Bangla
a year ago

যেমন খুশি তেমন সাজো!

Published :

Updated :

ডিসেম্বর শেষে জানুয়ারি। সময়টা বছরের শুরু। নতুন বই পাওয়ার আনন্দের আমেজ এখন প্রতিটা শিক্ষার্থীর চোখে মুখে। নতুন বছরে নতুন শ্রেণীকক্ষে নতুন শ্রেণীর পড়া নিয়েই যেন ব্যস্ত সবাই। ছুটির ঘন্টা বাজতে যখন আর কিছুক্ষন, ঠিক তখনই কেরাণী চাচা নোটিশ নিয়ে আসলেন, আগামীকাল কোন ক্লাস হবেনা। কারণ আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা।

জানুয়ারির প্রথমদিকেই আমাদের দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে আয়োজন করা হয় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা। বিস্কুট দৌড়, মোড়গ লড়াই, মিউজিক্যাল চেয়ার, হাড়িভাংগা, উচ্চলাফ, দীর্ঘ লাফসহ নানা ধরনের ইভেন্ট থাকে এই প্রতিযোগিতায়। এসময় শিক্ষার্থী-শিক্ষক থেকে শুরু করে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণজুড়ে থাকে এক উৎসবমুখোর পরিবেশ।

প্রতিবছরই এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার এক অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে থাকে ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ নামক ইভেন্টটি। এই ইভেন্টটি মূলত একটি বিনোদনমূলক পর্ব। শিশুরা তাদের নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন চরিত্র হিসেবে নিজেদেরকে প্রদর্শন করে থাকে।

কেউ গায়ের বধূ, কেউ পুলিশ অফিসার আবার কেউবা শিক্ষক সেজে হাজির হয়। নিজ চরিত্র অনুযায়ী নানারকম কস্টিউমও বেশীরভাগ সময় শিক্ষার্থীরা নিজেরাই তৈরী করে থাকে।

'যেমন খুশি তেমন সাজো' ইভেন্টের মাধ্যমে শিশুরা আনন্দের মধ্য দিয়ে নিজেদের সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটাতে পারে। এছাড়াও এই ইভেন্টটি শিশুদের ভবিষ্যত চিন্তার বহিঃপ্রকাশও বটে। তারা বড় হয়ে কী করতে চায় সেই সুপ্ত বাসনা নিজের সাজপোষাকের মাধ্যমে প্রকাশ করে।

যেমন খুশি তেমন সাজো খেলা শিশুদের নিজের শৈলী ও ব্যক্তিত্ব বিকাশ করতে সাহায্য করে। এটি তাদের অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে এবং নতুন বন্ধু তৈরি করতেও শেখায়।

কানাডিয়ান-আমেরিকান মনস্তত্ত্ববিদ আলবার্ট বান্দুরা ১৯৭১ সালে ‘সোশ্যাল লার্নিং’ নামে একটি থিওরি প্রকাশ করেন। তার মতে, বাচ্চারা সামাজিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠতে শিখে। কখনো পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে, কখনোবা কেউ নির্দেশ করলে সেভাবে শিখে। এ শিক্ষা গুলো তাদের মধ্যে স্থায়ী হয়। পরবর্তী সময়ে ভিন্ন প্রসঙ্গে বা পরিস্থিতিতে সেসকল অভ্যাস দেখা যায়। এটাকে বলা হয় কগনিশন।

যেমন একটি শিশু যদি তার কোনো সহপাঠী বা বড় ভাই/আপুকে দেখে যে সে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার এর পোষাক পরে প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়েছে, তাহলে শিশুটির মাঝে সে পেশায় যাওয়ার বাসনা তৈরি হতে পারে যা সে পরবর্তীতে নিজের মধ্যে ধারণ করে এগিয়ে যায়।

বাংলাদেশে 'যেমন খুশি তেমন সাজো' বছরের অন্যান্য সময়, যেমন - নববর্ষ, বিজয় দিবস বা অন্যান্য উৎসবেও হয়ে থাকে। বাচ্চারা তাদের প্রিয় পোশাক পরে এবং পার্ক, চত্বর বা অন্যান্য জনসমাগমের স্থানে একত্রিত হয়।

পশ্চিমা বিশ্বে অবশ্য এর প্রচলন বেশ পুরনো। প্রতিবছরের ৩১ অক্টোবর ইউরোপ, আমেরিকাসহ বেশ কিছু অঞ্চলে  অনুষ্ঠিত হয় 'হ্যালোয়িন'। এই আয়োজনের একটি বড় অংশজুড়ে থাকে নিজ পছন্দের থিমে নিজেকে নানারকমের পোশাকে সাজিয়ে নেওয়া। অনেকেই নিজের প্রিয় চলচ্চিত্র, টেলিভিশন অনুষ্ঠান বা ভিডিও গেম থেকে একটি চরিত্র হিসাবে নিজেকে প্রদর্শন করে থাকেন।

হ্যালোয়িন ছাড়াও বিশ্বজুড়ে আরও নানান উৎসব আয়োজিত হয় যেখানে সকল বয়স আর শ্রেণির মানুষ অংশ নেয়। শামবালা উৎসব হলো এমন একটি উদাহরণ, একটি সঙ্গীত উৎসব। ইংল্যান্ডের নর্থহ্যাম্পটনশায়ারে অনুষ্ঠিত হয় এটি। সমসাময়িক সঙ্গীত ছাড়াও এ উৎসবে রক, পপ, লোকজ, বিশ্ব সঙ্গীত এবং অন্যান্য শিল্পকলার আয়োজন করা হয়। এ উৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ হলো উৎসবে আশা দর্শনার্থীদের পরিহিত নানা ঢঙের পোষাক।

প্রতিবছর জানুয়ারিতে ইতালির ভেনিস শহরে অনুষ্ঠিত হওয়া ভেনিস কার্ণিভালের উল্লেখ করা যেতে পারে। উৎসবটিতে সকলে একত্রিত হয় এবং গান ও নাচের সাথে উদযাপন করে। অংশগ্রহণকারীরা ১৭ শতকের ভেনিসের মতো করে পোষাক পরে প্যারেডে অংশ নেয়। জার্মানির ওয়েভ গথিক উৎসবও এমন একটি উৎসব যেখানে যেমন খুশি তেমন সাজোর আঁচ মেলে।

এছাড়াও ভারত এবং এর আশেপাশের দেশগুলো, যেমন, নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান, বিভিন্ন দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা হালফ্যাশনের অংশ হিসেবে যোগ হয়েছে 'বলিউড ডে' পালন, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে বিভিন্ন বলিউড তারকার অভিনীত কোনো চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলে। এটা অবশ্য আধুনিক ‘কসপ্লে’র অংশই মনে করেন অধিকাংশ। 

tuwubaa2002@gmail.com

Share this news