Bangla
5 days ago

ভারতীয় নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে বিমানবন্দরে চালু হচ্ছে কার্গো ফ্লাইট

Published :

Updated :

নিরাপত্তা ও রপ্তানি সুবিধার ক্ষেত্রে ভারতের তৃতীয় দেশ ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা জারির প্রেক্ষিতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার রপ্তানিকারকদের জন্য এয়ার কার্গো সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। 

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি) জানিয়েছে, ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) পাশাপাশি দেশের আরও দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নির্ধারিত কার্গো ফ্লাইট চালু, জনবল বৃদ্ধি এবং অপারেশনাল খরচ কমানোর মতো বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। 

সিএএবি চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মনজুর কবীর ভূঁইয়া দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-কে বলেন, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আগামী ২৭ এপ্রিল নির্ধারিত আন্তর্জাতিক কার্গো ফ্লাইট চালু হবে। এরপর কয়েক দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও এ ধরনের ফ্লাইট চালু করা হবে। 

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বুশরা ইসলাম জানান, সিলেট বিমানবন্দর থেকে প্রথম দিনে একটি চার্টার্ড ফ্লাইট ৬০ টন তৈরি পোশাক পণ্য মধ্যপ্রাচ্যের মাধ্যমে স্পেনে পরিবহন করবে। তিনি বলেন, কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সিলেট বিমানবন্দরে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি নিয়োগ দিয়েছে বিমান। 

বিমান কর্মকর্তারা জানান, সিলেট বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইটের নির্ধারিত সময়সূচি এখনও তৈরি করা হয়নি, তবে বর্তমানে সেখানে প্রতি সপ্তাহে তিনটি কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার সক্ষমতা রয়েছে। 

এছাড়া, রপ্তানি সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন রপ্তানি-সম্পর্কিত ফি কমানোর কথাও ভাবছে সরকার। 

সিএএবি চেয়ারম্যান বলেন, "বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে মিলে বর্তমানে প্রচলিত সিভিল এভিয়েশন এবং গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং ট্যারিফ পুনর্নির্ধারণের কাজ চলছে, যাতে এয়ার কার্গো আরও সাশ্রয়ী হয়।" 

তিনি আরও জানান, রপ্তানি কার্গো পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে, যাতে কার্গো অপারেশনের চার্জ কমিয়ে আনা যায় এবং ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা আসে। 

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্গো বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক শাকিল মেরাজ জানিয়েছেন, বর্তমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বছরে শূণ্য দশমিক ২১ মিলিয়ন টন কার্গো রপ্তানি হয়। 

চলতি বছরের শেষে তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে এই বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা দ্বিগুণ হবে এবং বাংলাদেশের রপ্তানি প্রতিযোগিতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। 

বর্তমানে টার্মিনাল ১ ও ২ মিলে রপ্তানি কার্গোর জন্য ১৯ হাজার ৬০০ বর্গমিটার এলাকা এবং ২ লাখ টন বার্ষিক হ্যান্ডলিং সক্ষমতা রয়েছে। তৃতীয় টার্মিনাল যুক্ত হলে ৩৬ হাজার বর্গমিটার এলাকা এবং ৫ লাখ ৪৬ হাজার টন বার্ষিক হ্যান্ডলিং সক্ষমতা যুক্ত হবে। 

এখন পর্যন্ত ৩৫টি এয়ারলাইন্সের মধ্যে মাত্র ৫টি — এমিরেটস, কাতার, তুর্কিশ, সৌদিয়া ও ক্যাথে প্যাসিফিক — সরাসরি কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এছাড়া ১৫-১৭টি এয়ারলাইন্স, বিমানের মতো, যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের মাধ্যমে কার্গো পরিবহন করছে। 

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএফএফএ) সভাপতি কবির আহমেদ জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৪৫০-৫০০ টন রপ্তানি পণ্য আকাশপথে পরিবহন করা হয়, ফলে ঢাকা বিমানবন্দরে কার্গো পরিবহনে তেমন অতিরিক্ত চাপ পড়ে না। তবে রপ্তানির পিক সিজনে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর — এই পরিমাণ ১,০০০-১,২০০ টনে পৌঁছে যায়। ফলে অতিরিক্ত কার্গো ভার সামাল দিতে ভারতীয় বিমানবন্দরগুলো ব্যবহার করা হতো। 

করোনা মহামারির সময় এই ট্রানজিট রুট জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, কারণ এটি তুলনামূলক কম খরচে এবং দ্রুত সেবা দিত। বিশেষ করে, কলকাতা ও দিল্লি বিমানবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করতে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়া হতো। 

বিএএফএফএ পরিচালক মো. কামরুজ্জামান ইবনে আমিন বলেন, ভারতে কার্গো শিপমেন্ট বাংলাদেশ থেকে ২০-২৫ শতাংশ সস্তা পড়ত, এমনকি সীমান্ত পর্যন্ত পরিবহনের খরচ যুক্ত করেও। 

তবে চলতি বছরের ৫ আগস্টের পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে, ভারত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের তৃতীয় দেশের কার্গো ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা স্থগিত করে দেয়। এতে বিশেষভাবে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের রপ্তানি ব্যাহত হয়। 

সিএএবি চেয়ারম্যান আশাবাদ ব্যক্ত করেন, তাদের সর্বশেষ উদ্যোগগুলো রপ্তানি ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনবে। তবে, তিনি বলেন, "ভারতের সঙ্গে তুলনা করা কঠিন, কারণ প্রতিবেশী দেশের অবকাঠামো ও কার্গো হ্যান্ডলিং ভলিউম আমাদের চেয়ে অনেক বেশি।" 

bikashju@gmail.com

 

Share this news