Bangla
6 months ago

ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

Published :

Updated :

সকল সেক্টরে ডিজিটাল পরিবর্তন খুব দ্রুতই ঘটছে এবং পরিবর্তন প্রযুক্তিগত অগ্রগতির একটি অনিবার্য পরিণতি। বাংলাদেশ যেমন এই ডিজিটাল বিপ্লবকে আলিঙ্গন করছে, সেই সাথে সাইবার নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান, আর্থিক খাত, সামরিক স্থাপনা, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জ্বালানি খাত সবকিছুই সাইবার হামলার নিরলস প্রচেষ্টার মুখোমুখি হচ্ছে। ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে হ্যাকাররা প্রায়ই বাংলাদেশকে টার্গেট করে। ব্যাংকিং শিল্প অত্যাধুনিক সাইবার আক্রমণের জন্য নিশ্চিতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। ইলেকট্রনিক লেনদেন, মোবাইল এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে নির্ভুল সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পটভূমিতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) সাম্প্রতিক নির্দেশনা অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে সাইবার নিরাপত্তা প্রোটোকলগুলোকে অবিলম্বে শক্তিশালী করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১৭-দফা নির্দেশিকা সাইবার হুমকির ক্রমবর্ধমান হারের বিরুদ্ধে ব্যাংকিং খাতের প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করার দিকে একটি সক্রিয় পদক্ষেপ তুলে ধরে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ সাইবার সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (বিসিএসআই) এর নিরীক্ষার পর সার্কুলার জারি করেছে, যা ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজারের মতো প্ল্যাটফর্মে ডুয়েল-কারেন্সি কার্ডের মাধ্যমে প্রতারণামূলক লেনদেনের মতো ঘটনা প্রকাশ করেছে, যা স্পষ্টতই নিরাপত্তার গুরুতর লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দেয়। এই ডিজিটাল দুর্বলতাগুলো শুধুমাত্র ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যই নয়, সেই সাথে গ্রাহকদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি তৈরি করে৷ অর্থের বাজারে ডিজিটাল চুরি এড়াতে, নিয়ন্ত্রক ১৭-দফা নির্দেশাবলি অবিলম্বে কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে, যার মধ্যে আছে বায়োমেট্রিক প্রমাণীকরণ, সিভিভি যাচাইকরণ এবং মাল্টি-ফ্যাক্টর প্রমাণীকরণ (এমএফএ)। ওয়ান-টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) সিস্টেমের সংযোজন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত জালিয়াতি সনাক্তকরণ সমাধান গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয়েছিল একটি নির্ভুল নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য। এই ব্যবস্থাগুলো শুধু লেনদেনের নিরাপত্তা জোরদার করবে না বরং ব্যাংকগুলোকে রিয়েল টাইমে অনিয়মিত লেনদেনের ধরণগুলো নিরীক্ষণ করতেও সক্ষম করবে৷

ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে, ব্যাংকগুলো তাদের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে হালনাগাদ করার জন্য বিনিয়োগ করে সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে সক্রিয়ভাবে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। ব্যাংক কর্মীদের জন্য ক্রমাগত সাইবার-নিরাপত্তা সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণের গুরুত্বকে বাড়ানো যায়। কর্মচারীরা সাইবার নিরাপত্তা লঙ্ঘন সনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধ করার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলে তারা সাইবার হুমকির বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইন প্রতিরক্ষা হিসাবে কাজ করতে পারে।

সাইবার অনুপ্রবেশের ফলে যে বিশাল ক্ষতি হতে পারে তার একটি স্পষ্ট দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে রয়েছে। ২০১৬ সালের হ্যাকিং ঘটনার সময় বাংলাদেশ তার রিজার্ভ থেকে আশ্চর্যজনকভাবে ৮০ মিলিয়ন ডলার হারিয়েছে। তারপরে, ২০১৯ সালে, ক্রেডিট কার্ড ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে তিনটি প্রাইভেট ব্যাংকের ক্যাশ মেশিন থেকে ৩ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছিল। এই ঘটনাগুলো স্পষ্টভাবেই কঠোর সাইবার নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। সাইবার নিরাপত্তার মান কার্যকর করা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক খাতের অখণ্ডতা রক্ষা করা এবং নাগরিকদের কষ্টার্জিত অর্থ নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে শুধু নির্দেশনাই যথেষ্ট নয়। এটি আগেও দেখা গেছে যে বেশিরভাগ ব্যাংক সাইবার নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না কারণ এটি একটি ব্যাপক খরচের ব্যাপার। তাই নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সামগ্রিকভাবে, এটি অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে সাইবার নিরাপত্তার ফাঁকগুলোকে বন্ধ করা আর ঐচ্ছিক বিষয় নয়, এটি একটি বাধ্যবাধকতা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং শিল্প স্টেকহোল্ডারদের অবশ্যই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুরক্ষিত করার জন্য একসাথে কাজ করতে হবে।

Share this news