Bangla
6 months ago

বাঙালির পানের গল্প

বয়স্ক থেকে তরুণ সবার প্রিয় পান

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

Published :

Updated :

পান শব্দটি শুনলেই কী মাথায় আসে? মুখভর্তি করে পান সুপারি নিয়ে বুড়ো দাদুর খোশগল্প কিংবা বাংলা ছায়াছবির মুখভর্তি পান খেয়ে ঠোঁট লাল করা সেই পাঞ্জাবি পরা শুক্কুর আলী নামের লম্বা দাড়িওয়ালা ঘটক সাহেবের কথা।

গ্রাম কিংবা শহরে পান বরাবরই শৌখিনতার পরিচয়। তবে বর্তমান প্রজন্মের অনেকের কাছে পান বিষয়টা কিছুটা অস্বাস্থ্যকর কিংবা সেকেলে মনে হলেও পানের কিন্তু রয়েছে বিশাল ফ্যানবেইজ। মিষ্টি পান, আগুন পান কিংবা বিয়ে বাড়িতে পানের যে বিশাল থালা, দেখলেই পানের জনপ্রিয়তা ও চাহিদা উপলব্ধি করা যায়।

নানান পদের খাবারের পাশাপাশি খাবার শেষে পানের উপস্থিতি না থাকলে যেন সে বিয়েভোজ সম্পূর্ণই হয় না। মহেশখালীর বড় বড় পানের সাথে থাকে কাঁচা আর শুকনা সুপারির ব্যবস্থা।

একপাশে কৌটায় থাকে চুন। আর পাশে সাজানো থাকে কালোজিরা, ধনিয়া, পাঁচ ফোড়ন, মৌরিসহ নানান পান মশলা। এছাড়াও সিলেট অঞ্চলের বিয়েতে ছেলেপক্ষের মেয়ের বাড়িতে মিষ্টির সাথে পান সুপারি আনা বাধ্যতামূলক।

পানের জনপ্রিয়তা বেড়েছে নতুন প্রজন্মের কাছেও। মিষ্টি পান তরুণ তরুণীদের মধ্যে এক আলাদা আকর্ষণ হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও আরও নানান ধরনের পানের চাহিদা রয়েছে তাদের মধ্যে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুরান ঢাকার নাজিরা বাজারে গড়ে ওঠেছে বাহারী সাজে সজ্জিত পানের দোকান। নাজিরা বাজারের অলিতে-গলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই দোকানগুলো।

এর মধ্যে জেরিন স্টোর, রাজা পান, আলী মিষ্টি পান বিতানসহ আরও অনেকগুলো দোকান উল্লেখযোগ্য। পুরান ঢাকায় খাওয়ার পরে পান খাওয়ার রীতি থেকেই মূলত নাজিরা বাজারে এতগুলো পানের দোকান খোলা। এমনটিই জানাচ্ছিলেন রাজু মিষ্টি পান দোকানের মালিক রাজু শেখ।

শুধু পুরান ঢাকা নয় মিরপুরসহ উত্তরা, কারওয়ান বাজার, মতিঝিল, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় এই বাহারী সাজের পানে দোকান চোখে পড়ে। এই পানের দোকানে পানের মধ্যেও থাকে নানান প্রকারভেদ।

শাহী পানে কী দেয়া হয় জানতে চাইলে মিরপুরের এক দোকানে বলেন, মহেশখালীর পানে প্রথমে সুপারি ও তিন রঙের নারিকেল দেয়া হয়। সবুজ, হলুজ, গোলাপি রঙের নারিকেলের গুড়া দেয়া হয়। তারপর এতে মোরব্বা, খোরমা, নারিকেলের চিড়া, পাঁচ মিশালি পান মশলা, নানান রঙের জেমসও ব্যবহার করা হয়।

শাহী পান আরও নানা ধরনের আকর্ষণীয় উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। এই পানে “গুলখান” নামের একটি আচারের মতো একটি উপাদান দেয়া হয় যেটি মূলত চেন্নাই থেকে আনা গোলাপ ফুলের পাপঁড়ি থেকে তিরি। এছাড়াও এই পানে কিসমিস, নানান প্রকারের বাদাম, ধনিয়া, শাহী জিরা, চেরি ফলও ব্যবহার করা হয়।

সব শেষে পানের উপর দেয়া হয় মধু ও চিনির সিরাপ। এসব উপাদান নিয়েই প্রস্তুত করা হয় শাহী পান। এক খিলি শাহী পান ৪০-৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় বলে জানান পুরান ঢাকার একজন পান বিক্রেতা। 

এত গেল শাহী পানের কথা। বর্তমানে আরও এক প্রকারের পানের চাহিদা ব্যাপক আকারে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। মেলায় গেলেই বিশেষ করে এই পান ও তাকে কেন্দ্র করে উৎসুক জনতার ভিড় চোখে পড়ে। এটি হচ্ছে আগুন পান।

উপরে বর্ণিত প্রায় সকল উপাদান দিয়ে সাথে পাঁচ ফোড়ন, শুকনা গাজর কুচি, সেমাই দিয়ে পানের ভিতরে একধরনের পুর তৈরি করা হয় এবং সব শেষে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আগুন জ্বলার সাথেই পানের খিলি বানিয়ে মুখে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এটি শখের বশে অনেকেই খেয়ে থাকেন।

নানান প্রকারের এসব পান শুধুমাত্র বয়স্ক মানুষেরাই খান এমন না। বর্তমানে তরুণ তরুণীরাও শখের বশে এই শাহী পান, মিষ্টি পান, আগুন পান খেয়ে থাকেন। এমনই একজনের সাথে কথা হয়। জেরিন স্টোর থেকে শাহী পান খেতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে মাসুদুল করিম জানান, প্রায় সময় ক্লাস শেষে তারা বিরিয়ানি খেতে নাজিরা বাজারে আসেন এবং বিরিয়ানি খাওয়ার পর তারা এই দোকানে শাহী পান খান। প্রতিদিনই নানান জায়গা থেকে এই নাজিরাবাজার এলাকায় মানুষ এই পানের দোকানগুলোতে ভিড় করেন এবং পুরান ঢাকার যে স্থানীয় বাসিন্দারা আছেন তারা এই পানের দোকানগুলোর স্থায়ী ক্রেতা বলা যায়।

নাওশিন মুশতারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। 

E-mail: nawshinmushtary38@gmail.com

Share this news