে অসংখ্য গাছগপালা যা বাড়ির পরিবেশ শীতল রাখে।

সিরাজুল ইসলামকে বলা হয় উমানাথপুর গ্রামের অঘোষিত জমিদার। আশেপাশের অন্যান্য গ্রামের লোকজন তাকে জমিদার নামেই ডাকে। এমনকি তার অফিসের লোকজনও তাকে এই উপাধিতে সম্বোধন করে।

জমিদার উপাধিটি বেশ ভালোভাবেই উপভোগ করেন সিরাজুল ইসলাম।এর মধ্যেই তিনি জীবনের সুখ খুঁজে পান। তিনি পেশায় একজন দলিল লেখক। এর পাশাপাশি তিনি পৈত্রিকসুত্রে পাওয়া কৃষিজমি চাষাবাদ করেন। এমনকি তার জ্ঞাতিগোষ্ঠীর পাওয়া জমিও চাষ করেন তিনি। ফলন পেলে তাদেরকে প্রাপ্য অর্থ বুঝিয়ে দেন তিনি।

বন্যা বা খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগও কাবু করতে পারে না এখানকার চাষাবাদকে । তাই উমানাথপুরের জমি ও এর ফলন নিয়ে বেজায় খুশি সিরাজুল ইসলাম।

একেএম সিরাজুল ইসলাম ও মনোয়ারা বেগমের দুইজন সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে কিছুদিন আগে মারা যাওয়ায় সিরাজুল ইসলামের নাতি ও পুত্রবধূ গ্রামের বাইরে থাকেন। আর একমাত্র মেয়ের বিয়ে হওয়ায় সে তার স্বামীর সাথে খুলনায় থাকেন।

উমানাথপুর গ্রামের পশ্চিমে রয়েছে ব্রক্ষপুত্র নদী।এর উত্তরে রয়েছে রামগোবিন্দপুর গ্রাম,দক্ষিণে হরিপুর ও পশ্চিমে উদয়াপুর গ্রাম। রাজীবপুর ইউনিয়নের অধীনে রয়েছে মোট ৪৩ টি গ্রাম।

সম্প্রতি বিবিসি বাংলা বাংলাদেশের যে গ্রামে দুইজন মানুষের বসবাস শিরোনামে উমানাথপুর গ্রাম নিয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করলে নেটিজেনদের আলোচনায় আসে এটি। এরপর থেকে আশেপাশের গ্রাম থেকে লোকজন আসছে এখানে। এমনকি ময়মনসিংহের বাহির থেকেও অনেকে আসছে বাংলাদেশে অবস্থিত ভিন্নধর্মী এই গ্রামটি দেখতে। বিষয়টিকে সানন্দেই গ্রহণ করছেন বৃদ্ধ সিরাজুল ইসলাম।

aurnobprashad456@gmail.com

Share this news