Bangla
3 months ago

গ্যাস অপচয় রোধে ৮১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করেছে তিতাস

Published :

Updated :

গ্যাস অপচয় হ্রাস করতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি প্রায় ৮১ হাজার ৬১০ কোটি টাকার একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রায় ২ হাজার ৭৮১ কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন স্থাপন এবং বিদ্যমান ৫,০০০ কিলোমিটার লাইনের আধুনিকায়ন করা হবে।

ব্রিকস জোটভুক্ত উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ৩৩ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা (প্রায় ২৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণ সহায়তা প্রদান করবে বলে পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে এনডিবি বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ প্যাকেজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এই প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ওই প্যাকেজের অধীনে দ্বিতীয় প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়িত হবে। এর আগে "এক্সপ্যান্ডেড ঢাকা সিটি ওয়াটার সাপ্লাই রেজিলিয়েন্স প্রকল্প"-এর জন্য ৩২০ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইআরডি-এর এক কর্মকর্তা।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ (ইএমআরডি) সম্প্রতি "ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গ্যাস নেটওয়ার্কের প্রতিস্থাপন ও উন্নয়নসহ জিআইএস ম্যাপিং ও এসকেডিএ সিস্টেম সংযুক্তকরণ" শীর্ষক প্রকল্পের একটি প্রস্তাবনা দাখিল করেছে।

প্রস্তাবিত অর্থায়ন কাঠামো অনুযায়ী, সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৯ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা দেবে, আর তিতাস নিজস্ব অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৮ হাজার ২১০ কোটি টাকা ব্যয় করবে।

পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও জ্বালানি বিভাগ আগামী সপ্তাহে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) একটি বৈঠকের আয়োজন করেছে, যেখানে এই প্রস্তাব পর্যালোচনা করা হবে।

এই বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুতকৃত কার্যপত্রে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ ক্ষমতা দৈনিক ২৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) থেকে ১ হাজার ৮ এমএমসিএফডি-তে উন্নীত হবে। এতে বিদ্যমান ও ভবিষ্যতের গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ করা যাবে এবং দীর্ঘদিন ধরে চলা স্বল্পচাপ সমস্যার সমাধান হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে বর্তমানে প্রতি বছর যে ২০ লক্ষ ৬০ হাজার টন কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গত হয়, তা কমে ৫ লক্ষ টনে নেমে আসবে। পাশাপাশি গ্যাস লিকেজের সংখ্যা প্রতি মাসে ৩৩৩ থেকে কমে ৬৬-তে নামানো যাবে।

এছাড়া, প্রকল্পের মাধ্যমে তিতাসের গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা হবে। এতে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জিআইএস ম্যাপিং এবং ১৮টি গ্যাস স্টেশনে এসকেডিএ সিস্টেম স্থাপন করা হবে।

ইএমআরডি দাবি করেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তিতাসের ৭৩.৩৩ শতাংশ গ্রাহক উপকৃত হবে।

এই প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ বছরে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে পরিকল্পনা কমিশন এতো দীর্ঘ প্রকল্প বাস্তবায়ন সময়সীমার যৌক্তিকতা জানতে চাইবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ তাদের সাম্প্রতিক নির্দেশনা অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্পের আদর্শ বাস্তবায়নকাল তিন বছর হওয়া উচিত।

পিইসি বৈঠকে প্রকল্পে সরকারের বড় অঙ্কের অংশগ্রহণ (৩৯ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা) কমাতে তিতাসের অংশ আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।

এছাড়াও, বৈঠকে তিতাস ইতিপূর্বে বিদেশি ঋণে পরিচালিত চলমান ও সমাপ্ত প্রকল্পগুলোর বর্তমান অবস্থা, ঋণের পরিমাণ, পরিশোধ ও বকেয়া সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হবে।

প্রকল্প নথিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে তিতাস ১৩,৪২১.৪৫ কিলোমিটার পাইপলাইন পরিচালনা করে এবং তাদের গ্রাহক সংখ্যা ২৮ লক্ষ ৮০ হাজারের বেশি।

ঢাকা শহরে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছিল ১৯৬৭ সালে ডেমরা সিটি গেট স্টেশন নির্মাণের মাধ্যমে। তৎকালীন গ্যাস বিতরণ লাইনগুলো প্রধানত ১৯৭০ ও ১৯৮০ সালের দশকে নির্মিত হয় এবং সেগুলোর ডিজাইন মেয়াদ ছিল ৩০ বছর।

কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহৃত হওয়ার ফলে এবং অন্যান্য সেবা সংস্থার ইউটিলিটি লাইন নির্মাণের কারণে এই পাইপলাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে ক্যাথোডিক সুরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং গ্যাস লিকেজের পরিমাণ বেড়েছে।

এই লিকেজগুলোর ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে এবং জননিরাপত্তা ও অবকাঠামোর জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে। 

Share this news