Bangla
3 days ago

‘একসাথে গড়ি মাসিকবান্ধব পৃথিবী’ শ্লোগানে উদযাপিত মাসিক স্বাস্থ্য দিবস

ফাইল ছবি।
ফাইল ছবি।

Published :

Updated :

আজ বুধবার (২৮ মে ২০২৫) সকাল ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন মিলনায়তনে ‘মাসিক স্বাস্থ্যবিধি দিবস ২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত হয় প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য নিরাপদ ও সহজলভ্য স্যানিটারি পণ্য উদ্ভাবন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। “আসুন, সবাই একসাথে গড়ি মাসিকবান্ধব পৃথিবী” এই স্লোগানকে সামনে রেখে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সহায়তা করে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ, কিম্বারলি ক্লার্ক এবং এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম।

প্রতিযোগিতায় সেরা ৫টি দলকে নির্বাচন করা হয়। এর মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে সামিয়া কবির-এর দল ‘ইনোভএইড’ (সদস্যবৃন্দ: উম্মে সারওয়ার জাহান শাশা, জান্নাতুল ফেরদৌস মম, আফসারাহ ইসমাত ফাতিমা),  দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান লাভ করে যথাক্রমে সমর্পিতা সাহা ছোঁয়া-এর দল ‘শিমুভ’ (সদস্যবৃন্দ: মো. শাহিদ আহমেদ, সৃষ্টি হাজরা, মনিজা রহমান স্মরনিকা) ও কামরুন্নাহার রিতু-এর দল ‘পারি’ (পুষ্পিতা চৌধুরী, কাজী আরাফাত উল ইসলাম, ইবনিউ আহমেদ)। প্রতিযোগিতার বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন ৯ জন সম্মানিত ব্যক্তি, যাদের সবাইকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও উপহার প্রদান করা হয়। তিনজন জুরি তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করে জানান — এ ধরনের উদ্যোগ প্রতিবন্ধী নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বি-স্ক্যানের সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব। তিনি বলেন, “প্রতিবন্ধী নারীরা মাসিকের সময় যে বিশেষ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, সে বিষয়টি অনেকের জানা নেই। সেই জায়গা থেকেই মাসিকবান্ধব পণ্য উদ্ভাবনের এই প্রতিযোগিতার উদ্যোগ।"

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বি-স্ক্যানের পরিচালক ইফতেখার মাহমুদ। তিনি জানান, “২০১৬ সালে ওয়াটারএইডের সহায়তায় প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য প্রথম এমএইচএম দিবস উদযাপন করে বি-স্ক্যান। দীর্ঘ দশ বছর পর এই প্রতিযোগিতা আয়োজন মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় একটি বড় অগ্রগতি।”

এছাড়া বক্তব্য রাখেন ডা. মাহবুবুর রহমান, লিড ও প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর, এনভায়রনমেন্টাল হেলথ অ্যান্ড ওয়াশ, আইসিডিডিআরবি। তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যসম্মত মাসিক ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পিত কর্মসূচির পাশাপাশি প্রান্তিক নারীদের জন্য সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী পণ্য পৌঁছে দিতে হবে।”

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পার্থ হেফাজ সেখ, পরিচালক-প্রোগ্রামস অ্যান্ড পলিসি অ্যাডভোকেসি, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ, প্রতিযোগিতার উদ্ভাবিত পণ্যের পেটেন্ট নিশ্চিত করতে এবং প্রটোটাইপগুলোকে বাস্তবায়নে সীড মানি সংগ্রহসহ সহায়তার আশ্বাস দেন।

ডা. সোহেল হাবীব, লাইন ডিরেক্টর (এনসিআরএইচ), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, এই উদ্যোগকে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বলে উল্লেখ করে জানান, “প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পণ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে সারা দেশে বিতরণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।”

নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক নাঈমা হোসেন বলেন, “প্রতিটি উপজেলায় দুইজন নারী উদ্যোক্তাকে মাসিক বান্ধব পণ্য সরবরাহ কার্যক্রমে যুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হবে।”

সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান জানান, প্রয়োজনে প্রকল্প গ্রহণ করে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৬০ শতাংশ এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাইরে ৮০ শতাংশ অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বিজয়ীদের জন্য ভবিষ্যত সহায়তার আশ্বাসও দেন তিনি।

প্রতিযোগিতার সার্বিক পরিকল্পনা তুলে ধরেন মাহফুজুর রহমান রাকিভ, সহযোগী সমন্বয়কারী, বি-স্ক্যান এবং ইশারা ভাষায় দোভাষীর দায়িত্ব পালন করেন আরিফুল ইসলাম। তিনজন অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগী তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

ওয়াটারএইড বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ফাইয়াজউদ্দিন আহমদ অ্যাডভোকেট। তিনি বলেন, “বিজয়ীরা ওয়াটারএইড ও বি-স্ক্যানের সহায়তায় তাদের উদ্ভাবনী ধারণা বাস্তবায়নের সুযোগ পাবেন। এই উদ্যোগ প্রতিবন্ধী নারীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্তি ও উদ্ভাবনের এক অনন্য মাইলফলক।”

এদিকে একই দিনে বিডব্লিউএইচসি বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্যবিধি দিবস পালন করে। নারীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্কুল শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নিয়ে র‍্যালি, আলোচনা সভা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম আয়োজন করা হয়। বক্তারা বলেন, মাসিক নারীর জীবনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, এতে লজ্জা নয় বরং সচেতনতার প্রয়োজন। তাঁরা মাসিক চলাকালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং কাপড়ের পরিবর্তে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

প্রসঙ্গত, বিডব্লিউএইচসি পরীক্ষামূলকভাবে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের ১০টি স্কুলে ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন’, ‘ওয়েস্ট বিন’ এবং ‘প্রশ্নবাক্স’ স্থাপন করেছে। এর মাধ্যমে স্কুলছাত্রীদের মাঝে মাসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে।

এভাবেই মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্ভাবন এবং নারীর স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। 

Share this news