
Published :
Updated :

আজকের এই পৃথিবীতে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। দৈনন্দিন কাজ থেকে শুরু করে যোগাযোগ বা বিনোদন, সবকিছুই নির্ভর করে এই ছোট্ট ডিভাইসটির ওপর। কিন্তু এই ডিভাইসের সবচেয়ে দুর্বল দিকটি হলো ব্যাটারি যা নিয়ে আমাদের অভিযোগের কমতি নেই।
তবে সুখবর হলো যে সঠিক অভ্যাস ও যত্নে ফোনের ব্যাটারির পারফরম্যান্স এবং ব্যাটারি হেলথ দুটোই অনেকাংশে বাড়ানো যায়।
বর্তমানের প্রায় সব স্মার্টফোনে ব্যবহৃত হয় লিথিয়াম-আয়ন বা লিথিয়াম-পলিমার ব্যাটারি। এগুলো হালকা এবং দ্রুত চার্জ হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এগুলো ক্ষয় হতে থাকে, ফলে ব্যাটারির চার্জ ধারণক্ষমতা কমে যায়।
ব্যাটারি নষ্ট হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। তার মাঝে সবচেয়ে বড় কারণ হলো অতিরিক্ত তাপমাত্রা। তাপ ব্যাটারির সবচেয়ে বড় শত্রু। এছাড়া একেবারে ০% থেকে ১০০% পর্যন্ত একেবারে নিরবিচ্ছিন্ন চার্জ দেয়াও ব্যাটারির ক্ষতি করে কারণ এতে ব্যাটারির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ফাস্ট চার্জ ফিচারটিও ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর কারণ ফাস্ট চার্জে তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যায়। চার্জ দেওয়ার সময় ফোন ব্যবহার করাও ব্যাটারির ক্ষতি হওয়ার আরেকটি বড় কারণ। তবে, ব্যাটারি পারফরম্যান্স বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু ট্রিকস রয়েছে।
সম্পূর্ণ চার্জ নয়, আংশিক চার্জ দিন
ফোনকে একেবারে ০% পর্যন্ত ব্যবহার করে তারপর ১০০% পর্যন্ত চার্জ না দিয়ে, ২০% থেকে ৮০% এর মধ্যে রাখলে এবং ৪০/৫০% এ আসার পরই চার্জে দিলে ব্যাটারির উপর কম স্ট্রেস পড়ে এবং ব্যাটারি হেলথ দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
সারা রাত চার্জে রাখবেন না
ফোন সারারাত ১০০% চার্জে থাকলে ব্যাটারির তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং 'ট্রিকল চার্জিং' নামক একটি প্রক্রিয়া শুরু হয় যা ব্যাটারির উপর অত্যন্ত বাজে প্রভাব ফেলে।
ফোন ঠান্ডা রাখুন
তাপ ব্যাটারির সবচেয়ে বড় শত্রু। গেম খেলা বা চার্জ দেওয়ার সময় ভারী অ্যাপ ব্যবহার ব্যাটারিকে অতিরিক্ত গরম করে ফেলে। তাই চার্জ দেয়ার সময় ফোন ব্যবহার করবেন না। এছাড়া, ফোনকে গরম জায়গায় (যেমন রোদে, বা বালিশের নিচে) রাখবেন না। যদি ফোন অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়, তাহলে কভার খুলে ফেলুন, এতে তাপ সহজে বেরিয়ে যেতে পারবে।
পাওয়ার সেভার মুড ব্যবহার করুন
অ্যান্ড্রয়েড ফোনে থাকা ব্যাটারি সেভার মুড ব্যবহার করলে তা ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপগুলো বন্ধ করে রাখে এবং স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখে। এতে ফোনের প্রসেসিং পাওয়ারের অতিরিক্ত ব্যবহার হয় না ফলে চার্জের স্থায়িত্ব বেড়ে যায়।
অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ও ফিচার বন্ধ রাখুন
ব্যাকগ্রাউন্ডে চলা অ্যাপ বা ফিচার (যেমন জিপিএস/লোকেশন) প্রচুর ব্যাটারি খরচ করে। সেসাথে অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় অব্যবহৃত ফিচারগুলো বন্ধ রাখুন। এছাড়া ব্লুটুথ বা ওয়াইফাই ব্যবহার না করলেও তা বন্ধ করে রাখুন।
সফটওয়্যার আপডেটেড রাখুন
প্রতিটি সফটওয়্যার আপডেটে ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট আরও উন্নত হয়। তাই ফোনের অপারেটিং সিস্টেম ও ফার্মওয়্যার সর্বদা আপডেটেড রাখুন।
প্রয়োজনে ফ্লাইট মুড ব্যবহার করুন
যখন আপনার ফোনের চার্জ অনেক কম, দ্রুত চার্জ হওয়া প্রয়োজন কিংবা চার্জ খুবই কম, কিছুক্ষণ ফোন অন রাখা প্রয়োজন, তখন ফ্লাইট মুডের ব্যবহার আপনার ফোন আরেকটু বেশি সময় চালু রাখতে বা চার্জ দ্রুত করতে সাহায্য করবে। আমাদের ফোনের ব্যাটারির বড় একটি অংশই চলে যায় নেটওয়ার্ক কানেকশন ২৪/৭ বজায় রাখার পেছনে। তাই ফ্লাইট মুড ব্যবহার করলে ফোন সেই অতিরিক্ত প্রসেসিং পাওয়ার ব্যবহার করে না কানেকশন টিকিয়ে রাখতে। নেটওয়ার্ক সিগনাল দুর্বল এরকম জায়গায় ফ্লাইট মুডের ব্যবহার ব্যাটারিকে অনেক সময় বেশি টিকিয়ে রাখতে সক্ষম।
দীর্ঘমেয়াদে ব্যাটারি হেলথ ভালো রাখার বেশ কিছু উপায় রয়েছে। দীর্ঘদিন ফোন ব্যবহার না করে রেখে দিতে হলে ব্যাটারি ৫০% চার্জে রেখে আলমারিতে রেখে দিন। পুরোপুরি ১০০% চার্জ বা পুরোপুরি ফাঁকা রেখে দিলে ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিয়মিত ফাস্ট চার্জ ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। ফাস্ট চার্জিং সুবিধাজনক হলেও এর ফলে প্রচুর তাপ সৃষ্টি হয় এবং এতে করে ব্যাটারির কেমিক্যাল সেল ক্ষয় হয়ে যায়।
ব্যাটারি হেলথ মানে শুধু এক চার্জে কতক্ষণ ফোন চলে তা নয়, বরং দীর্ঘ সময়ের ভিত্তিতে ব্যাটারি কেমন পারফর্ম করছে তা। সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারলে ব্যাটারির ক্ষয় কমিয়ে আনা এবং বহু বছর পরেও ফোন নির্ভরযোগ্যভাবে ব্যবহার করতে পারা মোটেও কঠিন কিছু নয়।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ একটাই, সঠিক ভাবে চার্জ দিতে পারা ও তাপমাত্রা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেতে না দেওয়া ব্যাটারির দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করে। অল্প যত্ন ও সচেতনতায় আপনি শুধু ব্যাটারি নয়, পুরো ফোনের জীবনকালই দীর্ঘ করতে পারবেন।
samiulhaquesami366@gmail.com

For all latest news, follow The Financial Express Google News channel.