Sports
3 years ago

সেরা দল ছাড়াই সেরা সাফল্য পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

Published :

Updated :

মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের ১৭ উইকেট পতনের দিনে ১৭ রানের জয়ে ২-০তে টেস্ট সিরিজ জিতে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্পিন ঝলক আর ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ম্যাচ শেষ চতুর্থ দিনেই।

নিয়মিত অধিনায়ক ও সেরা দল ছাড়াই বিরুদ্ধ কন্ডিশন ও উইকেটে সিরিজ জয়, ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশড হওয়ার পর এভাবে ঘুরে দাঁড়ানো, নিশ্চিতভাবেই নিকট অতীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা সাফল্য।

গত কয়েক বছরে জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তানের পর এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে এই হার আরেকবার ফুটিয়ে তুলল টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের দীনতা।

শেষ ইনিংসে ২৩১ রান তাড়ায় বাংলাদেশের ৯ ব্যাটসম্যান স্পর্শ করেন দুই অঙ্ক। কিন্তু পঞ্চাশ ছাড়াতে পারেননি কেউ। ফিফটি জুটিও মোটে একটি। দল তাই অলরাউট ২১৩ রানে।

প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে রাকিম কর্নওয়ালের শিকার ৪ উইকেট। এই প্রথম বাংলাদেশের বিপক্ষে এক টেস্টে ৯ উইকেট পেলেন কোনো ক্যারিবিয়ান স্পিনার।

ম্যাচের শেষও কর্নওয়ালের হাত ধরেই। শেষ জুটিতে মিরাজের দারুণ ব্যাটিংয়ে যখন জমে উঠেছে লড়াই, জোমেল ওয়ারিক্যানের বলে কর্নওয়ালের দুর্দান্ত ক্যাচে সমাপ্তি সব উত্তেজনার, খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

বাংলাদেশ ইনিংসের সব উইকেটই নেন ক্যারিবিয়ান স্পিনাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইতিহাসে মাত্র তৃতীয়বার ১০ উইকেটই এলো স্পিনে, আগের দুবার ছিল সেই ১৯৫০ ও ১৯৫৬ সালে!

রানের হিসেবে টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট ব্যবধানের পরাজয় এটি। তবে খর্বশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হারের সান্ত্বনা নয় সেটিও। ২০১২ সালের পর এই প্রথম দেশের মাটিতে হোয়াইটওয়াশড হলো বাংলাদেশ। সেবারও ছিল ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষেই।

এই পরাজয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পয়েন্টের মুখ আর দেখা হলো না বাংলাদেশের। অথচ খর্বশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পুরো ১২০ পয়েন্টের আশায় সিরিজ শুরু করেছিল দল।

অনেক মোড় বদলের দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ৩ উইকেটে ৪১ রান নিয়ে। তাইজুল ইসলামের ৪ উইকেট আর নাঈম হাসানের ৩ উইকেটে ১১৭ রানেই গুটিয়ে যায় তারা। বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৩১।

২১৫ রানের বেশি তাড়া করে কখনোই টেস্ট জিততে পারেনি বাংলাদেশ। চতুর্থ দিনের স্পিন সহায়ক উইকেটে এবারও কাজটি ছিল ভীষণ কঠিন। তবু আশা জাগায় তামিম ইকবালের ব্যাট।

টার্নিং উইকেটে স্রেফ উইকেট আঁকড়ে না রেখে বল নতুন ও শক্ত থাকতেই দ্রুত রান তোলার কৌশল নেন তামিম। পেস-স্পিনে একের পর এক বাউন্ডারি আসতে থাকে তার ব্যাটে। দলের পঞ্চাশ হয়ে যায় একাদশ ওভারেই। ১৩ ইনিংস পর উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের ফিফটি!

সেই হর্ষ একটু পরই রূপ নেয় বিষাদে। জুটি ভাঙতে বল হাতে নেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। ম্যাচের চিত্র বদলের সেখানেই শুরু। প্রথম বলেই তাকে উইকেট উপহার দেন সৌম্য সরকার।

তামিম ৯ চারে ফিফটি স্পর্শ করেন ৪৪ বলে। তার পথচলারও সমাপ্তি সেখানেই। ব্র্যাথওয়েটেরই নিরীহ এক বলে আলতো ড্রাইভে ক্যাচ দেন শর্ট কাভারে, যে ফাঁদ পেতে রাখা স্রেফ ওই শটের জন্যই!

চা-বিরতির আগে আরেকটা বড় ধাক্কা হজম করে বাংলাদেশ। চরম হতাশার সিরিজে শেষ ইনিংসেও নাজমুল হোসেন শান্ত পারেননি অবদান রাখতে। যথারীতি তিনিও বিলিয়ে আসেন উইকেট।

চা-বিরতির পরও চলতে থাকে সেই ধারা। কেবল মুশফিকুর রহিমের উইকেটই বলা যায় ভালো ডেলিভারিতে। মুমিনুল হক, মোহাম্মদ মিঠুন, লিটন দাস, সবাই উদার হাতে বিলিয়ে আসেন উইকেট।

এক প্রান্ত থেকে টানা বোলিং করে যান কর্নওয়াল, ইনিংসের প্রায় অর্ধেক ওভার করেন একাই। অন্য পাশে ওয়ারিক্যানও খুঁজে পান ছন্দ।

অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আউট হলেন তাইজুল ইসলাম, জয় থেকে তখনও ৬৮ রান দূরে বাংলাদেশ। নাঈম হাসান ও আবু জায়েদকে নিয়ে তবু লড়াই চালিয়ে যান মিরাজ।

জুটি ভাঙতে বল হাতে নিয়ে আবারও সফল হন ব্র্যাথওয়েট। এবার তার শিকার নাঈম হাসান। মিরাজ তবু হাল ছাড়েন না। শেষ সঙ্গীকে নিয়ে কর্নওয়ালের পরপর দুই ওভারে মারেন একটি করে ছক্কা ও চার।

নিবু নিবু হয়ে টিকে থাকে আশা। কিন্তু পুরো জ্বলে ওঠা আর হয় না। ৩১ রানে স্লিপে ধরা পড়ে হতাশায় থমকে দাঁড়ান মিরাজ। ক্যারিবিয়ানরা তখন দিগ্বিদিক ছুটছেন বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসে।

Share this news