Published :
Updated :
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখা কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার প্রভাবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে।
সাময়িক হিসাবে (মার্চ পর্যন্ত) স্থির মূল্যে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ হবে বলে বিবিএসের প্রাক্কলন বলছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
এ হিসাবে চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপির আকার দাঁড়াবে ৪৪ লাখ ৩৯ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল ৩৯ লাখ ৭১ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জিডিপি প্রাক্কলনের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে। এর আগে বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম সাময়িক হিসাবে প্রবৃদ্ধির হার জানিয়েছিলেন।
চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয় তা ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে সংশোধন করে।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে চুড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। এর আগে অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আর মহামারীর ধাক্কায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে গিয়েছিল ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে।
বিবিএস এর ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং উইংয়ের পরিচালক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, “আমাদের নিয়ম অনুযায়ী দেশের অর্থনীতির প্রধান চলকগুলোর তথ্য নিয়ে আমরা প্রতিবেদন তৈরি করি। মাঠ পর্যায় থেকে যে তথ্য সংগ্রহ করেছি সেই তথ্য অনুযায়ী যে হিসাব পাওয়া গেছে সেটির ভিত্তিতেই এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।”
বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রধানত কৃষি, শিল্প, উৎপাদন ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরের প্রাক্কলনে কমে যাওয়ার প্রভাব দেখা গেছে সার্বিক প্রবৃদ্ধির সাময়িক হিসাবে।
চলতি অর্থবছর কৃষিখাতে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৩.০৫ শতাংশ।
এবার শিল্পে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮.১৮ শতাংশ, আগের অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯.৮৬ শতাংশ।
জিডিপির হিসাবের বড় অনুষঙ্গ সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫.৮৪ শতাংশ; আগের অর্থবছরে প্রকৃত প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.২৬ শতাংশ।
অপরদিকে সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছরে উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৯.২৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল ১১.৪১ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি কমেছে। এবার খাটটিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯.২৩ শতাংশ, গত অর্থ বছরে এই খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১১.৪১ শতাংশ।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ডলারের হিসেবে দেশের জিডিপির আকার কমে ৪৫৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল ৪৬০ বিলিয়ন ডলার। বিনিময়হার জনিত কারণে মোট আকার কমেছে ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন বলা হয়েছে, প্রাক্কলনে কৃষি খাতের মধ্যে শস্য উপখাতে ২ দশমিক ২৬ শতাংশ, পশুপালনে ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ, বন উপখাতে ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং মৎস্য খাতে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে।
সাময়িক হিসাবে উৎপাদন খাতের মধ্যে বড় শিল্প উপখাতে প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, এসএমই উপখাতে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং কুটির শিল্প উপখাতে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১০ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
এছাড়া বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ, পানি সরবরাহ উপখাতে ১০ দশমিক ০২ শতাংশ, নির্মাণ খাতে প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ।
সেবা খাতের মধ্যে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা খাতে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ, পরিবহন খাতে ৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ, হোটেল রেস্তোরাঁ খাতে হয়েছে ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
সাময়িক হিসাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ, আর্থিক ও বীমা খাতে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, আবাসন খাতে ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ, পেশাদার বিজ্ঞান ও কারিগরি খাতে ৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ, প্রশাসনিক ও সহযোগিতামূলক কার্যক্রম খাতে ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ, সরকারি প্রশাসন এবং প্রতিরক্ষা খাতে ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ, শিক্ষা খাতে হয়েছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ, জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক কার্যক্রমে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ, বিনোদন খাতে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং অন্যান্য সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ।