Bangla
2 years ago

আবাসিকে গ্যাসের দাম বাড়াতে ভিন্ন কৌশল তিতাসের

এফই ফাইল ছবি
এফই ফাইল ছবি

Published :

Updated :

গ্যাস বিতরণ সংস্থা তিতাসের মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকরা মাসে যে পরিমাণ বিল দিচ্ছেন তার চেয়ে ৩৯ থেকে ৪৭ শতাংশ বেশি গ্যাস ব্যবহার করছেন দাবি করে কোম্পানিটি ওইসব গ্রাহকদের কাছ থেকে এ হারে বাড়তি বিল নিতে চায়।

অতিরিক্ত গ্যাস পোড়ানোর এ হিসাব বিবেচনায় নিয়ে প্রি-পেইড মিটারের বাইরে থাকা ২৫ লাখ ২৫ হাজার আবাসিক গ্রাহকের মাসিক বিল বাড়িয়ে পুনঃবিবেচনার প্রস্তাব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে জমা দিয়েছে কোম্পানিটি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

তিতাসের নতুন আবেদনে সিঙ্গেল বার্নারের জন্য ৭৬ দশমিক ৬৫ ঘনমিটার এবং ডাবল বার্নারের জন্য ৮৮ দশমিক ৪৪ ঘনমিটার বিবেচনা নিয়ে মাসিক বিল নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। তবে গ্যাসের ইউনিট প্রাইস বাড়ানোর কোনো প্রস্তাব করা হয়নি।

হিসাব করে দেখা গেছে, এ প্রস্তাব বিবেচনায় নিলে একজন গ্রাহককে সিঙ্গেল বার্নার চুলার জন্য ১৩৭৯ টাকা এবং ডাবল বার্নার চুলার জন্য ১৫৯২ টাকা গুনতে হবে। এতে বিল বাড়বে সিঙ্গেল বার্নারে ৩৯ শতাংশ এবং ডাবল বার্নারে ৪৭ শতাংশের কিছু বেশি।

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ গ্যাসের দাম বাড়ানো নয়, শুধু নন মিটার গ্রাহকদের গ্যাসের ব্যবহার পুনঃবিবেচনার জন্য আবেদন করার কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, গ্যাসের ইউনিট প্রাইস আগের মতোই থাকবে।

তিতাসের আবেদন পাওয়ার কথা জানিয়ে বিইআরসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, “সেটা এখনও তালিকভুক্ত করা হয়নি। কালকের মধ্যে সেটা তালিকাভুক্ত হবে। তারপর এবিষয়ে মন্তব্য করা যাবে।”

বর্তমানে রান্নার গ্যাসের জন্য দুই চুলার (ডাবল বার্নার) মাসিক বিল ১০৮০ টাকা এবং এক চুলার মাসিক বিল ৯৯০ টাকা করা হয়েছে। সবশেষ ২০২২ সালের ৫ জুন গ্যাসের দাম বাড়ানোর সময় নতুন এ বিল নির্ধারণ করা হয়। আগে যা ছিল যথাক্রমে ৯৭৫ ও ৯২৫ টাকা।

এরপর চলতি বছর ১৮ জানুয়ারি সরকারের নির্বাহী আদেশে শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বাণিজ্যিক খাতে আবার গ্যাসের দাম বাড়ানো হলেও বাসাবাড়িতে বাড়ানো হয়নি। তখন প্রতি ইউনিটে সর্বোচ্চ ১৯ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

বর্তমানে তিতাসের বিতরণ এলাকায় ২৮ লাখ ৫৭ হাজার বৈধ আবাসিক গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে ২৫ লাখ ২৫ হাজার নন মিটার আবাসিক গ্রাহক এবং ৩ লাখ ৩২ হাজার প্রি-পেইড মিটারভিত্তিক আবাসিক গ্রাহক। এর মধ্যে এক লাখ ৫৫ হাজার একমুখী চুলা বা সিঙ্গেল বার্নার এবং ২৩ লাখ ৭ হাজার দ্বিমুখী বা ডাবল বার্নার চুলার গ্রাহক রয়েছেন।

ইতোমধ্যে যারা প্রি-পেইড মিটার পাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তাদের মাসিক খরচ গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে নেমে এসেছে বলে ভোক্তাদের মধ্যে আলোচনা আছে।

সর্বশেষ ২০২২ সালের জুনের নির্ধারিত মূল্যহার অনুযায়ী, আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি ইউনিট ১৮ টাকা হারে দাম ঠিক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সিঙ্গেল বার্নারের জন্য ৫৫ ঘনমিটার এবং ডাবল বার্নারের জন্য ৬০ ঘনমিটার গ্যাস বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়টি তিতাস গ্যাসের কাজ নয় উল্লেখ করে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমরা শুধু গ্যাস বিতরণ করি আর ১৩ পয়সা হারে মার্জিন পাই।

তিনি বলেন, “যারা প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করে না তারা আনলিমিটেড গ্যাস ব্যবহার করে, বেশি পরিমাণ গ্যাস ইউজ করে। বিইআরসি প্রি পেইড মিটারে গ্যাসের ব্যবহার বিবেচনায় নিয়ে সিঙ্গেল বার্নারের জন্য ৫৫ ঘনমিটার আর ডাবল বার্নারের জন্য ৬০ ঘনমিটার বরাদ্দ করেছে।

“কিন্তু বিষয় হচ্ছে মানুষের জন্য প্রি-পেইড মিটার থাকে তখন তারা কনসাসলি অনেক কম গ্যাস ব্যবহার করে। মিটার যখন থাকে না তখন আনলিমিটেড গ্যাস ব্যবহার করে। আমরা এটা বলার চেষ্টা করেছি।”

এ বিষয়ে তিতাসের নিজস্ব অনুসন্ধান ও জরিপের তথ্য বিইআরসিকে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

আবাসিকে দাম বাড়াতে তিতাসের ভিন্ন এ কৌশলের বিষয়ে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, “হাজার হাজার ছিদ্রে জরাজীর্ণ পাইপলাইন, সাবস্ট্যান্ডার্ড বিতরণ সিস্টেম দিয়ে তারা গ্যাস সরবরাহ করে যাচ্ছে। এটাকে সরবরাহ সিস্টেম না বলে ভোক্তাদের জন্য মৃত্যুফাঁদ বলাই ভালো। রক্ষণাবেক্ষণে চরম বিপর্যয়ের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের এমন আবদার আমি রীতিমতো দুঃসাহস মনে করি। বিস্মিত না হয়ে পারছি না।

“তাদের ওখানে নানা ধরনের দুর্নীতি, অপচয় ও তছরুফ হচ্ছে। সেগুলো প্রতিরোধের জন্য তাদের সক্ষমতা না হওয়া পর্যন্ত তাদের সব ধরনের সিস্টেম লস বেনিফিট (২%), বিনিয়োগকৃত মূলধনের ওপর ১০ শতাংশ মুনাফা, ব্যয় অপেক্ষা আয় বেশি হওয়া সত্বেও তাদের ১৩ পয়সা করে বিতরণ চার্জ দেওয়া হয়। এগুলো আমরা স্থগিত রাখতে বলেছি।”

বিইআরসি এখন প্রতি চুলার জন্য যে টাকা নিচ্ছে সে পরিমাণ গ্যাসও দিতে পারছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিইআরসির কাছে এর প্রমাণ আছে। তারা ৪০ ঘনমিটার বিবেচনায় নিতে চেয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে আবার বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাবটি যুক্তি সঙ্গত নয়।

Share this news