Bangla
4 months ago

ভিন্ন দেশ, ভিন্ন সংস্কৃতি তবে আনন্দ একই: বসন্ত উৎসব 

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

Published :

Updated :

বসন্ত মানেই যেন নতুন কিছুর শুরু, প্রকৃতির রঙিন পরিবর্তন আর উৎসবের আনন্দ। শীতের শেষে যখন গাছে নতুন পাতা আসে, ফুল ফুটে, আর আবহাওয়া হয়ে ওঠে মৃদু উষ্ণ, তখন সারা বিশ্বে বসন্তকে স্বাগত জানানো হয় নানা উৎসবের মাধ্যমে।

বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে বসন্ত উদযাপনের ধরনও ভিন্ন হয়ে থাকে। বাংলাদেশে পহেলা ফাল্গুন, ভারতে হোলি, জাপানে হানামি, ইরানে নওরোজ, চীনে চিং মিং, ও খ্রিস্টীয় রীতিতে ইস্টার—সব দেশেই বসন্তের আগমনে আনন্দের ছোঁয়া লাগেই। 

বাংলাদেশে বসন্ত উৎসবের সবচেয়ে বড় উদযাপন হয় পহেলা ফাল্গুনে। ফাল্গুন মাসের প্রথম দিনে মানুষ রঙিন পোশাক পরে, বিশেষত হলুদ আর লাল রঙের পোশাক এই দিনে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।

তরুণ-তরুণীরা ফুলের মালা পরে, হাতে ফুল নিয়ে বের হয়। শহরের বিভিন্ন স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, গান-বাজনা, কবিতা আবৃত্তি আর নাচে মেতে ওঠে সবাই। বসন্ত যেন প্রাণের জাগরণ নিয়ে আসে, পুরনো ক্লান্তি দূর করে নতুন করে বাঁচার বার্তা দেয়।

ভারতের হোলি

ভারতে বিশেষ করে মহারাষ্ট্রে বসন্ত মানেই হোলি, যা রঙের উৎসব হিসেবে পরিচিত। এটি শুধু আনন্দের প্রতীক নয়, বরং ঐতিহাসিক ও ধর্মীয়ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। আগের রাতে হোলিকা দহন নামের আগুন জ্বালানো হয়, যা অশুভ শক্তির বিনাশের প্রতীক। পরদিন সকাল থেকে শুরু হয় রঙ খেলা।

সবাই একে অপরের গায়ে নানা রঙের আবির মাখিয়ে দেয়, হাসি-ঠাট্টা আর নাচ-গানের মাধ্যমে সম্পর্ক আরও গভীর হয়। মিষ্টি ও বিশেষ খাবার তৈরি হয়, এবং পরিবার-বন্ধুরা একসঙ্গে সময় কাটায়। শুধু ভারত নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও এখন হোলি উদযাপন করা হয়, যেখানে মানুষ রঙিন আনন্দে মেতে ওঠে।

জাপানের বসন্ত উৎসব হানামি

জাপানের বসন্ত উৎসবকে হানামি বলে যার অর্থ চেরি ফুল দেখা। বসন্তের শুরুতেই চেরি ফুল ফুটলইআর সেই সৌন্দর্য উপভোগ করাই হানামির মূল উদ্দেশ্য। পরিবার, বন্ধু ও সহকর্মীরা পার্কে কিংবা নদীর ধারে বসে পিকনিক করে, একসঙ্গে খাবার খায়, গান করে আর বসন্তের আবহ উপভোগ করে।

জাপানের সংস্কৃতিতে চেরি ফুলের ক্ষণস্থায়ী সৌন্দর্য জীবনের অস্থায়ী প্রকৃতির প্রতীক। এজন্যই হানামি শুধু ফুল দেখা নয়, বরং জীবনকে উদযাপন করারও এক উপলক্ষ।

ইরানের বসন্ত উৎসব- নওরোজ

ইরানের বসন্ত উৎসব- নওরোজ, যা তাদের নতুন বছরের উৎসব। প্রায় তিন হাজার বছরের পুরনো এই উৎসব শুধু ইরানেই নয়, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান ও মধ্য এশিয়ার অন্যান্য দেশেও পালিত হয়।

এই সময় মানুষ ঘর পরিষ্কার করে, যা নতুন জীবনের সূচনার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। হাফত-সিন নামে একটি বিশেষ টেবিল সাজানো হয়, যেখানে সাতটি প্রতীকী বস্তু রাখা হয়, যা সুস্বাস্থ্য, সুখ ও সমৃদ্ধির প্রতীক।

পরিবার ও বন্ধুরা একে অপরের বাড়িতে যায়, উপহার আদান-প্রদান করে, আর আগুনের ওপর দিয়ে লাফিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। এটি শুধু উৎসব নয়, বরং আত্মশুদ্ধিরও প্রতীক।

চীনে বসন্ত মানেই শুধু আনন্দ নয়, বরং এটি পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোরও সময়। চিং মিং উৎসব বা "টম্ব সুইপিং ডে" হল সেই বিশেষ দিন, যখন মানুষ তাদের পূর্বপুরুষদের কবর পরিষ্কার করে, সেখানে ফুল ও খাবার দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

এটি একদিকে শোক প্রকাশের দিন, আবার অন্যদিকে নতুন শুরুর প্রতীক। অনেকেই এই দিনে পার্কে ঘুরতে যায়, ঘুড়ি ওড়ায়, প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করে। চীনা সংস্কৃতিতে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, কারণ এটি পরিবার ও পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সংযোগের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

পশ্চিমা বিশ্বে বসন্ত উদযাপনের অন্যতম প্রধান উৎসব হলো ইস্টার, যা খ্রিস্টান ধর্মের সঙ্গে জড়িত। এটি যিশু খ্রিস্টের পুনরুত্থানের স্মরণে পালিত হয়, যা নতুন জীবনের প্রতীক।

ইস্টার এগস 

ইস্টার সানডেতে গির্জায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়, আর পরিবার-পরিজন একত্রিত হয়ে দিনটি উদযাপন করে। শিশুদের জন্য ইস্টার সবচেয়ে বেশি আনন্দের, কারণ এই দিনে ইস্টার এগ হান্ট হয়, যেখানে রঙিন ডিম লুকিয়ে রাখা হয়, আর বাচ্চারা সেগুলো খুঁজে বের করে। বসন্তের সময় চারপাশ রঙিন হয়ে ওঠে, বিশেষত টিউলিপ ও ড্যাফোডিল ফুল চারদিকে ফুটে ওঠে, যা বসন্তের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসন্ত উদযাপনের ধরন আলাদা হলেও, একটি বিষয় সবার মধ্যে মিল পাওয়া যায়—বসন্ত হলো নতুন সূচনা, নতুন আশার প্রতীক। এই সময় প্রকৃতি যেমন নতুন হয়ে ওঠে, মানুষও নতুন করে জীবন শুরু করার প্রেরণা পায়।

রঙের খেলা, ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ, প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া—এসবই বসন্তকে করে তোলে বছরের সবচেয়ে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত ঋতু। বসন্ত মানেই উৎসব, বসন্ত মানেই আনন্দ, আর বসন্ত মানেই জীবনের নতুন সূচনা।

iamsami0700@gmail.com

Share this news