Bangla
2 days ago

২০২৫-২৬ অর্থবছরের ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন

Published :

Updated :

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে, যেখানে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে।

রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এনইসি চেয়ারপারসন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সভায় সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টারাও উপস্থিত ছিলেন।

এই বরাদ্দের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা এবং প্রকল্প ঋণ ও অনুদান থেকে আসবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব তহবিল মিলিয়ে মোট বরাদ্দ দাঁড়াবে প্রায় ২ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা।

বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, “অনুমোদিত এডিপি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নতুন বাজেটের অংশ, যা ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ঘোষণা করবেন।”

তিনি বলেন, “আগামী অর্থবছরের বাজেটের মূল কৌশল হলো অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা, মুল্যস্ফীতি হ্রাস করা, বাজেট ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং বাজেটকে টেকসই করা।”

তিনি আরও যোগ করেন, “একই সঙ্গে দেশি বা বিদেশি ঋণের ফাঁদে না পড়ে ঋণ পরিশোধে বা উন্নয়ন ও পরিচালন ব্যয় মেটাতে যেন অতিরিক্ত চাপ না হয় তা নিশ্চিত করাই হবে আমাদের লক্ষ্য। আমরা অতিতে যে দুষ্টচক্রে পড়েছিলাম সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করব।”

রাজস্ব আদায় হঠাৎ বাড়ানো সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি। “তা সত্ত্বেও সরকার বাজেট ঘাটতি জিডিপির চার শতাংশের মধ্যে রেখে ব্যয় সমান রাখার চেষ্টা করবে।”

তিনি বলেন, “মূল্যস্ফীতির প্রবণতা বিবেচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হঠাৎ করে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমাতে পারবে না।”

“শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ছাড়াও এই বাজেট ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বাজেট হবে না যেখানে স্বল্পমেয়াদে সাধারণ মানুষকে সন্তুষ্ট করার জন্য এমন কোনও ব্যয় করা হবে না যা পরবর্তীতে দায় বাড়িয়ে দিতে পারে,” বলেন ড. মাহমুদ।

তিনি আরও জানান, নতুন এডিপিতে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ছাড়া নতুন কোনো বড় মেগা প্রকল্প রাখা হয়নি।

তিনি বলেন, “কিছু অসুবিধা সত্ত্বেও সরকার উন্নয়ন অংশীদার এবং বিদেশি পক্ষগুলোর কাছে বছরের পর বছর ধরে বকেয়া পাওনা ধীরে ধীরে পরিশোধ করছে।”

সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন কিছুটা ধীর গতির হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ বছর এটি কম হবে কারণ ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে অনেক প্রকল্প যাচাই-বাছাই করেছে, বরাদ্দ কমিয়েছে, তহবিলের অপব্যবহার রোধ করেছে যার ফলে বাস্তবায়নের ধারা কিছুটা ধীর হয়ে গেছে।”

পূর্ববর্তী সরকারের আমলে নেওয়া কিছু প্রকল্প নিয়ে তিনি বলেন, “পায়রা বন্দর, কর্ণফুলী টানেল এবং বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) এর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদে প্রকৃত ফলাফল বিবেচনা না করেই পূর্ববর্তী সরকারের আমলে এই প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয়েছিল।”

নতুন এডিপিতে পাঁচটি খাত—পরিবহন ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিক্ষা, গৃহায়ন ও স্বাস্থ্য—মিলে মোট বরাদ্দের প্রায় ৭০ শতাংশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতেই বরাদ্দ প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা।

এছাড়া, শীর্ষ ১০ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ পেয়েছে।

এডিপিতে মোট ১,১৭১টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে বিনিয়োগ, সম্ভাব্যতা যাচাই, কারিগরি সহায়তা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে অনেক প্রকল্প পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ও জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় বাস্তবায়নের জন্য রাখা হয়েছে।

এছাড়া, ২৫৮টি প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যও নির্ধারণ করা হয়েছে। 

Share this news