Published :
Updated :
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে ৯৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন। এই পরিমাণ অর্থ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চেয়ে ৭ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা বেশি।
জাতীয় সংসদে বাজেট উন্মোচনের সময় অর্থ উপদেষ্টা এই বরাদ্দের ঘোষণা দেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার একটি বিজ্ঞানভিত্তিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে, যা একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠায় অপরিহার্য।
তিনি বলেন, আধুনিক শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং কারিগরি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, যেন একটি সহায়ক ও যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা
প্রাথমিক ও গণশিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এই খাতে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, শিশুর মানসিক বিকাশের ভিত্তি প্রাথমিক শিক্ষায় গড়ে ওঠে। এ কারণে সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি একাধিক সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং একটি সহায়ক শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করতে গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এই সংস্কার কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ইতোমধ্যে ৫ হাজার ৯৪৬টি শ্রেণিকক্ষ, ১৭ হাজার ১৬৪টি ওয়াশ ব্লক এবং ৪ হাজার ৪৫০টি টিউবওয়েল নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়া বর্তমানে ২১ হাজার ২৭৮টি শ্রেণিকক্ষ, ১৮ হাজার ৪৭৬টি ওয়াশ ব্লক এবং ৬ হাজার ৯৮৪টি টিউবওয়েল নির্মাণাধীন রয়েছে।
শিক্ষা সহজপ্রাপ্য ও মানসম্মত করতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোট ৯১ কোটি ৯৫ লাখ পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে।
বর্তমানে প্রাথমিক স্তরের সব শিক্ষার্থী ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) পদ্ধতিতে উপবৃত্তি পাচ্ছে, যার ফলে উপবৃত্তি বিতরণে স্বচ্ছতা ও সময়মতো প্রদান নিশ্চিত হয়েছে।
এছাড়া, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল ফিডিং কর্মসূচি’ ১৫০টি উপজেলায় সম্প্রসারণ করা হবে, যার জন্য ৫ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের ভর্তি বৃদ্ধি, পুষ্টির মানোন্নয়ন এবং উপস্থিতি বৃদ্ধি। আগামী অর্থবছরের জন্য এই কর্মসূচিতে ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা খাতে উন্নয়নের জন্য সরকার ৪৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৪৪ হাজার ১০৯ কোটি টাকার চেয়ে বেশি।
বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে ৬২টি প্রকল্প চলমান রয়েছে, যার মধ্যে শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগে ১ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে সরকার ৫১ লাখ দরিদ্র কিন্তু মেধাবী মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী, ৮ লাখ উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী এবং ১ লাখ ৬৫ হাজার স্নাতক স্তরের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দিয়েছে।
এছাড়া, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য হালনাগাদ পাঠ্যপুস্তক বিতরণের জন্য ১ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা
দেশের ও বিদেশের শ্রমবাজারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা খাতে ১২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকার চেয়ে বেশি।