Bangla
4 days ago

উৎসব: একদিন ভালোবাসা ছিল

Published :

Updated :

জাহাঙ্গীর সাহেব- মধ্যবয়সী রসকষহীন একটা মানুষ৷ দেখলে মনে হবে, জগতের কোনো ব্যাপারেই তার কোনো আগ্রহ নেই৷ খিটখিটে এই মানুষটি বিশাল একটি বাড়িতে একাই থাকেন। তার মামাত ভাই মোবারক মারা যাবার পর ভাইয়ের কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবসাটি দেখার দায়িত্ব তার ওপরেই ন্যস্ত হয়। তার খিটখিটে আচরণে সবাই তার ওপর বিরক্ত। তার দিনগুলো কেটে যাচ্ছিলো নিস্তরঙ্গভাবে। কিন্তু হঠাৎ একরাতে তিনি আবিষ্কার করেন এক ভূতকে। ভূত তাকে নিয়ে সিনেমা দেখতে বসে। তারপর উন্মোচিত হতে থাকে তার জীবনের অতীত অধ্যায়।

জাহাঙ্গীর সাহেবের জীবনের মধ্যে দিয়ে তার দুঃখ-কষ্ট, স্বজন বিয়োগ, নতুন পরিবার পাওয়া- সবই উঠে আসে। তবে এই মানুষটি কি তখন আসলেই এমন খিটমিটে ছিলেন? তার জীবনেও ছিল একদিন রঙিন দিন, রঙিন সময়। কেমন সেটা? জেসমিন নামে কেউ একজন তার জীবনে এসেছিল- তারপর পৃথিবীর সব সুখ তো ধরা দিতে পারত তার হৃদয়ে। পেরেছিল কে?

নিঃসঙ্গ জীবন যাপনে অভ্যস্ত থাকা  জাহাঙ্গীরকে এই একটা রাতই অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা দেয়। এক ভূত যায়, আরেকভূত আসে। এভাবে নিজের ফেলে আসা দিনগুলো পরিষ্কার হয়ে উঠতে থাকে তার সামনে। শেষ পর্যন্ত তিনি পান এক নতুন উপলদ্ধি।

উৎসব মূলত জাহাঙ্গীর চরিত্রটির মাধ্যমে আমাদের হারিয়ে ফেলা নিজেদের খুঁজে পাবার গল্প। ভূতেরা এখানে হাজির সেই অতীতের প্রতীক হিসেবে। ভূত মানেই অতীত-    সিনেমাতে তারা জাহাঙ্গীরকে নিয়ে যায় তার অতীতে।

সিনেমাটিতে পপ কালচারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গকে ট্রিবিউট দেয়া হয়েছে। অভিনেতারা অনেকক্ষেত্রে নিজেদের নিজেরাই 'রোস্ট' করেছেন! মুরুব্বি, মুরুব্বি উঁহু হুঁ হুঁ কিংবা স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক- এর আদলে 'খাইস্টা জাহাঙ্গীর নিপাত যাক, শান্তিনীড় মুক্তি পাক'- এর মতো স্লোগান খুব হিউমারের সাথে ব্যবহৃত হয়েছে।

সিনেমার ক্যামেরার কাজ ও আলো খুব প্রশংসনীয়। কালার গ্রেডিংও দারুণ। আর্টসেলের ধূসর সময় গানটি ব্যবহৃত হয়েছে৷ ব্যবহৃত হয়েছে আরও একটি ব্যান্ড গান৷ তবে জাহাঙ্গীর অতীত জীবনের সুখের সময় কিংবা ভালোবাসার মুহূর্তগুলোয় আরও সফট কোনো গান ব্যবহৃত হতে পারত। (যেমন- আইয়ুব বাচ্চুর 'খুব সাধারণ' এক্ষেত্রে একটা চমৎকার উদাহরণ)।

অভিনয়ে সবাই-ই ছিলেন সাবলীল। জাহিদ হাসান, তারিক আনাম খান,  চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান, অপি করিম, সৌম্যজ্যেতি, সাদিয়া আয়মান, আজাদ আবুল কালাম, ইন্তেখাব দিনার, আফসানা মিমি, সুনেহরা বিনতে কামাল- সবাই-ই নিজেদের জায়গা থেকে সাবলীল অভিনয়টাই করেছেন। তবে সৌম্যজ্যেতির থ্রোয়িংয়ে ও জয়া আহসানের সেল্ফ মিমিক্রির ক্ষেত্রে আরেকটু সাবলীলতা থাকতে পারতো।

জাহিদ হাসান ও আফসানা মিমির সিকোয়েন্সে জাহিদ বেশ স্বাভাবিকভাবে সংলাপ চালিয়ে গেলেও মিমি পুরোপুরি প্রমিত ভাষায় কথা বলেছেন, যা বেমানান ঠেকেছে।

অন্য সব কুশলীদেরই কথা ছিল ঢাকার টানে, সেখানে মিমির কথাগুলো প্রমিত হওয়ায় এটি অসামাঞ্জস্যকর। তবে বিশেষত জাহিদ হাসান, চঞ্চল চৌধুরী ও সাদিয়া আয়মানের অভিনয় প্রশংসা পাওয়ার মতো। 

সিনেমাটি সামগ্রিকভাবে দর্শককে নতুন একটি অভিজ্ঞতা দেবে। এতটা হিউমার, হৃদয়গ্রাহীতা, কষ্ট, ভালোবাসার মেলবন্ধন সাম্প্রতিক কোনো বাংলা চলচ্চিত্রে বহুদিন দেখা যায়নি৷ উৎসব নিজেকে ফিরে পাওয়ার, নতুন উপলদ্ধির ও সবকিছু ছাপিয়ে একটি 'ভালোবাসা'-র গল্প৷ হারিয়ে ফেলা ভালোবাসা অন্য রূপে ফিরে পাবার গল্প।

আয়মান আসিব স্বাধীনসহ বাকিসকল কাহিনীকার ও পরিচালক তানিম নূরকে ধন্যবাদ এমন চমৎকার একটি ঈদের ছবি উপহার দেবার জন্য। একবার যারা দেখবেন, উৎসব তাদের মাথায় ও হৃদয়ে রয়ে যাবে বহুদিন, হয়ত সমস্ত জীবন।

Share this news